হরমুজ প্রণালীমুখী ট্যাঙ্কারগুলো ইউ-টার্ন নিচ্ছে, রুট পরিবর্তন করছে অথবা থেমে অপেক্ষা করছে
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ার পর হরমুজ প্রণালীর কাছে অন্তত দুটি সুপারট্যাঙ্কার ইউ-টার্ন নিয়েছে।
ইরানে মার্কিন সামরিক হামলার পর এমন ঘটনা ঘটেছে বলে শিপ-ট্র্যাকিং তথ্য থেকে জানা গেছে। সংঘাতের আশঙ্কায় বেশ কিছু ট্যাঙ্কার গতি বাড়ানো, থেমে যাওয়া বা রুট পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানে হামলায় যুক্ত হওয়ায় আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, ইরানও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করতে পারে।
ইরান ও ওমানের মাঝখানের এই প্রণালী দিয়ে বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ তেল ও গ্যাস সরবরাহ হয়ে থাকে।
এই পরিস্থিতিতে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছোঁয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
সোমবার ব্রেন্ট ও ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুডের দাম পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে। একইসঙ্গে, ২০ লাখ ব্যারেল তেল বহনে সক্ষম সুপারট্যাঙ্কারের দৈনিক ভাড়া এক সপ্তাহে দ্বিগুণ বেড়ে ৬০ হাজার ডলারের বেশি হয়েছে।
ভিএলসিসি 'কসউইজডম লেক' রোববার হরমুজ প্রণালীতে প্রবেশ করে ইউ-টার্ন করে দক্ষিণে চলে যায়। সোমবার এটি আবার দিক পরিবর্তন করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জিরকু বন্দরের দিকে যেতে শুরু করে। একইভাবে, 'সাউথ লয়্যালটি' নামের আরেকটি সুপারট্যাঙ্কারও প্রণালী থেকে ফিরে গেছে।
'কসউইজডম লেক' জিরকু বন্দর থেকে চীনের উদ্দেশে তেল নিতে যাওয়ার কথা। এটি ছিল চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান সিনোপেকের ট্রেডিং শাখা ইউনিপেকের চার্টার্ড ট্যাঙ্কার। তবে সিনোপেক তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক সেনটোসা শিপব্রোকারস জানায়, মে মাসের শুরু থেকে উপসাগরে খালি ট্যাঙ্কার প্রবেশ ৩২ শতাংশ ও পূর্ণ ট্যাঙ্কারের প্রস্থান ২৭ শতাংশ কমেছে।
রুট পরিবর্তন ও থেমে অপেক্ষা করা
শিপ-ট্র্যাকিং তথ্য অনুযায়ী, ট্যাঙ্কারগুলো এখন ওমানের উপকূলঘেঁষে চলাচল করছে এবং ইরানি পতাকাবাহী জাহাজগুলো ইরানের জলসীমা ব্যবহার করছে।
এছাড়া কয়েকটি জাহাজ, যেমন- 'কোহজান মারু', 'রেড রুবি' ও 'মেরি সি' হরমুজের পথে ছিল; পরে দিক পরিবর্তন করে ফুজাইরাহ বন্দরের বাইরে নোঙর করেছে।
'কসউইজডম লেক' ২২ জুন জিরকু বন্দরে তেল নিতে যাওয়ার জন্য প্রণালীর বাইরে অপেক্ষা করছিল। সবগুলো জাহাজই লোডিংয়ের উদ্দেশে রওনা হয়েছে।
তাইওয়ানের ফরমোসা পেট্রোকেমিক্যাল কর্পোরেশনের মুখপাত্র জানান, নিরাপত্তাজনিত কারণে জাহাজগুলো কেবল লোডিংয়ের আগ মুহূর্তে প্রণালীতে প্রবেশ করছে।
জাপানের নিপ্পন ইউসেন ও মিতসুই ওএসকে লাইনস জানায়, তারা এখনও হরমুজ প্রণালী ব্যবহার করছে; তবে জাহাজগুলোকে উপসাগরে অবস্থান কমাতে বলা হয়েছে।
তেল ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, তাদের শিপিং দেরির জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
আইন সংস্থা ক্লাইড অ্যান্ড কো'র অংশীদার বলেন, সরবরাহ ও রুটে বৈচিত্র্য আনা এবং লোহিত সাগরের এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইরানের পার্লামেন্ট হরমুজ প্রণালী বন্ধের একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে, তবে এটি কার্যকর করতে হলে সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের অনুমোদন লাগবে। এর আগেও ইরান বহুবার এমন হুমকি দিলেও কখনো তা কার্যকর করেনি।
