এআই দিয়ে জালিয়াতি: চীনে ‘পেপার মিল’ থেকে গণহারে তৈরি হচ্ছে ভুয়া গবেষণাপত্র

চীনের 'পেপার মিল' গুলো জেনারেটিভ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে গণহারে ভুয়া একাডেমিক গবেষণাপত্র তৈরি করছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমের এক নতুন তদন্তে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
রবিবার চায়না সেন্ট্রাল টেলিভিশনের (সিসিটিভি) একটি অনুষ্ঠানে প্রচারিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এসব পেপার মিলের কর্মীরা জেনারেটিভ এআই চ্যাটবট ব্যবহার করে প্রত্যেকে সপ্তাহে ৩০টিরও বেশি একাডেমিক আর্টিকেল তৈরি করছে।
চীনে শিক্ষাজগতে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। এখানে শিক্ষার্থী এবং গবেষকদের ওপর নির্দিষ্ট সংখ্যক গবেষণাপত্র প্রকাশের জন্য কঠোর চাপ থাকে। এই সুযোগেই 'পেপার মিল' গুলো লেখক হিসেবে নাম বিক্রি করা বা পুরোপুরি ভুয়া গবেষণাপত্র তৈরি করে ব্যবসা জমিয়েছে।
সিসিটিভির প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেশ কিছু পেপার মিল ই-কমার্স এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তাদের 'ওয়ান-স্টপ-শপ' গোস্টরাইটিং বা ভাড়ায় লেখার পরিষেবা বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। এমনকি শীর্ষস্থানীয় একাডেমিক জার্নালে গবেষণাপত্র জমা দেওয়ার নিশ্চয়তাও দিচ্ছে তারা।
প্ল্যাটফর্মগুলো 'একাডেমিক গোস্টরাইটার'-এর মতো শব্দ ব্লক করে দেওয়ায়, পেপার মিলগুলো তাদের পরিষেবাকে 'একাডেমিক সাপোর্ট' বা 'এডিটিং' হিসেবে বর্ণনা করে। মজার ব্যাপার হলো, কেউ কেউ নিজেদেরকে 'এআই ডিটেক্টর'—অর্থাৎ এআই-জেনারেটেড কন্টেন্ট শনাক্ত করার টুল হিসেবেও পরিচয় দেয়।

সহজলভ্য এবং সস্তা জেনারেটিভ এআই টুলগুলোর কারণে, যে পেপার মিলগুলো আগে মানুষের শ্রমের ওপর নির্ভরশীল ছিল, তারা এখন উৎপাদন বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সিসিটিভির তথ্য অনুযায়ী, উহান-ভিত্তিক একটি সংস্থা বছরে ৪০,০০০-এরও বেশি অর্ডার পায়, যেখানে প্রতিটি গবেষণাপত্রের জন্য কয়েকশ থেকে কয়েক হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত নেওয়া হয়।
সংস্থাটি বিজ্ঞাপন দেয় যে, তাদের গবেষণাপত্রগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা লিখেছেন। কিন্তু সিসিটিভির তদন্তে দেখা যায়, এগুলো আসলে অযোগ্য কর্মীরা বিভিন্ন এআই টুল ব্যবহার করে তৈরি করছে।
আগে যেখানে কর্মীরা শুধুমাত্র তাদের নিজেদের দক্ষতার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল, এখন এআই টুলগুলো তাদের বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণাপত্র জাল করার সুযোগ করে দিয়েছে। উহান-ভিত্তিক আরেকটি সংস্থা তো নতুন চাকরিপ্রার্থীদের উৎসাহিত করছে, মানবিক বিভাগের পটভূমি থেকেও বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিতের মতো বিষয়ে গবেষণাপত্র জাল করতে, কারণ এগুলোতে বেশি টাকা পাওয়া যায়।
'দ্য বেইজিং নিউজ'-এ বলা হয়েছে, এআই-এর কারণে চীনের পেপার মিলগুলো আরও দক্ষ হয়ে উঠেছে এবং উচ্চমানের গবেষণাপত্র তৈরি করছে, যার ফলে তাদের ধরা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

এতে আরও বলা হয়, "বিভিন্ন এআই টুল একসাথে কাজ করে; কিছু চিন্তা করার জন্য, কিছু তথ্য খোঁজার জন্য এবং অন্যগুলো লেখা সম্পাদনা করার জন্য... এটি পেপার মিল জালিয়াতির মাত্রা এবং শিল্পায়নকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।"
এর আগে জানুয়ারিতে, সুপ্রিম পিপলস কোর্ট দেশের পেপার মিলগুলোর জন্য 'কঠোর শাস্তির' আহ্বান জানিয়েছিল।
আগস্ট মাসে প্রকাশিত একটি যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, চীনে গবেষণার নৈতিকতা বিষয়ে প্রশিক্ষণের 'সীমিত সুযোগ' থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সহজেই পেপার মিলের খপ্পরে পড়ে।
গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, পেপার মিলগুলো ছবি জালিয়াতিও করছে। পরীক্ষামূলক ডেটা জাল করার জন্য ইমেজ জেনারেশন এআই মডেলগুলোর ব্যবহার নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে উদ্বেগ বাড়ছে, এটি তারই প্রতিধ্বনি।