বিয়ের মাত্র ১০ দিনেই ওলট-পালট সবকিছু: দিয়েগো জোতা ও রুতে কারদোসোর মর্মান্তিক গল্প

অথচ সেদিন পুরো পর্তুগালজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে থাকার কথা ছিল দীর্ঘ বিলম্বের পর শুরু হওয়া দুর্নীতির মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী জোসে সক্রেটিসের বিচার কার্যক্রম। কিন্তু ঠিক সেদিনই দেশবাসীকে স্তব্ধ করে দেয় এক আকস্মিক দুর্ঘটনা।
মাত্র ২৮ বছর বয়সে স্পেনে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান পর্তুগিজ ফুটবলার দিয়েগো জোতা। বিয়ের মাত্র দুই সপ্তাহ পর প্রাণ হারান এই লিভারপুল ফরোয়ার্ড।
জোতার মৃত্যুর খবরের জন্য প্রস্তুত ছিল না কেউই, বিশেষ করে সদ্যবিবাহিতা রুতে কারদোসো। বিয়ের মাত্র ১০দিনের মাথায় নিজের জীবনের সঙ্গীকে হারান তিনি। গত মাসের ২২ জুন রবিবার, পোর্তোতে দিয়োগো জোতার সঙ্গে বিয়ে হয় তার।
তারা সদ্য বিয়ে করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু সম্পর্কটা ছিল বহু বছরের। একসঙ্গে গড়েছেন পরিবার, রয়েছে তিন সন্তানও।
তাদের গল্প শুরু হয়েছিল স্কুলজীবনে, হঠাৎ করেই। অনেক বাধা পেরিয়ে, কৈশোরের উথাল-পাথাল সময়েও সে সম্পর্ক টিকে ছিল।
পর্তুগালের উত্তরের ছোট্ট শহর গনদোমার—মাত্র ২৫ হাজার মানুষের বসবাস সেখানে। সেখানকার একটি হাইস্কুলে সহপাঠী ছিলেন দিয়োগো জোতা ও রুতে কারদোসো।

মাত্র ১৯ বছর বয়সে দিয়োগো জোতা ও রুতে কারদোসো একসঙ্গে মাদ্রিদে পাড়ি দেন, যেখানে জোতা শুরু করেন তার আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ার, আতলেতিকো দে মাদ্রিদের সঙ্গে।
তবে সেখানে খুব বেশি দিন থাকেননি। প্রাক-মৌসুম অনুশীলন শেষ হওয়ার আগেই ক্লাবটি তাকে পাঠিয়ে দেয় পোর্তোতে। ২০১৬-১৭ মৌসুমে পোর্তোর হয়ে খেলেন তিনি, করেন ৯টি গোল।
আতলেতিকো মূলত খেলোয়াড় হিসেবে নয়, আর্থিক দিক বিবেচনায় জোতাকে দলে নিয়েছিল। পরের বছর তাকে আবার ধারে পাঠানো হয় ইংলিশ ক্লাব উলভারহ্যাম্পটনে। সেখানেই বিকশিত হয় তার প্রতিভা, আর সেখান থেকেই লিভারপুলের নজরে আসেন তিনি।
লিভারপুলে ফেরার পথে দিয়োগো জোতার সঙ্গে ছিলেন তার ভাই আন্দ্রে সিলভা, যিনি নিজেও পেশাদার ফুটবলার। স্পেনের জামোরার কাছে এ-৫২ মহাসড়কে দ্রুতগতিতে চলার সময় তাদের ল্যাম্বরগিনি গাড়ির চাকা ফেটে যায় এবং মুহূর্তেই গাড়িটিতে আগুন ধরে যায়।
চিকিৎসকের পরামর্শে তারা বিমানের বদলে গাড়িতে ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কারণ, কিছুদিন আগে ফুসফুসে আঘাতজনিত একটি অস্ত্রোপচার করিয়েছিলেন জোতা। চিকিৎসা নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, রক্তচাপের পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি এড়াতে বিমানভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে।
কথা ছিল, গাড়ি করে স্পেনের সান্তান্দার শহরে গিয়ে সেখান থেকে ফেরিতে ইংল্যান্ডের পোর্টসমাউথে যাবেন। সেখান থেকে আরও প্রায় ৪৩০ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে লিভারপুলে ফিরে যোগ দেবেন ক্লাবের প্রাক-মৌসুম অনুশীলনে, যা শুরু হওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার।
কিন্তু জোতার মর্মান্তিক দুর্ঘটনা থামিয়ে দেয় সবকিছু—থেমে যায় লিভারপুলের অনুশীলনের প্রস্তুতি, জীবনসঙ্গীকে নিয়ে রুত কারদোসোর ভবিষ্যতের সব স্বপ্ন, আর চিরতরে থেমে যায় দিয়োগো জোতার জীবন। জোতার অকালপ্রয়াণ মুহূর্তেই পরিণত হয় জাতীয় শোকে।
পর্তুগালের রাষ্ট্রপতি রেবেলো দ্য সুজা আগামী শুক্রবার দেশটির সাবেক উপনিবেশ কেপ ভার্দের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সেখানে সফরে যাচ্ছেন। তবে শেষকৃত্য যদি আজ রোববার হয়, তাহলে তিনি আগেভাগেই দেশে ফিরে আসার কথা বিবেচনা করছেন, দিয়োগো জোতার প্রতি আনুষ্ঠানিক কৃতজ্ঞতা জানাতে।
তার ভাষায়, জোতা 'পর্তুগালকে যেসব আনন্দ ও গর্বের মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন', সেগুলোর প্রতি সম্মান জানাতেই এই সিদ্ধান্ত।
তিনি আরও বলেন, জোতার মধ্যে এক ধরণের 'নম্রতা' ছিল, যা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলতো।
গনদোমার—যেখানেই দিয়োগো জোতার জন্ম, শৈশবের খেলাধুলা, আর রুত কারদোসোর সঙ্গে পরিচয়—সেই শহরে তার ও তার ভাইয়ের মৃত্যুতে একদিনের সরকারি শোক পালন ঘোষণা করা হয়েছে।
২০২২ সালে নিজ শহরের 'গনদোমার স্পোর্ট ক্লাব'-এ নিজের নামে একটি ফুটবল একাডেমি উদ্বোধন করেছিলেন জোতা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়েছিল তার প্রেরণাদায়ী এক উক্তি, 'আমরা কোথা থেকে আসছি তা নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো আমরা কোথায় যাচ্ছি।'