জলবায়ু পরিবর্তনের থাবায় এবার বিপন্ন কলা!

সস্তা ও পুষ্টিকর কলা দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষের প্রিয় ফল। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে শীঘ্রই বিশ্বব্যাপী কলার সরবরাহ হুমকির মুখে পড়তে পারে।
উষ্ণ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার মতো জলবায়ুর পরিবর্তন বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ফসলে রোগের সংক্রমণ বাড়াচ্ছে। কৃষি কোম্পানি ফ্রেশ ডেল মন্টের চেয়ারম্যান ও সিইও মোহাম্মদ আবু-গাজালে বলেন, 'এটি একরাতের মধ্যে ঘটেনি, বহু বছর ধরে চলছে।'
কলার দুটি পরিচিত রোগ—ব্ল্যাক সিগাটোকা এবং ট্রপিকাল রেস ৪—এখন বিশ্বের প্রধান উৎপাদন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে, যেমন কলম্বিয়া ও পেরু।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই রোগ আরও ছড়ালে সরবরাহে বড় প্রভাব পড়বে। আবু-গাজালে বলেন, 'এটি এমন একটি ধারা যা আরও দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। যদি এই রোগের কোনো সমাধান না হয়, তবে দুই-তিন দশকের মধ্যে সরবরাহ চেইনে বড় ব্যাঘাত দেখা দিতে পারে।'
বিশ্বব্যাপী কলা শিল্পে এক মিলিয়নের বেশি মানুষ কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত, এবং জলবায়ু সংকট তাদের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
'ন্যাচার ফুড' জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, উষ্ণ তাপমাত্রা ও অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে কলা চাষের উপযুক্ত জমির পরিমাণ ৬০ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে। বর্তমানে এই দুই অঞ্চল থেকে বিশ্বের মোট কলার ৮০ শতাংশ রপ্তানি করা হয়।
কলা বিশ্বের চতুর্থ প্রধান খাদ্য ফসল। দৈনিক চার কোটি মানুষ কলা থেকে তাদের ক্যালোরির ১৫ থেকে ২৭ শতাংশ পায়।
তবে কলা একমাত্র ঝুঁকিপূর্ণ ফসল নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভুট্টা, সয়াবিন, ধান ও গমের উৎপাদনও কমতে পারে।
ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ও ভোক্তা অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অ্যান্ড্রু হাল্টগ্রেন বলেন, 'খুব গরম দিন—এমনকি পুরো ফসলি মৌসুমে সামান্য সময়ের জন্য—একটি জমি থেকে উৎপাদিত ফলনে বড় ক্ষতি করতে পারে।'
জলবায়ুর প্রভাব কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার হ্রাস করা। হাল্টগ্রেন বলেন, 'এটি সম্ভব হলে বিশ্ব কৃষির ভবিষ্যৎ রক্ষা করা সম্ভব।'
কলার ঘাটতি মানে বাজারে শুধু জোগান কমাই নয়, এর দামও বাড়বে। হাল্টগ্রেন বলেন, 'যদি উৎপাদন কমে, দাম বাড়বে এবং ভোক্তারা এটি মুদ্রাস্ফীতির মতো অনুভব করবে।'
ইতোমধ্যে চলতি বছরে কলার দামও বেড়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্ক আরোপের পর মে মাসে দাম ৩.৩ শতাংশ বেড়েছে।
তবে কলা প্রেমীদের জন্য একটি ভালো খবরও আছে। আবু-গাজালে আশা করেন, আগামী এক দশকেও কলা সবচেয়ে সস্তা ফল হিসেবে থাকবে। তিনি বলেন, 'ভোক্তারা তুলনামূলকভাবে খুবই সস্তা একটি ফল উপভোগ করার সুযোগ পাবেন।'