স্বীকৃতি মিললেও যুক্তরাজ্যের ঔপনিবেশিক যুদ্ধাপরাধের বিচার চায় ফিলিস্তিন

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতির পর এবার ঔপনিবেশিক শাসনামলে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে ফিলিস্তিনিদের একটি প্রতিনিধিদল।
চলতি মাসের শুরুতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরে এ–সংক্রান্ত ৪০০ পৃষ্ঠার একটি আইনি আবেদন জমা দিয়েছে তারা, যেখানে ব্রিটিশ ম্যান্ডেট আমলে সংঘটিত নির্যাতন, নির্বাসন ও দমন-পীড়নের বিস্তারিত অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে।
আবেদনকারীরা ১৯১৭ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসনাধীন ফিলিস্তিনের ১৩টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
আবেদনকারীদের মুখপাত্র এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক ভিক্টর কাতান বলেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক হলেও এটি যুক্তরাজ্যের ঐতিহাসিক দায় শোধ করে না।
তিনি বলেন, 'ব্রিটিশরা ফিলিস্তিনিদের স্বায়ত্তশাসন থেকে বঞ্চিত করেছিল এবং একজন হাইকমিশনারকে স্বৈরাচারীর মতো ক্ষমতা দিয়েছিল, যার ফল ভোগ করতে হয়েছে ফিলিস্তিনি জনগণকে। শুধু স্বীকৃতি দিলেই এই ঐতিহাসিক সমস্যাগুলোর সমাধান হয় না, এসব ফিলিস্তিনিদের জন্য কেবল ইতিহাস নয়, বরং আজকের জীবন্ত বাস্তবতা।'
আবেদনে তিন দশক ধরে ব্রিটিশ বাহিনীর চালানো নির্যাতন, হত্যা, বহিষ্কার এবং সম্মিলিত শাস্তির মতো গুরুতর অভিযোগের নথি তুলে ধরা হয়েছে, যা যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের সামিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২২ সালে বিবিসির এক অনুসন্ধানেও এর প্রমাণ মিলেছিল, যেখানে নির্বিচারে হত্যা, গ্রামে অগ্নিসংযোগ এবং মানব ঢাল ব্যবহারের মতো ঘটনার বিবরণ উঠে আসে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা অটোমানদের হটিয়ে ফিলিস্তিন দখল করে এবং ১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে সেখানে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি করে। এর ফলে আরব ও ইহুদিদের মধ্যে সহিংসতা বাড়তে থাকে।
১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে 'আরব বিদ্রোহ' শুরু হলে তা নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হয়। এক হিসাবে দেখা যায়, সে সময় প্রাপ্তবয়স্ক আরব ফিলিস্তিনি পুরুষদের প্রায় ১০ শতাংশ নিহত, আহত, কারারুদ্ধ বা নির্বাসিত হয়েছিলেন।
ফিলিস্তিনি আবেদনকারীরা মালয়েশিয়ায় ১৯৪৮ সালের বাতাং কালি গণহত্যা এবং ১৯৫০-এর দশকে কেনিয়ায় মাউ মাউ বিদ্রোহের সময় নির্যাতনের জন্য যুক্তরাজ্যের ক্ষমা প্রার্থনা ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মতো পূর্ববর্তী ঘটনাগুলোকে তাদের দাবির ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর (এফসিডিও) এই আইনি আবেদন নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে বিবিসি জানিয়েছে, উপপ্রধানমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি কর্মকর্তাদের বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেবেন।