স্কুলজুড়ে ‘৬-৭’ এর হুল্লোড়; কেন অর্থহীন মিমগুলোই বারবার জেন-আলফা শিশুদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে?
ডিকশনারি.কম প্রতি বছর এমন একটি শব্দকে বছরের 'সেরা শব্দ' হিসেবে ঘোষণা করে যা সামাজিক প্রবণতা ও বৈশ্বিক ঘটনার প্রতিফলন ঘটায়। ২০২৫ সালের জন্য এই সম্মান মিলেছে '৬৭' সংখ্যার। এটি এমন একটি জনপ্রিয় 'স্ল্যাং' যা শিশুদের মজা দেয় ঠিকই, কিন্তু শিক্ষকদের হতবুদ্ধি এবং বড়দের বিভ্রান্ত করে রেখেছে।
'৬-৯' সংখ্যাটির পর থেকে কোনো সংখ্যা যুগল এতটা হৈচৈ ফেলেছে বলে মনে পড়ে না। সম্প্রতি '৬-৭' (সিক্স-সেভেন) নামের একটি অর্থহীন শব্দবন্ধ সারা বিশ্বের স্কুল করিডোরগুলোতে এক নতুন প্রবণতা তৈরি করেছে।
জেন আলফা প্রজন্মের কাছে এটি এখন একটি জনপ্রিয় মন্ত্রে পরিণত হয়েছে। শিক্ষকরা হয়তো বইয়ের ৬৭ নম্বর পৃষ্ঠা খোলেন অথবা দুপুরের খাবারের আর ৬-৭ মিনিট বাকি, তখন বিনা কারণেই শিক্ষার্থীরা চিৎকার করে ওঠে '৬-৭!'
সিউক্স ফলস, সাউথ ডাকোটার সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান শিক্ষক গ্যাবে ড্যানেনব্রিং বলেন, 'এটা এক প্লেগের মতো; একটি ভাইরাস যা এই বাচ্চাদের মনকে গ্রাস করেছে। ৬-৭ সংখ্যাটি মুখে আনা মাত্রই অন্তত ১৫ জন বাচ্চা '৬-৭!' বলে চিৎকার করে ওঠে।
এটি এমন এক কৌতুক যার কোনো পাঞ্চলাইন বা নির্দিষ্ট অর্থ নেই। তবে, এটি ব্যবহার করলে শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে একটি বৃহত্তর, 'কুল' গোষ্ঠীর সদস্য মনে করে। ইউনিভার্সিটি অব সিনসিনাটির অধ্যাপক এবং নেতৃত্ব যোগাযোগ বিষয়ক শিক্ষক গেইল ফেয়ারহার্স্ট বলেন, 'এটি তাদের কাছে এক ভাষার খেলার মতো, যা মনে হয় কেবল তাদের দলের লোকেরাই খেলতে জানে।'
স্কিবিডি টয়লেট বা রিজের মতো অন্যান্য স্ল্যাং আসে আর যায়। '৬-৭'-ও সম্ভবত শীঘ্রই স্ল্যাংয়ের কবরস্থানে ঠাঁই পাবে, বিশেষ করে এখন যখন প্রাপ্তবয়স্করা এটি নিয়ে এত কথা বলছেন। তবে এর অসীম ব্যাখ্যা, এর সংজ্ঞায়িত না হওয়ার মধ্যে এক গভীরতাও রয়েছে।
'৬-৭' এর অর্থহীনতা সত্ত্বেও এর একটি নির্দিষ্ট উৎস রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ফিলাডেলফিয়ার র্যাপার স্ক্রিলার 'ডুট ডুট (৬ ৭)' নামের একটি ভাইরাল গানের কোরাসে এই সংখ্যাটি বারবার ব্যবহৃত হয়েছে। ভাষাবিদ টেলর জোনসের মতে, স্ক্রিলার গানে '৬-৭' সম্ভবত ১০-৬৭ পুলিশ কোডের একটি রেফারেন্স, যা প্রায়শই মৃত্যুর খবর জানাতে ব্যবহৃত হয়। তবে, স্ক্রিলা নিজে এর কোনো নির্দিষ্ট অর্থ দিতে চাননি।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে, যখন 'ডুট ডুট' গানটি জনপ্রিয়তা পাচ্ছিল, সে সময় হাইস্কুল বাস্কেটবল তারকা টেইলান কিনি এই শব্দবন্ধের সাথে একটি অঙ্গভঙ্গি তৈরি করেন। একটি ভিডিওতে তাকে স্টারবাক্সের পানীয়কে ১০-এর মধ্যে রেটিং দিতে গিয়ে "৬…৬…৬-৭' বলতে এবং দুটি বিকল্পের মধ্যে দোদুল্যমানতার ইঙ্গিত দিতে দেখা যায়।
