আক্রান্ত হাজার হাজার: নেট, জরিমানা ও ড্রোন দিয়ে চিকুনগুনিয়ার বিরুদ্ধে লড়ছে চীন

চীনা কর্তৃপক্ষ মশাবাহিত চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে নেট ব্যবহার করছে, কীটনাশক ছিটাচ্ছে, এমনকি ড্রোনও মোতায়েন করছে। এই ভাইরাসে ইতোমধ্যে হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।
বুধবার পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাত হাজারের বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তদের বেশিরভাগই হংকং থেকে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার (১০৫ মাইল) দূরের দক্ষিণ চীনের শিল্পনগরী ফোশানের। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন সংক্রমণের হার ধীরে ধীরে কমছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সিজার লোপেজ-ক্যামাচোর মতে, এটি সম্ভবত চীনে কখনো রেকর্ড করা সবচেয়ে বড় চিকুনগুনিয়া প্রাদুর্ভাব। এই ভাইরাসটি সংক্রমিত মশার মাধ্যমে ছড়ায় এবং এতে জ্বর ও গাঁটে ব্যথা হতে পারে।
লোপেজ-ক্যামাচো এক বিবৃতিতে বলেন, 'এই ঘটনাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে এই কারণে যে, আগে কখনো চীনের মূল ভূখণ্ডে চিকুনগুনিয়া ভাইরাস ছড়ায়নি। এর মানে হলো, অধিকাংশ মানুষের শরীরে পূর্বে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ছিল না, ফলে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছে।'
চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখা গেছে, কর্মীরা শহরের রাস্তা, আবাসিক এলাকা, নির্মাণস্থল এবং অন্যান্য জায়গায় কীটনাশক ছিটাচ্ছেন—যেখানে মানুষ মশার সংস্পর্শে আসতে পারে।
কিছু জায়গায় অফিস ভবনে ঢোকার আগেও কীটনাশক ছিটানো হয়।
চীনে অস্বাভাবিকভাবে ভারি বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা এই সংকটকে আরও গুরুতর করে তুলেছে।
কর্তৃপক্ষ ড্রোন ব্যবহার করছে জমে থাকা পানির উৎস খুঁজে বের করতে—কারণ সেখানেই মশা ডিম পাড়ে।
কর্তৃপক্ষ হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যদি কেউ বাইরের পাত্রে জমে থাকা পানি পরিষ্কার না করেন, তাহলে তাদের জরিমানা করা হতে পারে।
এই অপরাধে বাসিন্দাদের সর্বোচ্চ ১০ হাজার ইউয়ান (১,৪০০ ডলার) পর্যন্ত জরিমানা এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার শাস্তি হতে পারে।
ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের কারণে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের গুয়াংডং প্রদেশ—যেখানে ফোশান অবস্থিত—সহ বলিভিয়া এবং ভারত মহাসাগরের কয়েকটি দ্বীপরাষ্ট্রে ভ্রমণের ক্ষেত্রে আমেরিকান নাগরিকদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে।
২০০৩ সালের সার্স প্রাদুর্ভাবের পর থেকে চীন ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় দেশটি আরও কঠোর কৌশল অবলম্বন করেছিল।
এই প্রাদুর্ভাবে, ফোশানে আক্রান্ত রোগীদের কমপক্ষে এক সপ্তাহ হাসপাতালে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে।
প্রথমে দুই সপ্তাহের হোম কোয়ারেন্টাইন জারি করা হলেও পরে তা বাতিল করা হয়, কারণ চিকুনগুনিয়া রোগটি ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়ায় না।
চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে কিছু ব্যতিক্রমী উদ্যোগের খবরও পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে মশার লার্ভা খাওয়া মাছ এবং এমনকি ভাইরাস বহনকারী মশা খাওয়া বড় আকৃতির মশা ছেড়ে দেওয়া।
জাতীয় পর্যায়ে কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন এবং নানা প্রটোকল গ্রহণ করেছেন, যা প্রমাণ করে যে চীন এই প্রাদুর্ভাব নির্মূল করতে এবং জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনা এড়াতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।