সীমান্তে লাউডস্পিকারে ‘ভূতের কান্না’ বাজিয়ে ভয় দেখাচ্ছে থাইল্যান্ড; জাতিসংঘে অভিযোগ কম্বোডিয়ার

যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পরও সীমান্ত উত্তেজনা যেন থামছেই না থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে। এবার থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিতর্কিত সীমান্তজুড়ে 'ভূতুড়ে আওয়াজ' বাজিয়ে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ চালানোর অভিযোগ এনেছে কম্বোডিয়া।
কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের অভিযোগ, এই ধরনের আওয়াজ সাধারণ মানুষের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে এবং তাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। গত জুলাইয়ে দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছালেও, নতুন এই অভিযোগ সীমান্ত পরিস্থিতিকে ফের জটিল করে তুলেছে।
কম্বোডিয়ার প্রভাবশালী সিনেট প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেন তার ফেসবুক পোস্টে জানান, কম্বোডিয়ার মানবাধিকার কমিশন 'তীব্র, উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দের' বিষয়ে জাতিসংঘের কাছে অভিযোগ করেছে।
হুন সেন গত ১১ অক্টোবর জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের কাছে লেখা একটি চিঠি শেয়ার করেন। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, থাই-কম্বোডিয়ান সীমান্তে 'মনস্তাত্ত্বিক ভীতি ও হয়রানির একটি রূপ হিসেবে উদ্বেগজনক শব্দ ব্যবহার করে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন' করা হচ্ছে।
কম্বোডিয়ার মানবাধিকার কমিশন জানিয়েছে, সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামগুলোর কর্তৃপক্ষ ও ক্ষতিগ্রস্ত বেসামরিক নাগরিকদের কাছ থেকে তারা বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন পেয়েছে। এতে বলা হয়েছে, থাই সামরিক ইউনিটগুলো লাউডস্পিকারের মাধ্যমে 'ভূতুড়ে কান্নার শব্দ' সম্প্রচার করছে। এরপর সারারাত ধরে বিমানের ইঞ্জিনের আওয়াজ শোনা যায়।
কমিশনের দাবি, দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই বিরক্তিকর অডিও 'ঘুম ব্যাহত করছে, উদ্বেগ বাড়াচ্ছে এবং শারীরিক অস্বস্তি সৃষ্টি করছে।' এমনকি এটি প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে 'উত্তেজনা আরও বাড়াতে' পারে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
হুন সেনের ছেলে হুন মানেত, যিনি ২০২৩ সালে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি বিবৃতিও পোস্ট করেছেন। বিবৃতিতে মালয়েশিয়ার কাছে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে, যারা জুলাইয়ের যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছিল।
এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ লড়াই বন্ধ করতে গত জুলাইয়ে মালয়েশিয়ায় আলোচনার পর থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া 'তাৎক্ষণিক ও নিঃশর্ত' যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল। এই সংঘাতে অন্তত ৩৮ জন নিহত এবং ৩ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।
কম্বোডিয়া থাই চলচ্চিত্র ও ফল আমদানি নিষিদ্ধ করা এবং একজন থাই বিক্ষোভকারীর হুন সেনের প্রতিকৃতিতে মাছের সস ছোঁড়ার মতো পাল্টাপাল্টি ঘটনার মাসখানেক পর এই সংঘাত শুরু হয়েছিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উভয় দেশের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে যুদ্ধ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত রাখার হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরই যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। এই মাসের শেষের দিকে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) সম্মেলনে ট্রাম্প কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক শান্তি চুক্তি তত্ত্বাবধান করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ভূতুড়ে কান্নার আওয়াজ সম্প্রচারের অভিযোগের মধ্যেই রয়টার্স জানিয়েছে, থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে সীমান্তে নতুন করে মাইন পাতার অভিযোগ করেছে। গত জুলাই থেকে অন্তত ছয়জন থাই সেনা ভূমি মাইন বিস্ফোরণে আহত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে এই সংঘর্ষ শুরু হয়।
তবে কম্বোডিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, থাই সেনারা তাদের দশকের পর দশক ধরে চলা গৃহযুদ্ধের সময় পাতা মাইনগুলোতে পা দিয়েছে। এই গৃহযুদ্ধের কারণে কম্বোডিয়া বিশ্বের অন্যতম মাইনপূর্ণ দেশে পরিণত হয়েছে।