‘আমরা প্রস্তুত’: গাজা পুনর্গঠনে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রস্তাব জানালেন আমিরাতের ধনকুবেরের

সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ধনকুবের এবং আল হাবতুর গ্রুপের চেয়ারম্যান খালাফ আহমাদ আল হাবতুর, গাজা পুনর্গঠনের একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন।
ইসরায়েলের দুই বছরব্যাপী অভিযানে ভূখণ্ডটি এখন প্রায় ধ্বংসস্তুপ এবং শান্তির সময়ে পুরো শহরকেই নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। এই লক্ষ্যেই আল হাবতুর একটি পুনর্গঠন পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছেন। ট্রাম্প মিশরে পৌঁছানোর পরই তিনি প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ্য করে খোলা চিঠিটি প্রকাশ করেন। এখানে তিনি দেখিয়েছেন যে গাজার ভবিষ্যতে আল হাবতুর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
'বাস্তব, দৃশ্যমান এবং পরিমাপযোগ্য'
১৯৭০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে জন্ম নেওয়া আল হাবতুর গ্রুপ এখন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
চিঠির সাথে পাঠানো এক বার্তায় চেয়ারম্যান বলেন, শান্তি চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রমাণ করেছেন যে তিনি "শান্তিকে একটি কৌশলগত পছন্দ হিসেবে বিশ্বাস করেন" এবং গাজাকে যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে জেগে ওঠার সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, তার এই চিঠিটি ট্রাম্পের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা এবং এই ভূখণ্ড পুনর্গঠনের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতকে সেরা পছন্দ হিসেবে তুলে ধরে।
তিনি বলেন, "গাজার আজ যা প্রয়োজন তা হলো একটি জীবনমুখী প্রকল্প, কোনো স্লোগান নয়; বক্তৃতা নয়, কাজ করার ইচ্ছা প্রয়োজন। আমরা বিশ্বাস করি, নির্মাণই শান্তির সবচেয়ে মহৎ রূপ।"
মার্কিন প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ্য করে লেখা চিঠিতে আল হাবতুর বলেন, "আমরা বুঝতে পারছি যে আপনি ট্রানজিশনাল গাজা কর্তৃপক্ষের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রার্থী খুঁজছেন, যা শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর গাজার পুনর্গঠন ও উন্নয়নের তত্ত্বাবধান করবে।"
"আমাকে দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে বলতে দিন যে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোই এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নেওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি সক্ষম। আমাদের সাফল্য কোনো তাত্ত্বিক বিষয় নয়; এটি বাস্তব, দৃশ্যমান এবং পরিমাপযোগ্য।"
পুনর্গঠন পরিকল্পনা
আল হাবতুর বলেন, গাজা পুনর্গঠনে কয়েক দশক সময় লাগার কোনো প্রয়োজন নেই, বরং আরব এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এটি আরও কম সময়ে সম্ভব। তিনি একটি ব্যাপক পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছেন, যা শুধুমাত্র অস্থায়ী সাহায্য নয়, বরং একটি স্থায়ী পুনর্গঠনের রূপরেখা দেয়। এই পরিকল্পনাটির তিনটি ধাপ রয়েছে:
ধাপ ১: আবাসন নির্মাণ
চিঠিতে বর্ণিত প্রথম ধাপটি হলো একটি প্রকৌশলগত কাঠামো, যার প্রথম অংশ ধ্বংসস্তূপ অপসারণ এবং বিধ্বস্ত এলাকা পরিষ্কার করে নতুন নির্মাণের জন্য জায়গা তৈরি করা। এই সময়ে, গাজার বাসিন্দাদের জন্য অস্থায়ী আবাসন সরবরাহ করা হবে। এই ধাপের মধ্যে "বিদ্যুৎ, জল, পয়ঃনিষ্কাশন এবং অস্থায়ী চিকিৎসা সেবা" অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এরপর রাস্তা ও ভবন নির্মাণের জন্য মূল অবকাঠামো প্রকল্প শুরু হবে। আবাসন ইউনিটগুলোর পরিকল্পনাটি নিম্নরূপ:
পর্যায় এক (০-১৫ মাস): ৫,০০০টি ভবনে ৫০,০০০ আবাসন ইউনিট।
পর্যায় দুই (পরবর্তী ৬ মাস): আরও ৫০,০০০ ইউনিট।
পর্যায় তিন: আরও ৫০,০০০ ইউনিট।
এর মানে হলো, এই পরিকল্পনা সম্পন্ন হলে তিন বছরের মধ্যে গাজায় ১,৫০,০০০ আবাসন ইউনিট তৈরি হবে।
ধাপ ২: গাজাবাসীর জন্য কর্মসংস্থান
দ্বিতীয় ধাপটি অর্থনৈতিক কৌশলের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এবং এতে "শিল্পাঞ্চল এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার একটি পরিকল্পনা" অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর লক্ষ্য হলো "লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান" তৈরি করা।
ধাপ ৩: 'রাজনৈতিক কারসাজিমুক্ত' ব্যবস্থাপনা
তৃতীয় এবং চূড়ান্ত ধাপটি হলো একটি ব্যবস্থাপনা কাঠামো, যা নিশ্চিত করবে যে গাজার জনগণ "রাজনৈতিক কারসাজি বা দুর্নীতি" ছাড়াই সঠিক উপায়ে সম্পদ পাবে, যাতে পুনর্গঠন কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থে নয়, বরং সাধারণ মানুষের উপকারে আসে।
আল হাবতুর তার চিঠিটি দৃঢ় ইচ্ছা এবং প্রস্তুতির এক আবেগঘন বিবৃতি দিয়ে শেষ করেন।
তিনি বলেন, "আল হাবতুর গ্রুপে আমরা প্রস্তুত। আমাদের রূপান্তর, দক্ষতা এবং সংকল্পের যে রেকর্ড রয়েছে, তা অতুলনীয়। আমরা দ্রুততা, মর্যাদা এবং দূরদৃষ্টির সাথে গাজাকে পুনর্গঠন করতে পারি। একটি পুনর্গঠিত গাজা আগামী প্রজন্মের জন্য স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির একটি মডেল হয়ে উঠতে পারে।"