সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে অস্ট্রেলিয়া, একইপথে হাঁটতে পারে নিউজিল্যান্ড

আগামী সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবে অস্ট্রেলিয়া। সোমবার (১১ আগস্ট) এ তথ্য জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও কানাডার অনুরূপ ঘোষণার পর এ সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়াবে।
এক বিবৃতিতে আলবানিজ বলেন, "অস্ট্রেলিয়া আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে—যা দ্বিরাষ্ট্র সমাধান, গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।"
ক্যানবেরায় সাংবাদিকদের তিনি আরও বলেন, এ স্বীকৃতি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া কিছু অঙ্গীকারের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হবে, যার মধ্যে রয়েছে—ভবিষ্যতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সঙ্গে ইসলামপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকবে না।
আলবানিজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "দ্বিরাষ্ট্র সমাধানই মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতার চক্র ভাঙার এবং গাজায় সংঘাত, দুর্ভোগ ও দুর্ভিক্ষের অবসান ঘটানোর সর্বোত্তম মানবিক উপায় হতে পারে।"
তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলাপকালে তিনি তাকে বলেছেন, সমাধান হতে হবে রাজনৈতিক, সামরিক নয়।
অ্যান্থনি আলবানিজ তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওয়ংকে সঙ্গে নিয়ে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, "অবৈধ বসতি দ্রুত সম্প্রসারণ, অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড সংযুক্ত করার হুমকি এবং যেকোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্পষ্ট বিরোধিতার মাধ্যমে নেতানিয়াহু সরকার দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনা নষ্ট করছে।"
তিনি বলেন, শাসন সংস্কার, নিরস্ত্রীকরণ ও সাধারণ নির্বাচন আয়োজনে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অঙ্গীকার—পাশাপাশি গাজায় হামাসের শাসন শেষ করার আরব লীগের দাবি—একটি সুযোগ তৈরি করেছে।
"এটি হামাসকে বিচ্ছিন্ন করার একটি সুযোগ," তিনি যোগ করেন।
ওয়ং জানান, তিনি অস্ট্রেলিয়ার এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকেও অবহিত করেছেন।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সমর্থন দেওয়ার কানাডার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। রুবিও-ও ফ্রান্সের সিদ্ধান্তকে 'বেপরোয়া' বলে মন্তব্য করেছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত আমির মাইমোন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ অস্ট্রেলিয়ার এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছেন, এটি ইসরায়েলের নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন করবে এবং জিম্মিদের মুক্তির আলোচনাকে ব্যাহত করবে।
স্বীকৃতি দিতে পারে নিউজিল্যান্ডও
এদিকে নিউজিল্যান্ডও জানিয়েছে, তারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে নিজেদের অবস্থান বিবেচনা করছে।
সোমবার নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স জানিয়েছেন, তাদের দেশের মন্ত্রিসভা সেপ্টেম্বরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেবে।
এক বিবৃতিতে পিটার্স বলেন, "নিউজিল্যান্ডের ঘনিষ্ঠ কিছু অংশীদার ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আবার কেউ কেউ নেয়নি। তবে নিউজিল্যান্ডের নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি রয়েছে, এবং এই বিষয়ে আমরা সতর্কভাবে সব দিক বিবেচনা করব, তারপর নিউজিল্যান্ডের নীতি, মূল্যবোধ ও জাতীয় স্বার্থ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেব।"
তিনি আরও বলেন, নিউজিল্যান্ড বেশ কিছুদিন ধরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করছে। তবে এই বিষয়টি এখনও 'সহজ' বা 'পরিষ্কার' নয়।
তিনি বলেন, "ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নে আমাদের সরকার, সংসদ এবং সামগ্রিকভাবে নিউজিল্যান্ড সমাজে বিভিন্ন ধরনের দৃঢ় মতামত রয়েছে। এই জটিল বিষয়টি শান্তভাবে, সতর্কতার সঙ্গে এবং বিচক্ষণভাবে বিবেচনা করাই সঠিক হবে। আগামী এক মাসে আমরা এই বিস্তৃত মতামত পর্যালোচনা করব, তারপর মন্ত্রিসভায় তা প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে।"
জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৪৭টিই (বিশ্বের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ দেশ) ইতোমধ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে।