ইউক্রেন সংঘাতকে ‘মোদির যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করলেন ট্রাম্পের উপদেষ্টা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো ইউক্রেনে চলমান রুশ আগ্রাসনকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র 'মোদির যুদ্ধ' হিসেবে অভিহিত করেছেন। খবর বিবিসির।
গত বুধবার ভারতীয় পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর এ মন্তব্য করেন তিনি। অতিরিক্ত এই শুল্কারোপের ফলে দেশটির ওপর মোট শুল্ক হার দাঁড়াচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ। এ পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন দেশের ওপর যেসব শুল্ক হার আরোপ করেছে— এটি তার মধ্যে সর্বোচ্চ হারের একটি।
ভারতের ওপর এই চড়া শুল্কারোপের অন্যতম একটি কারণ হলো- সস্তায় রাশিয়া থেকে ভারতের অস্ত্র ও তেল কেনা, যা ইউক্রেন যুদ্ধ জিইয়ে রাখতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সাহায্য করছে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র।
ভারত এই শুল্ককে অন্যায্য আখ্যা দিয়ে বলেছে, তারা রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা কমাবে না। বরং দেশটি জোর দিয়ে বলেছে, ১৪০ কোটি মানুষের স্বার্থ রক্ষায় তেলের ক্ষেত্রে তারা সর্বোত্তম চুক্তি নিশ্চিত করবে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর আগে ভারতের তেল আমদানির মাত্র ২ শতাংশ সরবরাহ করত রাশিয়া। কিন্তু এখন সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫-৪০ শতাংশে।
ভারতের অভিযোগ, রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হলো চীন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর এ ধরনের বাড়তি শুল্ক আরোপ করেনি। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) এখনো রাশিয়ার সঙ্গে বড় ধরনের বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
ব্লুমবার্গ টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাভারো অতিরিক্ত শুল্কারোপের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'ভারত যা করছে, তাতে আমেরিকার সবার ক্ষতি হচ্ছে। ভোক্তা, ব্যবসা ও শ্রমিক সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ, ভারতের উচ্চ শুল্ক আমাদের চাকরি, কারখানা, আয় ও মজুরি কেড়ে নিচ্ছে। করদাতাদেরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে। কারণ, মোদির যুদ্ধের খরচ আমাদের বহন করতে হচ্ছে।'
আসলে নাভারো 'পুতিনের যুদ্ধ' বোঝাতে চাইছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমি মোদির যুদ্ধ বলছি। কারণ, শান্তির পথ আংশিক হলেও নয়াদিল্লির মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছে।'
তিনি আরও বলেন, ''আমাকে যে বিষয়টি সবচেয়ে ভাবাচ্ছে তা হলো, ভারতীয়দের ঔদ্ধত্য। তারা বলে, 'আমাদের শুল্ক তো বেশি নয়। এটা আমাদের সার্বভৌমত্ব। আমরা চাইলে যেকোনো জায়গা থেকে, যে কারো কাছ থেকে তেল কিনতে পারি।' ভারত, তুমি বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র, তাহলে গণতন্ত্রের মতো আচরণ করো।''
যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত এই শুল্কারোপ ভারতের রপ্তানিনির্ভর শিল্পে লাখ লাখ মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে ফেলবে। সবচেয়ে চিন্তায় রয়েছে পোশাক, তৈরি পোশাক, বস্ত্র, জুয়েলারি, রত্ন, গয়নাশিল্প, চিংড়ি মাছ ও সামুদ্রিক খাবার, কার্পেট, অটোমোবাইল খাত।