দীর্ঘদিনের দুই-সন্তান নীতি বাতিল করল ভিয়েতনাম

জন্মহার হ্রাস এবং কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী কমে যাওয়ায় এক দম্পতির দুই সন্তান নীতি বাতিল করেছে ভিয়েতনাম।
মঙ্গলবার ভিয়েতনামের আইনপ্রণেতারা জনসংখ্যা আইনের সংশোধনী পাস করেছেন। এখন থেকে পরিবারই কয় সন্তান নেবে তার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
অতিরিক্ত জনসংখ্যা কমাতে ২০০৯ সালে এ দুই সন্তান নীতি চালু করা হয়। সাধারণ জনগণের ক্ষেত্রে নীতির প্রয়োগ কিছুটা ঢিলেঢালাভাবে হলেও, সরকারি কর্মকর্তা ও শাসক কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের জন্য এই নীতি কঠোরভাবে মানা হত।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী ভিয়েতনামের জনসংখ্যা ১০ কোটির কিছু বেশি, যাদের গড় বয়স ৩৩.৪ বছর। আর ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ। তবে মন্ত্রণালয় সতর্ক করেছে যে, ২০২৪ সালে জাতীয় প্রজনন হার নারী প্রতি ১.৯১ জনে নেমে এসেছে। এটি আধুনিক ভিয়েতনামের ইতিহাসে সর্বনিম্ন এবং জনসংখ্যা প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় স্তরের নিচে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যদি জন্মহার কমার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তাহলে বর্তমান 'সুবর্ণ জনসংখ্যা' পর্ব—যখন কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা নির্ভরশীলদের (শিশু ও বৃদ্ধদের) তুলনায় অনেক বেশি—আর ১৫ বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।
সন্তান প্রতিপালনের খরচ নিয়ে উদ্বেগ
হ্যানয়ের ৪২ বছর বয়সী গৃহিণী ট্রান ফুং মাই বলেন, 'আমি এই নতুন আইন সম্পর্কে কী ভাবব বুঝতে পারছি না। এটি ভালো কিছু হতে পারে, কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে এটি এসেছে অনেক দেরিতে।'
মাইয়ের স্বামী, ৪২ বছর বয়সী গুয়েন ম্যান হুং, একসময় স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা এবং কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যম পর্যায়ের সদস্য ছিলেন। এক দশখ আগে মাই তৃতীয়বারের মতো গর্ভবতী হলে গুয়েন ম্যান হুং দল থেকে পদত্যাগ করেন। মাই বলেন, 'সিদ্ধান্তটা কঠিন ছিল, কিন্তু আমরা চাইনি উনি কোনো ঝামেলায় পড়ুন।'
মাই বলেন, 'এখন চাইলে আমরা পাঁচ বা ছয়টা সন্তান নিতে পারি। কিন্তু আমার মনে হয়, ইতোমধ্যেই আমার সন্তান নেওয়ার উপযুক্ত বয়স পেরিয়ে গেছে, তাছাড়া একটা সন্তান বড় করতে যে খরচ হয়, তা অনেক বেশি।'
সমাজতাত্ত্বিকরাও খরচ নিয়ে তার উদ্বেগের সঙ্গে একমত। তাদের মতে, একজন সন্তানকে জন্ম থেকে ২২ বছর বয়স পর্যন্ত লালন-পালনের জন্য প্রতি মাসে খরচ হয় প্রায় ১ থেকে ২ কোটি ভিয়েতনামী ডং (৩৮০ থেকে ৭৬০ মার্কিন ডলার), যা দেশটির গড় মাসিক আয়ের চেয়েও বেশি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাও হং লান মঙ্গলবার সংসদে জানান, ভিয়েতনামের মতো অনেক দেশ ইতিমধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতি পরিত্যাগ করেছে। তিনি বলেন, সন্তান সংখ্যার সীমা তুলে নেওয়া 'আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ'।
উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান, প্রতিবেশী চীন ২০১৬ সালে তাদের দীর্ঘদিনের এক সন্তান নীতি বাতিল করে এবং ২০২১ সাল থেকে দম্পতিদের তিনটি সন্তান নেওয়ার অনুমতি দেয়।
অন্যান্য অনেক দেশের মতো ভিয়েতনামেও প্রবীণ জনসংখ্যা বাড়ছে
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচিতে ভিয়েতনামের জ্যেষ্ঠ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা জোনাথন লন্ডন বলেন, 'ভিয়েতনাম এমন একটি মৌলিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, যেটি পূর্ব এশিয়ার কোনো দেশই এখনও কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে পারেনি—তা হলো জনসংখ্যার বার্ধক্য।'
দুই সন্তান নীতি বাতিলের বিষয়ে জোনাথন লন্ডন বলেন, 'এই পদক্ষেপের সঙ্গে অবশ্যই শিশু, পরিবার ও বিশেষ করে নারীদের জন্য অন্যান্য সহায়তা যুক্ত করা দরকার।'
তিনি আরও বলেন, 'এ ধরনের নীতির বাস্তব প্রভাব পড়তে পারে, তবে এর জন্য দরকার উচ্চমাত্রার রাজনৈতিক সদিচ্ছা, ধারাবাহিকতা এবং বিস্তৃত আকারে প্রয়োগ।'
এদিকে আইনপ্রণেতারা জন্মপূর্ব লিঙ্গ নির্ধারণের ফলে সৃষ্ট লিঙ্গ বৈষম্য নিয়েও কাজ করছেন, কারণ ভিয়েতনামের পিতৃতান্ত্রিক সমাজে ছেলেসন্তানকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাব করেছে, জন্মপূর্ব লিঙ্গ নির্ধারণের সঙ্গে জড়িত সম্ভাব্য অভিভাবকদের ওপর জরিমানার পরিমাণ ৩০ মিলিয়ন ভিয়েতনামী ডং (প্রায় ১,১৫০ ডলার) থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১০০ মিলিয়ন ডং (প্রায় ৩,৮০০ ডলার) করা হোক।