শান্তিতে নোবেলজয়ী কে এই মারিয়া কোরিনা মাচাদো

ভেনিজুয়েলার বিরোধী রাজনৈতিক নেতা মারিয়া করিনা মাচাদো ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। দেশটিতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে নিরলস সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে এই পুরস্কারে ভূষিত করেছে নরওয়ের নোবেল কমিটি।
কমিটি এক বিবৃতিতে জানায়, ভেনিজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় মাচাদোর নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা এবং একনায়কতন্ত্র থেকে ন্যায়সঙ্গত ও শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রূপান্তর নিশ্চিত করার সংগ্রামের জন্য তাকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।
৫৮ বছর বয়সী মাচাদো বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে তার সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডমান্ডো গঞ্জালেস উরুতিয়া প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর কাছে পরাজিত হন। নির্বাচনটি ব্যাপকভাবে 'কারচুপিপূর্ণ' বলে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচিত হয়েছিল।
মাচাদো ভেনিজুয়েলার প্রভাবশালী একটি ইস্পাত শিল্প পরিবারের জ্যেষ্ঠ কন্যা। তিনি কারাকাসের একটি নামকরা ক্যাথলিক বালিকা স্কুল এবং যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের ওয়েলেসলি বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা করেন। প্রকৌশল ও অর্থনীতিতে ডিগ্রি অর্জনের পর পারিবারিক কোম্পানি সিভেনসায় (Sivensa) কাজ করেন তিনি।
১৯৯২ সালে তিনি আতেনেয়া ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এটি কারাকাসের দরিদ্র শিশুদের সহায়তা প্রদান করে। এক দশক পর তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং গড়ে তোলেন 'সুমাতে' (Súmate) নামের একটি ভোটাধিকার সংগঠন। এটি প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজের বিরুদ্ধে গণভোট আয়োজনের একটি উদ্যোগ নিলেও তা ব্যর্থ হয়েছিল।

২০১০ সালে মাচাদো জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং সর্বাধিক ভোট পেয়ে রেকর্ড গড়েন। তিনি বর্তমানে বিরোধী দল 'ভেনতে ভেনিজুয়েলা'র নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০২৩ সালে তিনি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেন।
তবে জাতীয় সংসদ সদস্য থাকার সময় আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে তাকে প্রার্থীতা থেকে বাদ দেয় সরকার। পরবর্তীতে তিনি অ্যাডমান্ডো গঞ্জালেস উরুতিয়াকে সমর্থন জানান। উরুতিয়া ২০১৩ সাল থেকে ক্ষমতাসীন মাদুরোর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিরোধীরা দাবি করে, প্রকৃতপক্ষে গঞ্জালেসই জয়ী হয়েছেন এবং তারা এ–সংক্রান্ত প্রমাণ সংগ্রহ করেছে।
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ইয়র্গেন ওয়াটনে ফ্রিডনেস পুরস্কার ঘোষণার পর সাংবাদিকদের বলেন, 'প্রতিবছর আমরা বিজয়ীর নিরাপত্তাজনিত বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখি, বিশেষ করে যখন তিনি জীবন–সংকটের কারণে আত্মগোপনে থাকেন।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি, এই পুরস্কার মাচাদোর সংগ্রামকে আরও শক্তিশালী করবে।'
ফ্রিডনেস আশা প্রকাশ করেন, নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে মাচাদো ডিসেম্বর মাসে নোবেল পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারবেন।