নেপাল সংকট দক্ষিণ এশিয়া এবং বিশ্বের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?

গত রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) নেপালের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি রাজধানী কাঠমান্ডুতে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে তরুণদের ডাকা আন্দোলন নিয়ে ব্যঙ্গ করেন।
তিনি বলেন, নিজেদের 'জেন জি' পরিচয় দেওয়া আন্দোলনকারীরা মনে করছেন, তারা চাইলে যা খুশি দাবি করতে পারেন।
কিন্তু ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীতে পরিণত হন অলি। যাদের নিয়ে ব্যঙ্গ করেছিলেন, সেই 'জেন জি' আন্দোলনকারীরাই এখন আলোচনা করছেন—কে হবেন নেপালের নতুন নেতৃত্ব।
সোমবার পুলিশের গুলিতে অন্তত ১৯ জন বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার পর উত্তেজনা আরও তীব্র হয়। পরদিন মঙ্গলবার ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা পার্লামেন্ট ভবন ও কয়েকজন শীর্ষ নেতার বাসভবনে অগ্নিসংযোগ করেন। এ সময় অলির মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য পদত্যাগ করেন। শেষ পর্যন্ত চাপে পড়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।
সোমবার ও মঙ্গলবারের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে।
এই নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহ নেপালকে পরিণত করেছে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক পরিবর্তনের নতুন কেন্দ্রে। এর আগে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালে এবং বাংলাদেশে ২০২৪ সালে তরুণদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল সেসব দেশের সরকার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নেপালের অস্থিতিশীলতা শুধু তিন কোটি মানুষের এই দেশটিকেই নয়, বরং গোটা অঞ্চল ও বিশ্বকেও প্রভাবিত করছে। তাদের মতে, নেপালের অশান্ত রাজনৈতিক ইতিহাস এবং ভারত, চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষার ঐতিহ্যই এ প্রভাবকে আরও গভীর করছে।
কী ঘটছে নেপালে?
৮ সেপ্টেম্বর নেপালে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে লাখো তরুণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারির পর সরকারের প্রতি তাদের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়।
বিক্ষোভ চলাকালে একটি অংশ ব্যারিকেড ভেঙে পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণে প্রবেশ করলে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি, টিয়ারশেল ও জল কামান ব্যবহার করে। এতে অন্তত ১৯ জন নিহত হন। এ ঘটনার পর তরুণদের ক্ষোভ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
মঙ্গলবার ফের সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষুব্ধরা রাজনীতিবিদদের বাড়ি ও রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে হামলা চালায়, অগ্নিসংযোগ করে। নেপালের বৃহত্তম গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান 'কান্তিপুর পাবলিকেশনস'-এর ভবনও পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

দুপুরে প্রধানমন্ত্রী কে.পি. শর্মা ওলি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তবে বিক্ষোভকারীরা জানান, তাদের আন্দোলন 'জে-জি মুভমেন্ট'। তারা সংসদ ভেঙে নতুন নির্বাচন, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার গঠন এবং ৮ সেপ্টেম্বর গুলি চালানোর নির্দেশদাতাদের বিচারের দাবি তুলেছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। রাজধানী কাঠমান্ডুতে জারি করা হয়েছে কারফিউ।
নেপালের ইতিহাসে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন নতুন নয়। দেশটির আধুনিক রাজনীতি জুড়ে আছে ছাত্র আন্দোলন, রাজপ্রাসাদের হস্তক্ষেপ, সহিংসতার চক্র এবং এক দশকের দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ।
রানা শাসন থেকে পঞ্চায়েত যুগ
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতার সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন বহু শিক্ষিত নেপালি। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ স্বাধীন হলে তারা অনুপ্রাণিত হন। একই সঙ্গে নেপালে রানা শাসনের অবসান ঘটাতে বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ হয়ে ওঠেন।
১৯৫১ সালে রানা-বিরোধী আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেয়। শিক্ষিত অভিজাত শ্রেণির অনেকেই এতে যোগ দেন। এভাবেই নেপালের প্রথম আধুনিক বিপ্লব সংঘটিত হয়। শেষ পর্যন্ত রানারা একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে সম্মত হতে বাধ্য হন। সেই সময় রাজা ত্রিভুবন প্রতিবাদ চলাকালে ভারতে আশ্রয় নেন, পরে নেপালে ফিরে আসেন। এরপর রানা পরিবার ও প্রধান রাজনৈতিক দল নেপালি কংগ্রেসের সমন্বয়ে একটি সরকার গঠিত হয়।

