যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য চুক্তিতে অগ্রগতি, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ শিথিলে সম্মত দুই দেশ

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে দুই দিনব্যাপী টানটান উত্তেজনাপূর্ণ আলোচনা শেষে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের কর্মকর্তারা ঘোষণা দিয়েছেন—দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য বিরোধ নিরসনে একটি কাঠামোগত সমঝোতায় পৌঁছেছেন তারা। এর আওতায় চীনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানির ওপর থাকা বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে এবং দ্বিপাক্ষিক শুল্ক যুদ্ধ আপাতত বন্ধ থাকবে।
এর আগে জেনেভায় উভয় দেশের প্রেসিডেন্টদের (ডোনাল্ড ট্রাম্প-শি জিনপিং) মধ্যে হওয়া সমঝোতাকে কার্যকর রূপ দিতেই এই কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। আজ বুধবার (১১ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লাটনিক বলেন, "এতে আমরা চুক্তিটিকে দৃশ্যমান রূপ দিতে পারছি।" তবে সমঝোতার বিস্তারিত তিনি প্রকাশ করেননি।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক শুল্ক এখন তিন অঙ্কের অবিশ্বাস্য হারে পৌঁছেছে। গতমাসে জেনেভায় ট্রাম্প ও শি জিনপিং এটি স্থগিত রাখার বিষয়ে একমত হয়েছিলেন।
চীনের উপবাণিজ্যমন্ত্রী লি চেংগাং জানান, এই কাঠামোগত চুক্তিটি এখন অনুমোদনের জন্য উভয় দেশের রাষ্ট্রপতিদের সামনে উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন মিললে তা বাস্তবায়ন শুরু হবে।
চুক্তি অনুযায়ী, চীন দুর্লভ খনিজ ও চুম্বকীয় পদার্থের রপ্তানিতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের ওপর আরোপিত রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ শিথিল করবে। এর আওতায় সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন সফটওয়্যার, উড়োজাহাজ যন্ত্রাংশসহ বেশ কিছু উচ্চপ্রযুক্তি পণ্যের চীনে রপ্তানি পুনরায় চালু হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই চুক্তি হয়তো চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য উত্তেজনা পুরোপুরি কমাবে না, তবে অন্তত দুশ্চিন্তার কিছুটা অবসান ঘটাবে। থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র পরিচালক জোশ লিপস্কি বলেন, "তারা হয়তো আবার (আলোচনার) শুরুতে ফিরে এসেছে, কিন্তু অন্তত শূন্য থেকে তা করতে হয়নি।"
এই চুক্তির মাধ্যমে আপাতত চীনের রপ্তানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ১৪৫ শতাংশ শুল্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির ওপর চীনের আরোপিত ১২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক এড়ানো যাবে। তবে এই বিরতির সময়সীমা ১০ আগস্ট পর্যন্ত—এর মধ্যে আরও বিস্তৃত চুক্তি না হলে উচ্চহারের এই শুল্ক আবারও কার্যকর হবে।
বাজারের প্রতিক্রিয়া সতর্ক
ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে সমঝোতার খবরে বিশ্ববাজার কিছুটা ইতিবাচক সাড়া দিলেও বিনিয়োগকারীরা ছিলেন সতর্ক। যেমন এমএসসিআই এশিয়া-প্যাসিফিক শেয়ার সূচক ০.৫৭ শতাংশ বেড়েছে। পেপারস্টোন রিসার্চের প্রধান ক্রিস ওয়েস্টন বলেন, "এখানে মূল বিষয় হলো—চুক্তির বিস্তারিত দিকগুলো এবং চীনের দুর্লভ খনিজের রপ্তানির পরিমাণ, যা মার্কিন প্রযুক্তি খাতের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।"
চীনের কিছু কোম্পানি ইতোমধ্যেই দুর্লভ খনিজ রপ্তানির নতুন অনুমোদন পেয়েছে বলে জানিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জেএল ম্যাগ রেয়ার-আর্থ, ইনুভো টেকনোলজি, এবং বেইজিং ঝং কুসান হুয়ান উল্লেখযোগ্য।