নেপালে জেন-জি বিক্ষোভ: ১৯ জন নিহতের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপসহ বড় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে নেপাল সরকার। এ নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করে রাজধানী কাঠমান্ডুতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। খবর বিবিসি'র।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টা থেকে কার্যকর হওয়া এ সিদ্ধান্তে এক ডজনের বেশি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রতিবাদে সোমবার হাজারো তরুণ জোরপূর্বক দেশটির পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পড়ে। তারা ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি জানায়। একই সঙ্গে তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়।
ঘটনার পর সোমবার গভীর রাতে জরুরি মন্ত্রিসভা বৈঠকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়। 'জেন-জি প্রজমের দাবি মেনে' এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নেপালে তথ্য ও যোগাযোগমন্ত্রী পৃত্থ্বী সুব্বা গুরুং।
এদিকে, বিক্ষোভে অন্তত ১৯ জন নিহতের ঘটনায় পদত্যাগ করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক। গতকাল সন্ধ্যায় বালুওয়াতারে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
বিক্ষোভ শুধু রাজধানীতেই নয়, কাঠমান্ডুর বাইরের বিভিন্ন শহরেও ছড়িয়ে পড়ে। পোখারা, বুটওয়াল, ভৈরহাওয়া, ভারতপুর, ইটাহারি এবং ডামাকসহ বিভিন্ন শহরে সংঘাতে আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।
উল্লেখ্য, নেপাল সরকার কর্তৃক কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবেশাধিকার বন্ধ এবং রাজনৈতিক দুর্নীতির প্রতিবাদে মূলত 'জেন জি' নামে পরিচিত তরুণ প্রজন্ম রাস্তায় নামে। সংঘর্ষের পর সংসদ ভবনের চারপাশসহ বিভিন্ন এলাকায় কারফিউ জারি হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবেশাধিকার বন্ধের বিষয়ে মানবাধিকার ও গণমাধ্যম সংগঠনগুলো এ পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে। তাদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী কে.পি. শর্মা অলি সরকারের এই সিদ্ধান্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দিচ্ছে এবং ব্যবসার ক্ষতি করছে।
সরকার জানিয়েছে, মোট ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপ- যার মধ্যে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, এক্স, রেডিট, লিংকডইন, পিন্টারেস্ট ও সিগন্যাল রয়েছে- নতুন আইন অনুযায়ী নিবন্ধন না করায় এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আজও চলছে বিক্ষোভ
এদিকে, কাঠমান্ডুর নিউ বানেশ্বরসহ বিভিন্ন স্থানে আজ মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) কারফিউ ভেঙে আবারও বিক্ষোভে নেমেছেন তরুণরা। সোমবারের বিক্ষোভ দমন ও সরকারি দমননীতির প্রতিবাদে এই আন্দোলন শুরু হয়।
সকালে নিউ বানেশ্বরের পার্লামেন্ট ভবনের সামনে হঠাৎ জড়ো হন তরুণরা। তারা কোনো ব্যানার বহন করেননি। এক অংশগ্রহণকারী বলেন, 'গতকালের ঘটনা সরকারের ব্যর্থতা প্রমাণ করেছে। আমি এখানে এসেছি তরুণদের পাশে দাঁড়াতে।'
সেখান থেকে সকালেই কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ।

কারফিউ জারি
বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে কাঠমান্ডু, ললিতপুর ও ভক্তপুর জেলায় কারফিউ জারি করেছে প্রশাসন। কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন কার্যালয় রিং রোডের ভেতরে সকাল ৮টা ৩০ মিনিট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ ঘোষণা করেছে। কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন অফিস (ডিএও) আবারও অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করেছে। এর আগে ভোর ৫টায় শেষ হওয়া কারফিউ তুলে নেওয়া হলেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নতুন নির্দেশ জারি করা হয়।
প্রধান জেলা প্রশাসক ছাবিলাল রিজালের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন আইন ২০২৮–এর ধারা ৬(ক) অনুযায়ী এই কারফিউ জারি করা হয়েছে। কারফিউ চলাকালে কোনো ধরনের সমাবেশ, মিছিল, বিক্ষোভ, সভা বা পিকেটিং করা যাবে না।
কারফিউর আওতায় পুরো কাঠমান্ডু মহানগরীর রিং রোড এলাকা থাকবে। এর সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে—বালকুমারি সেতু, কোটেশ্বর চৌক, সিন্নামঙ্গল, গৌশালা, চাবাহিল, নারায়ণ গোপাল চৌক, গঙ্গাবু, বালাজু, স্বয়ম্ভূ, কালাঙ্কি, বালখু হয়ে বাগমতী নদীর সেতু পর্যন্ত।
তবে জরুরি পরিষেবার যানবাহন, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, মৃতদেহবাহী গাড়ি, স্বাস্থ্যকর্মীদের গাড়ি, সংবাদকর্মী, পর্যটকবাহী যান, মানবাধিকার সংস্থা ও কূটনৈতিক মিশনের যানবাহন এবং বিমানযাত্রার টিকিটধারীরা এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবেন। নিরাপত্তা বাহিনী এসব যান চলাচলে সহায়তা করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।