টেইলান পরবর্তীতে তার টিকটক ভিডিওগুলোতে এই গান ও অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করতে শুরু করেন, যেখানে তার এক মিলিয়নেরও বেশি ফলোয়ার রয়েছে। শার্লট হর্নেটসের পয়েন্ট গার্ড লামেলো বলের মতো ক্রীড়াবিদদের হাইলাইট রিলেও এই গানটি ব্যবহৃত হয়েছে, কারণ তার উচ্চতা ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি।
মার্চ মাসে '৬-৭' এর একটি পরিচিত মুখ সামনে আসে, যখন একটি অপেশাদার বাস্কেটবল খেলায় এক তরুণ দর্শককে অতি-উত্তেজিত হয়ে '৬-৭!' চিৎকার করতে এবং তার সাথে হাত দিয়ে অঙ্গভঙ্গি করতে দেখা যায়।কোনোভাবে ইন্টারনেট সিদ্ধান্ত নেয় যে এই স্টেরিওটাইপের নাম 'মেসন' এবং এভাবেই 'মেসন ৬৭' আরেকটি 'ইনসাইড জোক' হয়ে ওঠে। (এই 'মেসন' চরিত্রটি এরপর অনলাইন অ্যানালগ হররের এক আইকনে পরিণত হয়েছে, 'নো ইওর মেম' অনুসারে, কিন্তু সেটা অন্য গল্প।)
সুতরাং, যদি কোনো বাচ্চা আপনাকে '৬-৭' কী তা জিজ্ঞেস করলে উপরের কোনো একটি ব্যাখ্যা দেয়, তবে সে সম্ভবত সঠিক। তবে বেশিরভাগ বাচ্চাই এর উৎস জানে না, ড্যানেনব্রিং বলেন। তিনি বলেন, "কেউ জানে না এর অর্থ কী। আর এটাই এর মজার দিক।"
এর অর্থহীনতার একটি কারণ হলো জোনস যাকে 'সিমেন্টিক ব্লিচিং' বলেন, যেখানে একটি শব্দবন্ধ তার মূল প্রেক্ষাপট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু অর্থ দেয় (বা এক্ষেত্রে, কিছুই না)।
জোনস বলেন, '৬-৭' অর্থহীন হলেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক কাজ করে। এটি একটি 'শিবোলেথ', অর্থাৎ এমন একটি শব্দবন্ধ যা একটি 'ইন' গ্রুপের সদস্যদের চিহ্নিত করে। যারা এটি বলে না বা বোঝে না, তারা যেন দল থেকে বাইরে।
ফেয়ারহার্স্ট যোগ করেন, 'ভাষা মানুষের জন্য একটি সম্প্রদায় গঠনের উপায়। এমনকি যদি এটি একটি অর্থহীন শব্দও হয়, যদি তারা মনে করে যে এর অর্থ তারা বোঝে, তবে তা একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তি হতে পারে। আর যদি কেউ এই শব্দটি বুঝতে না পারে, তবে এটি সেই সম্প্রদায় থেকে মানুষকে বাদও দিতে পারে।'
অন্যান্য ইন্টারনেটভিত্তিক অর্থহীন শব্দ, এমনকি বিরক্তিকর 'স্কিবিডি'র চেয়েও '৬-৭' এর স্থায়িত্ব বেশি হওয়ার কারণ সম্ভবত "বড়রা এটি নিয়ে খুব বেশি ক্ষুব্ধ," জোনস বলেন। 'সম্পূর্ণ অর্থহীন কিছুর জন্য আপনি যদি কারো কাছ থেকে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া পেতে পারেন, তবে তা এর দীর্ঘস্থায়িত্ব বাড়িয়ে তুলতে পারে,' জোনস মন্তব্য করেন।
