প্রেসিডেন্ট চীনে, পার্লামেন্ট অভিমুখে ঝাড়ু হাতে ইন্দোনেশিয়ার নারীরা
পুলিশি নির্যাতন ও অপচয়ী সরকারি ব্যয়ের প্রতিবাদে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় পার্লামেন্ট ভবনের দিকে ঝাড়ু হাতে মিছিল করেছেন শত শত নারী। বুধবার গোলাপি পোশাক পরে তারা এ অভিনব কর্মসূচি পালন করেন।
গত দুই সপ্তাহ ধরে ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন শহরে সংসদ সদস্যদের বিলাসবহুল সুযোগ-সুবিধা ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। এরই মধ্যে পুলিশের গাড়ির নিচে চাপা পড়ে তরুণ মোটরবাইক চালক আফফান কুরনিয়াওয়ান নিহত হওয়ার ঘটনায় আন্দোলন আরও তীব্র হয় এবং সহিংস রূপ নেয়।
বিক্ষোভ যখন তুঙ্গে, তখন প্রেসিডেন্ট প্রাবোয়ো সুবিয়ান্তো বেইজিংয়ে চীনের সামরিক কুচকাওয়াজে যোগ দেওয়ার সফর বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে বুধবার তাকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এক গ্রুপ ছবিতে দেখা যায়।
চীন সফরের আগে প্রাবোয়ো জানিয়েছিলেন, সংসদ সদস্যদের জন্য বরাদ্দ বিশেষ সুবিধাগুলো বাতিল করবেন। বিক্ষোভকারীদের অন্যতম দাবি ছিল এই সুবিধা প্রত্যাহার।
বুধবারের সমাবেশে গোলাপি পোশাক পরা ইন্দোনেশিয়ান উইমেনস অ্যালায়েন্স (আইডব্লিউএ)-এর কর্মীরা জানান, তাদের হাতে থাকা ঝাড়ু 'রাষ্ট্রের নোংরামি, সামরিকতন্ত্র ও পুলিশি দমন-পীড়ন দূর করার প্রতীক'। এ সময় তারা 'পুলিশের সংস্কার চাই' লেখা প্ল্যাকার্ডও প্রদর্শন করেন।
ইন্দোনেশিয়ান উইমেনস অ্যালায়েন্স (আইডব্লিউএ), যা ৯০টি নারী সংগঠন, সামাজিক আন্দোলন, শ্রমিক ইউনিয়ন, মানবাধিকার সংস্থা ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের সমন্বয়ে গঠিত—চলমান বিক্ষোভে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
ইন্দোনেশিয়ায় শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নারীদের আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ১৯৯৮ সালের সংস্কার আন্দোলনের আগে সুহার্তোর স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধেও নারীরা একইভাবে সোচ্চার ছিলেন। আইডব্লিউএ জানিয়েছে, তাদের বেছে নেওয়া গোলাপি রঙ সাহসের প্রতীক। অন্যদিকে অন্যান্য বিক্ষোভকারীরা ব্যবহার করছেন সবুজ রঙ, যা নিহত মোটরবাইক চালক আফফান কুরনিয়াওয়ানের রাইডশেয়ার কোম্পানির পোশাকের রঙ। এর মাধ্যমে তারা সংহতি প্রকাশ করছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই রঙগুলোকে 'হিরো গ্রিন' ও 'ব্রেভ পিঙ্ক' নামে অভিহিত করা হচ্ছে। অনেকেই প্রোফাইল ছবিতে এ রঙের ফিল্টার ব্যবহার করে সমর্থন জানাচ্ছেন।
এদিকে রাজধানী জাকার্তায় বিক্ষোভ দমনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে দ্রুত, পুঙ্খানুপুঙ্খ ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্দোনেশিয়ার নির্বাহী পরিচালক উসমান হামিদ বলেছেন, 'আরও হতাহতের ঘটনা ঘটার আগেই রাষ্ট্রের উচিত বিক্ষোভকারীদের সব দাবি অবিলম্বে মেনে নেওয়া।'
উল্লেখ্য, আগস্টের শেষ দিকের বিক্ষোভে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম। এর মধ্যে কয়েকজনের মৃত্যুর কারণ পুলিশি সহিংসতা বলে অভিযোগ উঠেছে। ইন্দোনেশিয়ান লিগ্যাল এইড ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশজুড়ে অন্তত ১ হাজার ৪২ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
দেশজুড়ে চলা বিক্ষোভ দমনের চেষ্টায় প্রেসিডেন্ট প্রাবোয়ো সুবিয়ান্তো রোববার ঘোষণা দেন, রাজনীতিবিদদের জন্য রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে দেওয়া বেশ কিছু সুবিধা, যার মধ্যে ভাতা কমানোও রয়েছে, তা হ্রাস করা হবে।
বিক্ষোভকারীরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও অনেকের মতে, এটি যথেষ্ট নয়। অল-ইন্দোনেশিয়ান স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সাবেক সমন্বয়ক হেরিয়ান্তো বিবিসিকে বলেন, 'এটি কেবল একটি বিষয় নয়, বরং বৈষম্য, শাসনব্যবস্থা ও জবাবদিহিতা নিয়ে দীর্ঘদিনের উদ্বেগের প্রতিফলন।'
তিনি আরও বলেন, 'প্রতীকী পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ হলেও মানুষ আরও গভীর সংস্কার আশা করে—বিশেষ করে কৃষিনীতি, শিক্ষা এবং ন্যায্য অর্থনৈতিক সুযোগের মতো ক্ষেত্রগুলোতে।' হেরিয়ান্তোর মতে, 'চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি জবাবদিহিমূলক, স্বচ্ছ ও জনগণকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা।'
