মিউনিখ বিমানবন্দরের আকাশসীমায় ‘অজানা ড্রোন’ শনাক্ত, দুই দিনে দুইবার ফ্লাইট চলাচল বন্ধ

মিউনিখ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুই দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো বিমানবন্দরের আকাশসীমায় ড্রোন দেখা যাওয়ায় শুক্রবার সন্ধ্যায় উভয় রানওয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে।
বিমানবন্দরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'জার্মান এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মিউনিখ বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনা সীমিত করেছে। অজানা ড্রোন দেখা যাওয়ায় ফ্লাইট পরিচালনা স্থগিত করা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এটি কার্যকর থাকবে।'
গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পরও বিমানবন্দর কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়েছিল। এর ফলে ১৭টি ফ্লাইট বাতিল হয় এবং প্রায় ৩,০০০ যাত্রী প্রভাবিত হন।
সেই সঙ্গে ১৫টি আগমনি ফ্লাইটের গন্তব্য পরিবর্তন করে জার্মানির স্টুটগার্ট, নুরেমবার্গ ও ফ্রাংকফুর্টের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় পাঠানো হয়। ফ্লাইট ট্র্যাকিং সাইট ফ্লাইটরাডার দেখিয়েছে, রাত ১১টার দিকে কয়েকটি বিমান মিউনিখ বিমানবন্দরের চারপাশে ঘোরাফেরা করছিল এবং পরে অন্য গন্তব্যে চলে যায়।
বিমানবন্দর শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে পুনরায় খুলে দেওয়া হয়। যাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা এক কল হ্যান্ডলার সিএনএনকে জানিয়েছেন, 'এখন সবকিছু স্বাভাবিক। কিছু ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, তবে বিমানবন্দর খুলে গেছে। ভোর ৫টা থেকে সব ফ্লাইট আগমন ও প্রস্থান নিরাপদ।'
মিউনিখ বিমানবন্দরের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ব্যাংকক থেকে আসা একটি লুফথানসার লং-হল ফ্লাইট ভোর ৫টা ২৫ মিনিটে অবতরণ করার কথা ছিল।
লুফথানসারের এক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বন্ধের কারণে তাদের ১৯টি ফ্লাইট বাতিল বা অন্যত্র পাঠাতে হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি এশিয়ার দীর্ঘ দূরত্বের ফ্লাইটও রয়েছে, যা পরে নতুন সময়সূচি অনুযায়ী পরিচালিত হবে। ভুক্তভোগী যাত্রীদের খাবার, পানি ও কম্বল সরবরাহ করা হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ছবিতে দেখা গেছে, অনেক যাত্রী ক্যাম্প বেডে ঘুমাচ্ছেন।
সিএনএন এখনও পর্যন্ত বিবিয়ান রাজ্য পুলিশ, জার্মান ফেডারেল ক্রিমিনাল পুলিশ অফিস এবং দেশীয় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে মন্তব্যের জন্য।
ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশে ড্রোন আতঙ্ক
ইউরোপজুড়ে একই ধরনের বিমান চলাচলে বিঘ্নের এটি সর্বশেষ ঘটনা। ডেনমার্ক ও নরওয়ের বিভিন্ন বিমানবন্দরে ড্রোন দেখা যাওয়ায় সাম্প্রতিক সপ্তাহে দশ হাজারেরও বেশি যাত্রী প্রভাবিত হয়েছেন।
ডেনমার্ক এই ঘটনার পর সিভিল ড্রোন ফ্লাইট সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে। দেশটি এই সপ্তাহে কোপেনহেগেনে ইউরোপীয় নেতাদের একটি সম্মেলনের আয়োজন করছে, যেখানে ইউক্রেনকে সহায়তা এবং ইউরোপীয় নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা হবে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার টেলিভিশনে দেওয়া এক অনুষ্ঠানে ডেনমার্কের ড্রোনের অভিযোগ নিয়ে পশ্চিমাদের দাবি হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'আমি আর কোনও ড্রোন পাঠাবো না। না ফ্রান্সে, না ডেনমার্কে, না কোপেনহেগেনে।' তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, 'আমরা ইউরোপে বাড়তে থাকা সামরিকীকরণ সতর্কভাবে দেখছি… কারো উচিত হবে না সন্দেহ করা যে রাশিয়ার পাল্টা পদক্ষেপ খুব দ্রুত আসবে না।'
ইউরোপীয় নেতাদের সম্মেলনে আকাশ সুরক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা আলোচনা করার কথা, যার মধ্যে রয়েছে 'ড্রোন ওয়াল' উদ্যোগ। এটি কোনো বাস্তব প্রাচীর নয়, বরং ড্রোন শনাক্ত ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করার একটি নেটওয়ার্ক।
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডরিকসেন জানিয়েছেন, 'আমরা অন্তত এটিই বলতে পারি যে মূলত একটি দেশই ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করছে– এবং তা হল রাশিয়া।'
মিউনিখ শহর ইতোমধ্যেই সতর্ক অবস্থায় ছিল, কারণ এই সপ্তাহের শুরুতে 'অক্টোবরফেস্ট' উৎসব বোমা হামলার হুমকির কারণে কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ ছিল।