ট্রাম্পের শুল্ক অবৈধ ঘোষণা হওয়ার পর কী হবে?

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আপিল আদালত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা অধিকাংশ শুল্ককে অবৈধ ঘোষণা করেছে। আদালতের মতে, জরুরি ক্ষমতা ব্যবহারের নামে তিনি সংবিধানসম্মত সীমা অতিক্রম করেছেন।
শুক্রবার (২৯ আগস্ট) দেওয়া রায়ে আদালত বলেছে, আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (আইইইপিএ) প্রেসিডেন্টকে শুল্ক আরোপের অনুমতি দেয় না। রায়ে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়, কর বা শুল্ক আরোপের ক্ষমতা কেবল কংগ্রেসের হাতে।
এ রায় কার্যত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতের আগের সিদ্ধান্তকেই বহাল করেছে। সেই আদালতও বলেছিল, ট্রাম্পের আরোপিত বৈশ্বিক শুল্ক 'আইনের পরিপন্থী'।
রায়ের পরপরই ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি সেখানে লিখেছেন, 'এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে তা আক্ষরিক অর্থেই যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেবে।' আদালতকে তিনি 'অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট' বলেও অভিহিত করেন।
আইইইপিএ কী?
১৯৭৭ সালের এই আইন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে বিদেশি হুমকি বা জাতীয় জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় বিশেষ অর্থনৈতিক ক্ষমতা দেয়। এতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট দেশের বাইরে থেকে আসা 'অস্বাভাবিক ও গুরুতর হুমকি' মোকাবিলায় বিভিন্ন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
বারাক ওবামা এই আইন ব্যবহার করেছিলেন ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে। জো বাইডেনও ২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় আক্রমণের পর একইভাবে এ আইন ব্যবহার করেন।
কিন্তু আপিল আদালতের মতে, এই আইনে কোথাও শুল্কের উল্লেখ নেই, আর প্রেসিডেন্টের শুল্ক আরোপের ক্ষমতার ওপর কোনো স্পষ্ট সীমারেখা নেই।
ট্রাম্প অবশ্য বলেছিলেন, বাণিজ্য ঘাটতি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি, তাই এটি জরুরি অবস্থা। কিন্তু আদালতের ভাষ্য, কর আরোপের ক্ষমতা কেবল কংগ্রেসের হাতে, প্রেসিডেন্টের নয়।
অর্থনীতি ও রাজনীতির প্রভাব
এই রায় ট্রাম্পের নীতির জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে। অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়বে।
শুল্ক মানে হলো আমদানির খরচ বেড়ে যাওয়া, ফলে কোম্পানির মুনাফা কমে যায়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ লিন্ডা ইউ বিবিসিকে বলেন, 'এটি ব্যবসায়িক কার্যক্রম ধীর করতে পারে এবং অনিশ্চয়তা তৈরি করবে।'
শুল্কের লক্ষ্য হলো দেশীয় কোম্পানিকে বিদেশি পণ্য কিনতে নিরুৎসাহিত করা। ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রভাবিত হয়।
এখন অনেক দেশ অপেক্ষা করছে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের জন্য। অনিশ্চয়তায় থাকায় তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন ব্যবসায়িক চুক্তি থেকে বিরত থাকতে পারে।
রাজনৈতিক দিক থেকেও বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। যদি সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের পক্ষে যায়, তবে তিনি ভবিষ্যতে আরও আক্রমণাত্মকভাবে আইইইপিএ ব্যবহার করতে পারেন। তবে আদালতগুলোর অতীত রায় ইঙ্গিত দেয়, কংগ্রেস অনুমোদন ছাড়া প্রেসিডেন্টের অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়ে তারা সতর্ক।
এখন কী হবে?
এখন মামলা যাবে সুপ্রিম কোর্টে। ট্রাম্পও জানিয়েছেন, তিনি সেখানে লড়বেন।
তিনি লিখেছেন, 'আমাদের অযোগ্য রাজনীতিবিদরা শুল্ককে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। এবার সুপ্রিম কোর্টের সাহায্যে আমরা সেগুলো দেশকে সমৃদ্ধ, শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান করতে কাজে লাগাব।'
সুপ্রিম কোর্টে রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় অনেকের ধারণা, সেখানে ট্রাম্পের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নয়জন বিচারপতির মধ্যে ছয়জন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টদের মনোনীত, যার মধ্যে তিনজনকে নিয়োগ দিয়েছিলেন ট্রাম্প নিজেই।
তবে আদালত অতীতে বিভিন্ন মামলায় প্রেসিডেন্টদের অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়ে সমালোচনামূলক অবস্থান নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বাইডেন প্রশাসনের জলবায়ু আইন ও শিক্ষাঋণ মওকুফের সিদ্ধান্ত আদালত বাতিল করেছিল।
এই রায় কেবল ট্রাম্পের আরোপিত 'পারস্পরিক শুল্ক'-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এর আওতায় চীন, মেক্সিকো, কানাডাসহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব বাণিজ্য অংশীদার থেকে আমদানি করা পণ্যে শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। এগুলো ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত বহাল থাকবে।
তবে স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম ও তামার ওপর শুল্ক অপরিবর্তিত থাকবে। কারণ এগুলো অন্য আইনের আওতায় আরোপ করা হয়েছিল।
রায় বহাল থাকলে যুক্তরাষ্ট্রকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের শুল্ক ফেরত দেওয়ার চাপ আসতে পারে। পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশের সঙ্গে ইতিমধ্যেই হওয়া চুক্তিগুলো নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। এতে চলমান বৈশ্বিক বাণিজ্য আলোচনাও অচলাবস্থায় পড়তে পারে।
অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্ট যদি ট্রাম্পের পক্ষে রায় দেয়, তবে তা হবে তার রাজনৈতিক অবস্থান ও নীতির বড় জয়। আর যদি বহাল থাকে, তবে তা হবে তার অর্থনৈতিক কর্মসূচির জন্য বড় ধাক্কা।