লস অ্যাঞ্জেলেসে টানা দ্বিতীয় রাতের কারফিউ, ট্রাম্পের অভিবাসন অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র

দ্বিতীয় রাতের মতো কারফিউ জারি হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের কিছু অংশে। স্থানীয় সময় রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত এই কারফিউ কার্যকর থাকবে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই এলাকায় ১০১ ফ্রিওয়ের র্যাম্পগুলোতে ওঠানামাও বন্ধ রাখা হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন ব্যাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে লিখেছেন, এই কারফিউ 'প্রেসিডেন্টের বিশৃঙ্খল অবস্থানকে কাজে লাগানো উচ্ছৃঙ্খলদের' দমন করতেই জারি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, 'আপনি যদি ডাউনটাউন এলএ-তে বসবাস না করেন বা কাজের প্রয়োজন না থাকে, তাহলে ওই এলাকা এড়িয়ে চলুন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্দেশনা মেনে চলুন। ভাঙচুর ও সহিংসতা বরদাশত করা হবে না।'
বুধবার রাতে কারফিউ কার্যকর হওয়ার আগেই ডাউনটাউন লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভকারীদের আটক করতে দেখা গেছে পুলিশকে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সিএনএনের প্রতিবেদকরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রাত ৮টা থেকে কারফিউ শুরুর এক ঘণ্টা আগে সিটি হলের সামনে বিক্ষোভকে 'অবৈধ সমাবেশ' ঘোষণা করে পুলিশ। এরপর জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ব্যবহার করতে দেখা যায়। একইসঙ্গে ঘোড়ায় চড়ে থাকা পুলিশ সদস্যদের বিক্ষোভকারীদের দিকে অগ্রসর হতে দেখা যায়।
এর আগে লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ বিভাগের (এলএপিডি) সেন্ট্রাল ডিভিশন এক্স-এ জানায়, বিক্ষোভকারীরা সিটি হলের দিকে মিছিল করার সময় 'পুলিশ সদস্যদের দিকে পেশাদার মানের আতশবাজি ও পাথর ছুঁড়েছে।'
সিএনএনের সংবাদদাতা নিক ওয়াট জানান, কারফিউ শুরু হওয়ার আগেই ২০ থেকে ৩০ জনকে আটক করতে দেখেছেন তিনি।
সিএনএনের ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের হাতে আটক ব্যক্তিদের হাত পিছনে প্লাস্টিকের টাই দিয়ে বাঁধা অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
শহরটিতে শুক্রবার থেকে আইসিই-বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই এলএপিডি কর্তৃক গ্রেপ্তারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ইতোমধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার ও লস অ্যাঞ্জেলেস সীমানা পেরিয়ে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আরও কয়েকটি শহরে। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)-এর ছয়টি অঙ্গরাজ্যে অভিযান পরিচালনার প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ আজ জানিয়েছেন, ক্যালিফোর্নিয়ায় বিক্ষোভ মোকাবিলায় ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের যে নির্দেশ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দিয়েছেন, তা অন্যান্য রাজ্যেও প্রয়োগ করা হতে পারে।
প্রধান অঙ্গরাজ্যগুলোর সর্বশেষ পরিস্থিতি:
জর্জিয়া:
অ্যাটলান্টার উপশহর ব্রুকহ্যাভেনে আইসিই অভিযানের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ।
ইলিনয়:
শিকাগোয় মঙ্গলবারের বিক্ষোভে ১৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
টেক্সাস:
সান অ্যান্টোনিওতে আজ রাত থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। রাজ্যের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট জানিয়েছেন, সারা সপ্তাহ ও সপ্তাহান্তে পরিকল্পিত বিক্ষোভ সামনে রেখে টেক্সাস ন্যাশনাল গার্ড বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন হচ্ছে। হিউস্টনের মেয়র জন হুইটমায়ার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের আহ্বান জানিয়েছেন।
নিউইয়র্ক:
বুধবার নিউইয়র্ক সিটির ফোলি স্কয়ারে প্রায় ২০০ বিক্ষোভকারী জড়ো হয়েছেন। দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ পোশাক পরা পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে এবং কিছু গ্রেফতারের দৃশ্যও দেখা গেছে। মঙ্গলবার রাতেও শহরে অন্য এক আইসিই বিরোধী বিক্ষোভ থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়।
মিসৌরি:
সেন্ট লুইসে আজ দুটি ছোট পরিসরের বিক্ষোভ হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম কেএসডিকেএ।
কলোরাডো:
ডেনভারের মেয়র মাইক জনসন সিএনএন-কে জানিয়েছেন, ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে শহরে 'প্রায় প্রতি সপ্তাহেই' বিক্ষোভ হচ্ছে। তিনি জানান, গত রাতের বিক্ষোভ সফলভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে এবং পুলিশ পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে।
ইন্ডিয়ানা:
এনবিএ ফাইনাল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা যেই এলাকায়, সেখানেই আজ রাতে ট্রাম্পের আইসিই অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে আন্দোলনকারীদের। খবর দিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডব্লিউটিএইচআর।
অন্যান্য শহর:
লাস ভেগাস, ফিলাডেলফিয়া, মিলওয়াকি, সিয়াটল, বোস্টন এবং ওয়াশিংটন ডিসিতেও অভিবাসনবিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এই বিক্ষোভগুলোতে গ্রেপ্তার ও সংঘর্ষের খবর মিলছে, তবে অনেক শহরেই স্থানীয় প্রশাসন শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের আহ্বান জানিয়ে চলেছে।
এদিকে নিউইয়র্কে নিজের বইয়ের প্রচারণা অনুষ্ঠানে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইচ্ছাকৃতভাবে এই ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করেছেন, যেন ক্যালিফোর্নিয়ার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে পারেন।'
গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভ দমন করতে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসামের আপত্তি উপেক্ষা করে লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের নির্দেশ দেন।
এ নিয়ে গভর্নর নিউসাম মঙ্গলবার বলেন, 'গণতন্ত্রের ওপর হামলা এখন আমাদের চোখের সামনেই হচ্ছে—যে মুহূর্তটি আমরা আশঙ্কা করছিলাম, তা অবশেষে এসে গেছে।'