ট্রাম্পকে নিয়ে পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠক হবে; ১০ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত হবে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে কিয়েভের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চূড়ান্ত হতে পারে।
এই প্রতিশ্রুতিকে তিনি 'একটি বড় অগ্রগতি' বলে উল্লেখ করেন। সোমবারের বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেন, 'আমাদের অংশীদাররা নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়গুলো খুলে দেখাবে। ধীরে ধীরে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।'
তিনি আরও জানান, আগামী এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এ নিশ্চয়তাগুলো লিখিতভাবে চূড়ান্ত করা হবে। একইসঙ্গে ইউক্রেন প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন অস্ত্র কেনার প্রস্তাব দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে সোমবার ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে বৈঠক আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি টেলিফোনে পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন। হোয়াইট হাউসে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক চলাকালীন তিনি এ ফোনালাপ করেন।
ট্রাম্প লিখেছেন, 'ওই বৈঠকের পর আমাদের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হবে। সেখানে দুই প্রেসিডেন্টের (পুতিন ও জেলেনস্কি) সঙ্গে আমি থাকব। আবারও বলছি, প্রায় চার বছর ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধের জন্য এটি একটি খুব ভালো ও প্রাথমিক পদক্ষেপ।'
তবে এ বৈঠক কবে, কোথায় অনুষ্ঠিত হবে, সে বিষয়ে কিছু জানাননি ট্রাম্প।
ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান চেষ্টার অংশ হিসেবে গত শুক্রবার আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর সোমবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব এবং ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুত্তে।
বৈঠক শেষে সোমবার রাতে সাংবাদিকদের জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস জানান, ভ্লাদিমির পুতিন আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে রাজি হয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে পুতিন এ সম্মতি জানিয়েছেন।
মের্ৎস বলেন, বৈঠকের স্থান এখনো নির্ধারণ হয়নি। তিনি জানান, এমন একটি শীর্ষ বৈঠকের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি প্রয়োজন। তবে পুতিন আসলেই বৈঠকে যোগ দেওয়ার 'সাহস দেখাবেন কি না', তা নিয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ করেন।
বৈঠক শেষে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ সাংবাদিকদের বলেছেন, হোয়াইট হাউসে সোমবারের বৈঠকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফল হলো ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়বস্তুতে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি।
তিনি বলেন, 'আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একমত হয়েছি, যা কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ আগে এতটা পরিষ্কার ছিল না।' ম্যাখোঁ আরও জানান, এর মধ্যে 'প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ' হলো নিরাপত্তা পরিকল্পনা আরও উন্নত করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি।
এদিকে হোয়াইট হাউসের বৈঠকের পরও শান্তিচুক্তি এখনও নাগালের বাইরে মনে হলেও জেলেনস্কি জানিয়েছেন, সোমবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার বৈঠক ছিল 'এখন পর্যন্ত সেরা'।
জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনো ধরনের আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। তবে ভূখণ্ড সংক্রান্ত বিষয় কেবল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই হবে। তিনি বলেন, 'ভূখণ্ডের প্রশ্নটা কেবল আমার আর পুতিনের মধ্যে সীমিত থাকবে।'
তিনি আরও জানান, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে একটি বড় অস্ত্র প্যাকেজ প্রয়োজন। এর মধ্যে যুদ্ধবিমান, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সহ অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র অন্তর্ভুক্ত থাকবে। জেলেনস্কি বলেন, 'আমাদের প্রস্তাবিত একটি প্যাকেজ আছে, যার মূল্য ৯০ বিলিয়ন ডলার।'
তিনি যোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এমন একটি সমঝোতাও হয়েছে—ইউক্রেন রপ্তানি শুরু করলে তারা ইউক্রেনীয় ড্রোন কিনবে। জেলেনস্কির ভাষায়, 'এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'