হাভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা স্থগিত করলেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন বা এক্সচেঞ্জ [বিনিময়] প্রোগ্রামে অংশ নিতে আগ্রহী বিদেশি শিক্ষার্থীদের দেশটিতে প্রবেশের ওপর প্রাথমিকভাবে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। খবর বিবিসির।
বুধবার (স্থানীয় সময়) এ সংক্রান্ত একটি সরকারি আদেশ জারি করে ট্রাম্প জানান, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার মতে, হাভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি এখন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী।
রয়টার্স জানিয়েছে, হাভার্ড এই সিদ্ধান্তকে 'প্রতিশোধমূলক' আখ্যা দিয়ে বলেছে, তারা তাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে এবং তাদের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ট্রাম্পের এ পদক্ষেপ হাভার্ডের সঙ্গে তার প্রশাসনের চলমান আইনি দ্বন্দ্বের আরেকটি ধাপ। গত এপ্রিল থেকে হোয়াইট হাউসের একাধিক দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি।
গত সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস)-কে হাভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরপরই ট্রাম্পের এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলো।
নিধেধাজ্ঞায় ট্রাম্প অভিযোগ করেন, হাভার্ডের সঙ্গে কিছু বিদেশি রাষ্ট্রের 'জটিল সম্পর্ক' গড়ে উঠেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়টি তার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নাগরিক অধিকারকে উপেক্ষা করছে।
তিনি বলেন, 'এই প্রেক্ষাপটে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি—যেসব বিদেশি নাগরিক শুধুমাত্র হাভার্ডে পড়ার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আসতে চান, তাদের প্রবেশ সাময়িকভাবে সীমিত করা জরুরি।'
এই আদেশ অনুযায়ী, শুধু নতুন শিক্ষার্থীদের ভিসা স্থগিত নয়, যারা ইতোমধ্যে হাভার্ডে পড়ছেন, তাদের বিদ্যমান ভিসা বাতিল করার বিষয়েও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিবেচনা করতে বলা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে ছয় মাসের জন্য জারি করা হলেও এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের দাবি, হাভার্ড ডিএইচএস-এর কাছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের 'অবৈধ বা বিপজ্জনক কর্মকাণ্ডের' পর্যাপ্ত তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং মাত্র তিনজন শিক্ষার্থীর তথ্যই দেওয়া হয়েছে।
হাভার্ডের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি প্রশাসনের আরও একটি অবৈধ ও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সংশোধনী অধিকার লঙ্ঘন করে।
ট্রাম্প সরকার হাভার্ডের বিলিয়ন ডলারের সরকারি তহবিল আটকে দেয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে ক্যাম্পাসে 'ইহুদি বিরোধী মনোভাব' দমন করতে ব্যর্থ বলেও অভিযুক্ত করে। এরপরই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে।
গত মাসে ডিএইচএস সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোম হাভার্ডকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানোর জন্য প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেশন বাতিল করে দেন। তবে আদালতের রায়ে তা দ্রুত স্থগিত হয়ে যায়।
গত বৃহস্পতিবার আরেক বিচারক এ সিদ্ধান্তের পক্ষে রায় দিয়ে বলেন, আইনি প্রক্রিয়া চলাকালে হাভার্ডে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন অব্যাহত রাখতে তিনি দীর্ঘমেয়াদি নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করবেন।
কিন্তু ট্রাম্পের নতুন ঘোষণার ফলে হাভার্ডে অধ্যয়নরত প্রায় ৭ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ ফের অনিশ্চয়তায় পড়েছে। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে হাভার্ডের মোট শিক্ষার্থীদের ২৭ শতাংশই বিদেশি।
গত কয়েক মাসে মার্কিন প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর চাপ বাড়িয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের সময় ক্যাম্পাসে 'ইহুদি-বিরোধী' মনোভাব ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ এনেছে।
একই দিনে হোয়াইট হাউস কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কেও তাদের ইহুদি শিক্ষার্থীদের অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে এক্রেডিটেশন বাতিল করার হুমকি দিয়েছে।