শিক্ষকরাও এতে ত্যক্ত-বিরক্ত। তারা শ্রেণিকক্ষে এটি নিষিদ্ধ করছেন বা টিকটকে হতাশ হয়ে ভিডিও তৈরি করছেন যে তারা একটি একক স্কুল দিনে কতবার এটি শুনেছেন (ড্যানেনব্রিংয়ের রেকর্ড ৭৫ বার)। নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও '৬-৭!' বলে চিৎকার করা 'প্রতিরোধ দেখানোর একটি উপায়' হয়ে উঠেছে, ফেয়ারহার্স্ট বলেন।
কিছু শিক্ষক অবশ্য ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। মিশিগানের এক হাই স্কুলের কোয়ার শিক্ষক তার ওয়ার্মআপ গানে '৬-৭' কে অন্তর্ভুক্ত করে সফলভাবে শিক্ষার্থীদের চিৎকার থামিয়েছেন। ড্যানেনব্রিং নিজে যখন শিক্ষার্থীদের বইয়ের ৬৭ নম্বর পৃষ্ঠা খুলতে বলেন, তখন তিনি শিক্ষার্থীদের মতোই উৎসাহী স্বরে কথা বলেন, যা তাদের কাছে মজার মনে হয়।
অভিভাবকদের এতে অবশ্য দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই—অবিরাম '৬-৭!' চিৎকার করা মানেই যে শিশুদের 'মেধা ক্ষয়' বা 'ব্রেনরট' হচ্ছে, এমনটা নয়। সাক্ষরতা হ্রাস এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার দক্ষতা কমার উদ্বেগগুলো বৈধ হলেও, জোনস মনে করেন, এ ধরনের আচরণকে 'সাধারণ, তারুণ্যের আচরণের উপর চাপানো হচ্ছে'।
জোনস বলেন, প্রতিটি প্রজন্মই তাদের নিজস্ব স্ল্যাং তৈরি করে, এবং ভাষা এমনভাবে বিকশিত হয় যা আমরা বেশিরভাগই সচেতনভাবে উপলব্ধি করতে পারি না। শিশুদের মধ্যে নতুন নতুন মজার শব্দবন্ধের (যেমন একসময় 'কুল' ছিল!) আবির্ভাব চিরকাল থাকবে, আর প্রাপ্তবয়স্করা সবসময়ই তা নিয়ে বিভ্রান্ত থাকবে।
ফেয়ারহার্স্ট যোগ করেন, এই ধরনের অর্থহীন শব্দবন্ধগুলো সহজাতভাবে ক্ষতিকর নয়, এবং '৬-৭' নিশ্চিতভাবে ইংরেজি ভাষার সমাপ্তি ঘটাবে না। তবে, এর জনপ্রিয়তা আমাদের 'পোস্ট-ট্রুথ' সমাজের একটি নিরীহ লক্ষণ হতে পারে, যেখানে যোগাযোগের অর্থ এবং নির্দিষ্টতার চেয়ে মানুষের ব্যাখ্যাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কমেডিয়ান ফিলিপ লিন্ডসে জানান, তিনি ইতিমধ্যেই তার ক্লাসে এর সম্ভাব্য বিকল্প শুনছেন—যেমন '৪১', আরেকটি একইভাবে অর্থহীন সংখ্যা যা শিশুদেরকে অকারণে খিলখিল করে হাসায়। লিন্ডসে বলেন, '৪১' শুরু হয়েছিল '৬-৭' কে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা হিসেবে। '৬-৭' এমনিতেই চলে এসেছিল। '৪১' কে ধাক্কা দিয়ে আনা হয়েছে।'
তবে ড্যানেনব্রিংয়ের মতে, স্ল্যাং '৬-৭' এর চেয়েও খারাপ হতে পারে। অতীতের প্রবণতাগুলো শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে দেওয়া ল্যাপটপে পেন্সিল ঢুকিয়ে আগুন ধরিয়ে দিতে বা স্কুলের টয়লেটের দেওয়াল থেকে সিঙ্ক উপড়ে ফেলতে অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি বলেন, 'স্কিবিডি টয়লেটের মতো এমন শব্দ আগেও আমরা দেখেছি। এটি উল্লেখযোগ্যভাবে কম বিরক্তিকর।'
