ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইতালিজুড়ে বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত ৬০

ফিলিস্তিনের সমর্থনে ডাকা ধর্মঘট ও বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ইতালি। দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী মিলানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষে অন্তত ৬০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগাল ও কানাডার পর ফ্রান্সসহ আরও কয়েকটি দেশ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তুতি নিলেও এই উদ্যোগ থেকে ইতালি এখন পর্যন্ত নিজেকে দূরে রেখেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি আগে বলেছিলেন যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে তাকে স্বীকৃতি দেওয়া 'পাল্টা ফল' দিতে পারে। তিনি বলেন, 'যদি কাগজে-কলমে এমন কিছুকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় যার অস্তিত্বই নেই, তবে সমস্যাটির সমাধান না হলেও মনে হতে পারে যে এর সমাধান হয়ে গেছে।'
সোমবার ইতালির ট্রেড ইউনিয়নগুলোর ডাকে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি জানাতে দেশজুড়ে প্রায় ৮০টি শহরে রাস্তায় নামেন হাজার হাজার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বন্দরকর্মী। মিলান ও রোমের প্রধান রেল স্টেশনগুলোর কাছে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। রোমের টারমিনি স্টেশনেই প্রায় ২০ হাজার বিক্ষোভকারী সমবেত হন।
তবে হঠাৎ মিলানের সেন্ট্রাল স্টেশনের বাইরে পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীরা গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পতাকায় আগুন ধরিয়ে দেন। একপর্যায়ে তারা স্টেশনে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। কালো পোশাক পরা একদল বিক্ষোভকারী পুলিশের দিকে পাথর, স্মোক বোমা ও ধাতব বস্তু ছুড়তে শুরু করে। বোলোনিয়া শহরে বিক্ষোভকারীরা প্রধান সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ধর্মঘটের কারণে দেশজুঙে গণপরিবহন ও বন্দরের কার্যক্রমে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। 'ফ্রি প্যালেস্টাইন' এবং 'ব্লক এভ্রিথিং' লেখা স্লোগান নিয়ে বিক্ষোভকারীরা রাজপথ মুখর করে তোলেন।
মিলানের ঘটনাকে 'লজ্জাজনক' বলে অভিহিত করে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, 'এই সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে সংহতির কোনো সম্পর্ক নেই। এটি গাজার মানুষের জীবনে কোনো পরিবর্তন আনবে না।'
তবে গাজা ইস্যুতে সুস্পষ্ট অবস্থান না নেওয়ায় নিজ দেশেই সমালোচিত হচ্ছেন মেলোনি। ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা এলি শ্লেইন অভিযোগ করেন, যখন যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছিল, তখন ইতালির প্রধানমন্ত্রী টেলিভিশনে তার প্রিয় খাবার নিয়ে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন।
ইতালির এই উত্তাল পরিস্থিতির দিনেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি এই পদক্ষেপকে একটি 'প্রয়োজনীয়তা' এবং 'শান্তি প্রক্রিয়ার সূচনা' বলে বর্ণনা করেছেন। ফ্রান্সের এই সিদ্ধান্তকে বেলজিয়াম, মাল্টার মতো দেশগুলো সমর্থন করলেও জি-৭ এর অন্য দুই প্রভাবশালী দেশ ইতালি ও জার্মানি এখনো এই পথে হাঁটেনি।
ফ্রান্সের এই পদক্ষেপে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। তারা এটিকে 'হামাসের জন্য পুরস্কার' বলে অভিহিত করেছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত এই ঘটনাকে 'সার্কাস' বলে কটাক্ষ করেন। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, জর্ডান নদীর পশ্চিমে কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হবে না।
তবে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারো বলেছেন, এই স্বীকৃতি হামাসকে 'সুস্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান' করার শামিল এবং এটি ফ্রান্সের জন্য একটি 'বড় কূটনৈতিক বিজয়'।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জার্মানি ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও সাম্প্রতিক সময়ে গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের সমালোচনা করেছে। তবে দেশটি জানিয়েছে, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি এখনই আলোচনার টেবিলে নেই। তাদের মতে, এটি শান্তি প্রক্রিয়ার শেষের দিকের ধাপ, যদিও সেই প্রক্রিয়া এখনই শুরু হওয়া উচিত।