১৯৫৯ সালে নেপালে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম সাধারণ নির্বাচন। নেপালি কংগ্রেস নেতা বিষ্ণেশ্বর প্রসাদ কৈরালা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তবে মাত্র এক বছর পর রাজা মহেন্দ্র বীর বিক্রম কৈরালা সরকারের মন্ত্রিসভা ভেঙে দেন। জনপ্রিয় ভূমি সংস্কার কর্মসূচি শাসক শ্রেণির একাংশকে ক্ষুব্ধ করায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। রাজা সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং দলহীন শাসনব্যবস্থা 'পঞ্চায়েত' চালু করেন। প্রায় তিন দশক ধরে এই ব্যবস্থা বলবৎ থাকে এবং রাজা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হন।
রাজনীতির কর্মকাণ্ড প্রায় স্থবির হয়ে পড়লে প্রতিবাদের প্রধান ক্ষেত্র হয়ে ওঠে ছাত্র আন্দোলন। ১৯৭০ ও ৮০-এর দশকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক ও শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ চলতে থাকে।
দীর্ঘস্থায়ী এই আন্দোলনের ফলেই অবশেষে ১৯৯০ সালে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। নেপাল আবার ফিরে আসে সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথে।
সশস্ত্র বিদ্রোহ ও প্রজাতন্ত্রের জন্ম
১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী) রাজতন্ত্র উৎখাত করে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহ চালায়। এই সংঘাতে প্রাণ হারান ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
২০০৬ সালে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে রাজা জ্ঞানেন্দ্র ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে নেপালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয় এবং দেশটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে রূপ নেয়।
এরপর থেকে নেপালি কংগ্রেস (এনসি), কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (ইউনিফায়েড মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) (সিপিএন-ইউএমএল) এবং কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওবাদী কেন্দ্র) (সিপিএন-এমসি)—এই তিন প্রধান দলের আটজন নেতা মোট ১৪ বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। সম্প্রতি পদত্যাগ করা কেপি শর্মা ওলি চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
পর্যবেক্ষকদের মতে, ওলি সরকারের সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা ছিল প্রতিবাদের সরাসরি প্ররোচনা। তবে তাদের বিশ্লেষণ, এই 'জেন-জি' আন্দোলনের পেছনে বহু বছরের জমে থাকা ক্ষোভই আসল কারণ।

কাঠমান্ডুভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিক রাজনীশ ভাণ্ডারি আল জাজিরাকে বলেন, এ বিক্ষোভ মূলত মানুষের হতাশার বহিঃপ্রকাশ। শাসকদের 'দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অদক্ষতা' নিয়ে দীর্ঘদিনের ক্ষোভই এতে প্রতিফলিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, 'এটি দেখায় যে নেপালের তরুণরা শাসকদের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল। কারণ শাসকরা তাদের দাবির প্রতি কোনো গুরুত্ব দেয়নি, কথা বলেনি এবং অহংকারপূর্ণ আচরণ চালিয়ে গেছে।'
কাঠমান্ডুর নাগরিক ও ডিজিটাল অধিকারকর্মী আশীর্বাদ ত্রিপাঠীও মনে করেন, এ প্রতিবাদ হঠাৎ করে শুরু হয়নি।
তিনি বলেন, 'বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ জমে ছিল, বিশেষ করে তিন প্রধান দলের বয়স্ক নেতাদের প্রতি। তারা কেবল ক্ষমতার আসনে ওঠা-নামাতেই সময় কাটিয়েছেন।'
ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রতিবেশীদের রাজনীতি
হিমালয়ের দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত নেপাল একটি স্থলবেষ্টিত দেশ। এখানে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত এভারেস্টসহ ১৪টির মধ্যে ৮টি শৃঙ্গ রয়েছে।
দেশটির দৈর্ঘ্য পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ৮৮৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৯৩ কিলোমিটার। উত্তরে চীন, আর দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে ভারত দ্বারা পরিবেষ্টিত নেপাল ঐতিহাসিকভাবে ভারতের কাছাকাছি থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পরিবর্তনের ফলে বৈদেশিক সম্পর্কেও রদবদল এসেছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি বেইজিংপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর কাঠমান্ডুতে প্রভাবের ভারসাম্য নতুনভাবে গড়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সমাজবিজ্ঞানী লোকরঞ্জন পরাজুলি আল জাজিরাকে বলেন, পরবর্তী শাসক সম্ভবত হবেন এমন একজন 'স্বাধীন' ব্যক্তিত্ব, যিনি সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। তিনি আরও বলেন, 'এখনও স্পষ্ট নয় সেই ব্যক্তি কে হবেন। তবে তিনি এমন কেউ হবেন, যার ওপর সেনাবাহিনী আস্থা রাখতে পারবে।'
কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি অন্তর্বর্তী সরকারের সম্ভাব্য প্রধান হতে পারেন। বিশ্লেষক ত্রিপাঠি বলেন, 'তিনি সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী। তার নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠনের সম্ভাবনা প্রবল। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।' তিনি আরও জানান, কার্কির রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অবস্থান এখনো পরিষ্কার নয়।

