ছেলের বিলাসবহুল ছুটি কাটানো ঘিরে বিতর্ক, পদত্যাগ করলেন মঙ্গোলিয়ার প্রধানমন্ত্রী

ছেলের বিলাসবহুল জীবনযাত্রার ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর— দুর্নীতির তদন্ত ও ব্যাপক গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন মঙ্গোলিয়ার প্রধানমন্ত্রী লুভসাননামস্রেইন ওয়ুন-এরদেন। আজ মঙ্গলবার (জুন) দেশটির পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে পরাজিত হওয়ার পর তিনি এ ঘোষণা দেন। খবর বিবিসির।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ছবিতে দেখা গেছে—ওয়ুন-এরদেনের পুত্র ও তাঁর প্রেমিকা বাগদান উপলক্ষে ছুটিতে গিয়ে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন। ছবিতে প্রেমিকার কাঁধে ঝোলানো ডিওরের কালো একটি ব্যাগ ও অন্যান্য বিলাসপণ্যের একাধিক শপিং ব্যাগ দেখা যায়।
ওই নারী তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে সেই ছবির ক্যাপশনে লিখেছেন, 'হ্যাপি বার্থডে টু মি।' আরও একটি ছবিতে প্রেমিক যুগলকে সুইমিং পুলে চুম্বনরত অবস্থায় দেখা গেছে। এই ছবিগুলো তিনি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছিলেন।
দুর্নীতির অভিযোগে ওয়ুনের বিরুদ্ধে রাজধানী উলানবাটরে কয়েকদিনের বিক্ষোভের পর এই ভোট অনুষ্ঠিত হয়।
ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর পার্লামেন্টে ওয়ুন-এরদেন বলেন, 'মহামারি, যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক চাপের সময় দেশের ও জনগণের সেবা করার সুযোগ পাওয়া আমার জন্য ছিল এক গর্বের বিষয়।'
মঙ্গোলিয়ার সংসদের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ওয়ুন অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন, যা আগামী ৩০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, এসব ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তোলে—প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের এত বিলাসবহুল জীবনযাপন কীভাবে সম্ভব। এর পরপরই দেশটির দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা তাদের সম্পদের উৎস অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু করেছে।
মঙ্গলবারের গোপন ভোটে অংশ নেন ৮৮ জন আইনপ্রণেতা, যাদের মধ্যে ৪৪ জন তার পক্ষে এবং ৩৮ জন বিপক্ষে ভোট দেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকার জন্য প্রয়োজন ছিল কমপক্ষে ১২৬ সদস্যের মধ্যে ৬৪ জনের সমর্থন। ফলে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে পদত্যাগে বাধ্য হন।
তবে নিজের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ ওয়ুন-এরদেন বরাবরের মতোই অস্বীকার করে বলেছেন, তাকে হেয় করার জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা 'ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার' চালাচ্ছে।

ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অস্থিরতা
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তথ্যমতে, ওয়ুন-এরদেনে শাসনামলে মঙ্গোলিয়ায় দুর্নীতি পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ২০২৩ সালে দেশটি সরকারি স্বচ্ছতায় ১৮০টি দেশের মধ্যে ১১৪তম অবস্থানে ছিল।
দক্ষিণে চীন ও উত্তরে রাশিয়ার মাঝে অবস্থিত মঙ্গোলিয়া ১৯৯০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের চেষ্টা করছে। তবে রাজনৈতিক দুর্নীতি দেশটির জন্য এক দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হয়ে রয়ে গেছে।
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিকিউটররা অভিযোগ করেন, মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী সুখবাতার বাতবোল্ড নিউইয়র্কে দুটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট দুর্নীতির টাকায় কিনেছেন। তিনি ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। বাতবোল্ড অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মঙ্গোলিয়া পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোকে তারা 'তৃতীয় প্রতিবেশী' হিসেবে বিবেচনা করে।