যুদ্ধবিরতির পরদিন লন্ডনে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে হাজারো মানুষের সমাবেশ; সংঘর্ষে গ্রেপ্তার ১৪

গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার একদিন পরই লন্ডনের রাজপথে নেমে আসে ফিলিস্তিনপন্থী হাজার হাজার বিক্ষোভকারী।
গত শনিবার বিকেলে ভিক্টোরিয়া এমব্যাঙ্কমেন্ট থেকে শুরু হওয়া এই বিশাল সমাবেশ আয়োজন করে ফিলিস্তিন কোয়ালিশন। পরে বিক্ষোভকারীরা হোয়াইটহলের দিকে এগিয়ে যান, যেখানে একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
ওয়েস্টমিনস্টার ব্রিজের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনি পতাকার এক সমুদ্রের ছবি উঠে এসেছে গণমাধ্যমে। এই বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারীর বিপরীতে, স্বল্পসংখ্যক ইসরায়েলপন্থী বিক্ষোভকারীও কাছাকাছি জড়ো হয়েছিলেন। তাদের হাতে দেখা যায় ইসরায়েলি পতাকা এবং জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে প্ল্যাকার্ড।
লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, জনশৃঙ্খলা আইন লঙ্ঘনের শর্ত ভঙ্গ, মারামারি এবং একটি 'নিষিদ্ধ গোষ্ঠীকে' সমর্থন করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে মোট ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ আরও জানায়, ফিলিস্তিন কোয়ালিশনের প্রতিবাদ সমাবেশের নির্ধারিত স্থানে ইসরায়েলপন্থী ছোট একটি দল শর্ত ভেঙে বিক্ষোভ শুরু করলে মিছিলের সদস্যদের সঙ্গে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে 'কর্মকর্তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে জড়িতদের আলাদা করেন,' বলে জানায় পুলিশ।
বিক্ষোভের শুরুতেই স্টলগুলোতে ফিলিস্তিনি কেফিয়াহ স্কার্ফ বিক্রি হতে দেখা যায় এবং বিক্ষোভকারীদের হাতে বিলি করা হয় প্ল্যাকার্ড। মিছিলে 'ইসরায়েলকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ করো' এবং 'ফিলিস্তিন মুক্ত করো' স্লোগান শোনা গেছে।
এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া অন্যতম সংগঠন, ফিলিস্তিন সলিডারিটি ক্যাম্পেইনের পরিচালক বেন জামাল বলেন, তারা ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করা 'কখনোই বন্ধ করবেন না'।
তিনি ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি ভাঙার সক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, চলমান যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা সংঘাতের 'মূল কারণগুলো মোকাবিলায় কিছুই করেনি'।
জনসভায় বক্তারা মার্কিন মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতিকে একটি ইতিবাচক কিন্তু 'অস্থির' অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করেন। তারা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, ফিলিস্তিনিরা সম্পূর্ণরূপে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের প্রতিবাদ চলবে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি সরকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি ফেরতের প্রথম ধাপের চুক্তি অনুমোদন করার পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
তবে গাজার শাসন ব্যবস্থা, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং হামাসের নিরস্ত্রীকরণের মতো স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নিয়ে পরবর্তী ধাপের আলোচনা এখনও চলছে এবং সেখানে ঐকমত্যে পৌঁছানো কঠিন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই বিক্ষোভ এমন এক সময়ে হলো যখন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী প্রতিবাদ আইন আরও কঠোর করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এমনকি ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভের কিছু স্লোগানকেও লক্ষ্যবস্তু করা হতে পারে বলে তিনি জানান।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারও এক সপ্তাহ আগে ঘোষিত ব্যবস্থার চেয়ে 'আরও এগিয়ে যেতে' চান, যাতে পুলিশ বারবার হওয়া বিক্ষোভ দমনে আরও ব্যাপক ক্ষমতা পায়।
গত সপ্তাহে ম্যানচেস্টারের একটি সিনাগগে সন্ত্রাসী হামলায় দুজন ইহুদি নিহত হওয়ার পর তিনি ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের 'ব্রিটিশ ইহুদিদের শোককে সম্মান জানানোর' অনুরোধ করে সমাবেশ স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
তবে, ফিলিস্তিন অ্যাকশন গোষ্ঠীর সমর্থনে গত সপ্তাহেও লন্ডনে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রায় ৫০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৪৮৮ জনই একটি 'নিষিদ্ধ সংগঠনকে' সমর্থন করার অভিযোগে অভিযুক্ত।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালে ৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় ১৮ হাজারেরও বেশি শিশুসহ ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।