এদিকে কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন্দ্র শাহকেও সম্ভাব্য বিকল্প নেতৃত্ব হিসেবে দেখা হচ্ছে। মাত্র ৩৫ বছর বয়সী এই র্যাপ সংগীতশিল্পী ২০২২ সাল থেকে শহরের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
তবে কাঠমান্ডুর এক অভিজ্ঞ মানবাধিকার কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে আল জাজিরাকে বলেন, নেতৃত্ব যিনিই আসুন না কেন, ভারত ও চীন উভয়েই স্থিতিশীলতা চাইবে। তারা এমন সরকার চাইবে, যা তাদের স্বার্থকে সম্মান করবে। তিনি আরও বলেন, 'দুই প্রতিবেশীর কেউই চায় না, অপরজন নেপালে অতিরিক্ত প্রভাব বিস্তার করুক।'
ত্রিপাঠি নেপালের ঐতিহাসিক ভারসাম্যের দিকটি তুলে ধরে বলেন, 'নেপাল সবসময় দুই প্রতিবেশী ভারত ও চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। দক্ষিণাঞ্চলে আমাদের সাংস্কৃতিক ঘনিষ্ঠতা ভারতের সঙ্গে, আর উত্তরাঞ্চলে রয়েছে চীনের সঙ্গে সাংস্কৃতিক মিল। তবে আমাদের নীতি সবসময় ভারসাম্য রক্ষা করা—এবং ভবিষ্যতেও আমরা সেই নীতিই অনুসরণ করব।'
আঞ্চলিক সমীকরণ
যুক্তরাজ্যভিত্তিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান হিলিক্সের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ আলি হাসান মনে করেন, কেপি শর্মা অলির ক্ষমতাচ্যুত হওয়া কাঠমান্ডুতে বেইজিংয়ের জন্য ধাক্কা হতে পারে এবং এতে নয়াদিল্লির জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপির একটি অংশ নেপালের রাজতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। আন্দোলনকারীদের দাবি, হিমালয়ের দেশটিতে রানা শাসন ফিরিয়ে আনা উচিত।
চলতি বছরের শুরুতে সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র কাঠমান্ডুতে ব্যাপক গণসংবর্ধনা পেয়েছিলেন। এটি সমাজের একাংশে রাজতন্ত্রের প্রতি সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়। আলি হাসান বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে যদি রাজতন্ত্রপন্থীরা লাভবান হয়, তবে সেটি বিজেপির পক্ষেও সুফল বয়ে আনবে। তবে তিনি যোগ করেন, অলিকে ক্ষমতা থেকে সরানো 'জেন-জি' প্রজন্মের তরুণরা জ্ঞানেন্দ্রর প্রত্যাবর্তন চান না।
এদিকে নেপালের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে পাকিস্তানও। বিশ্লেষকদের মতে, ভারত ও চীনের তুলনায় পাকিস্তানের সঙ্গে নেপালের সম্পর্ক সবসময় সৌহার্দ্যপূর্ণ হলেও কৌশলগত গুরুত্ব কম ছিল। তবে সময় সময়ে নেপালের শাসকরা পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ব্যবহার করেছেন নয়াদিল্লিকে আঞ্চলিক বিকল্পের কথা মনে করিয়ে দিতে।
১৯৬০ সালে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার কৈরালা সরকারকে বরখাস্ত করার জন্য রাজা মহেন্দ্রর সমালোচনা করে। তার এক বছর পর নেপালের রাজা পাকিস্তান সফর করেন এবং ১৯৬৩ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানকে আতিথেয়তা দেন।

সম্প্রতি, মে মাসে জম্মু-কাশ্মীরে বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা যখন তুঙ্গে, তখন পাকিস্তানের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির একটি প্রতিনিধিদলকে আতিথেয়তা দেয় নেপাল। এতে নয়াদিল্লিতে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কারণ, দীর্ঘদিন ধরেই অলি বেইজিংয়ের ঘনিষ্ঠ—যা পাকিস্তানেরও নিকটতম মিত্র।
পাকিস্তানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়েছে। বিশেষ করে ২০২২ সালে সংসদের অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পদচ্যুতি সেই অস্থিরতাকে আরও প্রকট করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, নেপালের বর্তমান সংকট পাকিস্তানের ক্ষমতাসীনদের মাঝেও উদ্বেগ তৈরি করতে পারে।
লন্ডনভিত্তিক বিশ্লেষক হাসান বলেন, 'পাকিস্তানের অভিজাতরা হয়তো ভাবছেন, তাদের ক্ষমতার দখল কতটা নিরাপদ। কারণ, তাদের বিরুদ্ধেও প্রায়ই একই অভিযোগ ওঠে, যেসব অভিযোগ বাংলাদেশের, শ্রীলঙ্কার ও নেপালের জনগণ নেতাদের বিরুদ্ধে তুলেছিলেন—সরকার জনগণের প্রতি উদাসীন, কেবল নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত, আর অত্যন্ত কর্তৃত্ববাদী।'
অন্যদিকে, কাঠমান্ডুভিত্তিক এক মানবাধিকার কর্মী, যিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি, বলেন, নেপালের দৃষ্টিকোণ থেকে পাকিস্তান এখন অগ্রাধিকার নয়।
তিনি বলেন, 'নেপালের সঙ্গে পাকিস্তানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। তবে ভারত বা চীনের মতো পাকিস্তান নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলে না। নেপালের সরকারগুলোও পাকিস্তানকে ঘিরে আলাদা কোনো নীতি গ্রহণ করে না।'