চীনা মালিকানাধীন চিপ কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ নিল নেদারল্যান্ডস সরকার

গাড়ি ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যের জন্য ইউরোপে সেমিকন্ডাক্টরের সরবরাহ নিশ্চিত করা ও ইউরোপের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রক্ষার্থে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক চীনা মালিকানাধীন চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নেক্সপেরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ডাচ সরকার।
নেদারল্যান্ডস জানিয়েছে, 'গুরুতর পরিচালনগত ত্রুটি' এবং জরুরি পরিস্থিতিতে চিপের সংকট এড়ানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সোমবার নেক্সপেরিয়ার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান উইংটেক বলেছে, তারা নিজেদের অধিকার রক্ষায় পদক্ষেপ নেবে এবং সরকারি সহায়তা চাইবে।
এই ঘটনা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। বাণিজ্য ও রাশিয়ার সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্কের কারণে গত কয়েক মাসে দুই পক্ষের মধ্যে এমনিতেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র সরকার উইংটেককে তাদের 'এনটিটি লিস্ট' বা নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। এই তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হয়।
এই নিয়মের অধীনে, বিশেষ অনুমোদন ছাড়া মার্কিন কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি কোনো পণ্য রপ্তানি করতে পারে না।
এর আগে যুক্তরাজ্যেও নেক্সপেরিয়াকে নিউপোর্টে অবস্থিত তাদের সিলিকন চিপ কারখানাটি বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়। দেশটির এমপি ও মন্ত্রীরা জাতীয় নিরাপত্তার উদ্বেগ প্রকাশ করার পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
ডাচ অর্থনীতি মন্ত্রণালয় বলেছে, নেক্সপেরিয়ার অভ্যন্তরে 'গুরুতর পরিচালনগত ত্রুটির তীব্র আভাস' পাওয়ায় তারা পণ্য প্রাপ্যতা আইন প্রয়োগের মতো 'অত্যন্ত ব্যতিক্রমী' সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, 'এই আভাসগুলো ডাচ ও ইউরোপীয় ভূখণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং সক্ষমতার ধারাবাহিকতা ও সুরক্ষার জন্য হুমকি তৈরি করেছিল।'
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'এই সক্ষমতাগুলো হারালে তা ডাচ ও ইউরোপীয় অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারত।'
তবে ঠিক কী কারণে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়েছে, সে বিষয়ে বিবৃতিতে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রীর একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, এই মুহূর্তে এর চেয়ে বেশি তথ্য দেওয়ার সুযোগ নেই।
ইইউ-চীন সম্পর্কবিষয়ক গবেষক সাশা কুরশিয়াল বলেন, এই পদক্ষেপগুলোর উদ্দেশ্য হলো ইউরোপে চিপের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা এবং ডাচ মেধাস্বত্ব রক্ষা করা।
তিনি আরও বলেন, সংকটজনক পরিস্থিতিতে বেইজিংয়ের চাপে চীনা মালিকানাধীন কোনো কোম্পানি ইউরোপে সরবরাহ বন্ধ করে দিতে বা চীনে বিক্রিকে অগ্রাধিকার দিতে পারে। এর ফলে গাড়ি নির্মাতা ও ইলেকট্রনিকস উৎপাদনকারীদের মতো ইউরোপীয় শিল্পগুলো অচল হয়ে পড়তে পারে।
কুরশিয়াল মনে করেন, হেগের এই পদক্ষেপ 'মুক্তবাজার অর্থনীতির বিনিয়োগ নীতির' চেয়ে অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে বড় করে দেখেছে, যা অন্য দেশের সরকারগুলোকেও একই পথ অনুসরণে উৎসাহিত করতে পারে।
মঙ্গলবার চায়না সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, ডাচ সরকারের নেক্সপেরিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘটনায় তারা 'গভীরভাবে উদ্বিগ্ন'। সংস্থাটি এই পদক্ষেপকে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশি শাখার বিরুদ্ধে 'উদ্দেশ্যমূলক ও বৈষম্যমূলক' বলে আখ্যা দিয়ে বলেছে, এটি মুক্ত বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
এদিকে ডাচ সরকার জানিয়েছে, কোম্পানিটির উৎপাদন স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকবে।
মান্দারিন ভাষায় দেওয়া এক বিবৃতিতে উইংটেক জানিয়েছে, তাদের কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে চলছে এবং তারা তাদের সরবরাহকারী ও গ্রাহকদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছে। প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, সম্ভাব্য আইনি প্রতিকার নিয়ে তারা আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করছে।