'কমিউনিস্ট' মামদানি মেয়র হলে নিজেই নিউইয়র্ক চালাবেন, হুমকি ট্রাম্পের

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে মুসলিম ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রার্থী জোহরান মামদানি জিতে গেলে সরাসরি হোয়াইট হাউস থেকে শহরটি 'চালানোর' হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিউইয়র্কবাসী যদি 'একজন কমিউনিস্ট' মেয়র বেছে নেয়, তাহলে তিনি নিজেই শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেন—এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
হোয়াইট হাউসের 'অসাধারণ ক্ষমতা'র কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, 'আমাদের অনেক ক্ষমতা আছে, প্রয়োজনে আমরা বিভিন্ন জায়গা চালাতে পারি।'
তবে যাকে লক্ষ্য করে এসব মন্তব্য—জোহরান মামদানি—তিনি কোনো কমিউনিস্ট নন। বরং, তিনি একজন ডেমোক্রেটিক সোশালিস্ট, যিনি সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ও কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজের আদর্শের অনুসারী।
ট্রাম্পের কাছে মামদানি যেন এক আদর্শ 'খলনায়ক'—যার মাধ্যমে তিনি দেখাতে চান, ডেমোক্রেটিক পার্টি এখন পুরোপুরি 'উগ্র বামপন্থীদের' দখলে। এই বয়ান জোরদার করতে গিয়ে ট্রাম্প মামদানিকে কটাক্ষ করে বলেন, 'এই লোকটার তেমন কোনো যোগ্যতা নেই, শুধু একটা ভালো ভাঁওতাবাজির ভাষা আছে।'
এমনকি, কোনো ভিত্তি ছাড়াই মামদানির নাগরিকত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট ওবামার জন্ম নিয়ে পূর্বের 'বার্থার' ষড়যন্ত্রের মতোই, এবার মামদানিকেও অবৈধ অভিবাসী হিসেবে সন্দেহ ছড়ানোর চেষ্টা করেন তিনি।
সিএনএনের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, নিউইয়র্কবাসী কাকে মেয়র নির্বাচিত করবেন, সে পছন্দের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্টের এমন হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যবস্থার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল।
ব্রেনান সেন্টার ফর জাস্টিসের প্রেসিডেন্সিয়াল পাওয়ার বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ গয়েটিন বলেন, 'মেয়র পছন্দ না হওয়ায় কোনো শহরের নির্বাচিত সরকারকে বাতিল করার কোনো আইনি সুযোগ প্রেসিডেন্টের নেই। কোনো জরুরি ক্ষমতার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট একটি শহর দখল করতে পারেন না।'
ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি ১৮০৭ সালের 'ইনসারেকশন' আইন ব্যবহার করতে পারেন, যার মাধ্যমে বিদ্রোহ বা বিশৃঙ্খলার সময় ফেডারেল সেনা মোতায়েনের সুযোগ আছে। তবে, শুধুমাত্র কোনো পছন্দ না হওয়া মেয়র নির্বাচিত হওয়ার কারণে এ আইনের প্রয়োগের কোনো নজির নেই।
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনওয়াইইউ) অধ্যাপক ডোমিঙ্গো মোরেল বলেন, ট্রাম্প নিউইয়র্কবাসীর উদ্দেশে মূলত এই বার্তাই দিচ্ছেন: 'তোমাদের ভোটে কিছু যায় আসে না; আমাদের পছন্দ না হলে আমরা তোমাদের শাসনের অধিকার কেড়ে নেব।'
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এসব বক্তব্য হয়তো রাজনৈতিক চমক হিসেবেই রয়ে যাবে। তবে, অতীতে তার কর্মকাণ্ড বলে দেয়, এ ধরনের হুমকিকেও হালকাভাবে নেওয়া ঠিক হবে না। তিনি এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যুদ্ধকালীন আইন ব্যবহার করে সীমান্ত দেয়ালের জন্য বাজেট পুনর্নির্দেশ করেছিলেন এবং অভিবাসন নীতিতে সমর্থন আদায়ে বিভিন্ন রাজ্যকে চাপ দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, জোহরান মামদানি তার মূল রাজনৈতিক অবস্থান থেকে একচুলও সরেননি। নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিতে নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি গৃহনির্বাসিতদের অধিকার, ভাড়াটিয়াদের সুরক্ষা ও ধনীদের ওপর কর বাড়ানোর মতো ইস্যুতে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তন, আবাসন সংকট ও অর্থনৈতিক সমতার দাবিতে গড়ে ওঠা এক তরুণ, তৃণমূল ভিত্তিক আন্দোলনের তিনি অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছেন।