‘জাতীয় নিরাপত্তা’র কারণে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে কলকাতার নির্মাতার তথ্যচিত্র ভারতে নিষিদ্ধ
বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান নিয়ে নির্মিত কলকাতার চলচ্চিত্র নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদারের তথ্যচিত্র '৩৬ জুলাই: স্টেটস ভার্সেস পিপলস' সম্প্রতি ভারতে দেখা যাচ্ছে না।
ইউটিউবে তথ্যচিত্রটির লিংকে প্রবেশ করলে দেখায়,'জাতীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলা' সংক্রান্ত সরকারি আদেশের কারণে এটি ভারতে ব্লক করা হয়েছে।
'৩৬ জুলাই: স্টেটস ভার্সেস পিপল' নামের এই তথ্যচিত্রটি গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশে প্রথম প্রদর্শিত হয়।
এ বিষয়ে পরিচালক সৌমিত্র দস্তিদার জানান, ভারত সরকার তার তথ্যচিত্রটির ওপর একপ্রকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তিনি বলেন, 'আমার বাংলাদেশি বন্ধুরা আমাকে ছবিটির লিংকটি পাঠিয়েছিল, যাতে আমি ভারতে বসে ছবিটি দেখতে পারি। কিন্তু লিংকে ক্লিক করতেই দেখি, কনটেন্টটি এই দেশে ব্লক করা হয়েছে।'
'আমার তথ্যচিত্রটি গত ৪ আগস্ট বাংলাদেশের একাত্তর টিভিতে দেখানো হয়। পরে ইউটিউবে আপলোড করা হলে একটি গান নিয়ে কপিরাইট সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দেয়, যা সেপ্টেম্বরে সমাধান হয়ে যায়। এরপর বাংলাদেশে সবাই ছবিটি দেখতে পারছিল', বলেন তিনি।
তথ্যচিত্রটিতে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী ও অধিকারকর্মী বদরুদ্দীন উমর, সাংবাদিক তাসনিম খলিল, অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ, তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা শারমিন আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা মেঘমল্লার বসু এবং ছাত্র অধিকারকর্মী উমামা ফাতেমার সাক্ষাৎকার রয়েছে।
ছবিটির চিত্রনাট্য ও গবেষণা করেছেন সাহেদ শুভ এবং চিত্রগ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন লুৎফুর রহমান। সৌমিত্র দস্তিদার জানান, নির্মাণের সময়ই তিনি জানতেন যে আন্দোলনের সমর্থকদের বক্তব্য তুলে ধরার কারণে ছবিটি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে এবং তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠতে পারে।
'আমি জানতাম আমার তথ্যচিত্রের বিষয়বস্তু সংবেদনশীল। কিন্তু যারা ঘটনার সাক্ষী, তাদের কথা বলার অধিকার আছে। একজন তথ্যচিত্র নির্মাতা হিসেবে আমারও সেই বক্তব্য তুলে ধরার অধিকার রয়েছে। আমি এমন কিছু বানাইনি যা আমাদের দেশের জাতীয় নিরাপত্তাকে বিপন্ন করতে পারে,' বলেন তিনি।
ভারতে নিজের তথ্যচিত্রের এমন প্রতিক্রিয়ায় হতাশ সৌমিত্র দস্তিদার। তিনি বলেন, 'সময়টা অদ্ভুত। ভারতে 'দ্য বেঙ্গল ফাইলস'-এর মতো ছবি জাতীয় নিরাপত্তার সুরক্ষা নিয়ে প্রদর্শিত হয়, আর আমার তথ্যচিত্র অনলাইনে চেপে দেওয়া হচ্ছে। ইতিহাসের পুনর্মূল্যায়নের কথা বলা দুজন পরিচালকের প্রতি এই ভিন্ন আচরণ আমাকে কষ্ট দিয়েছে।'
