আরও তীব্র হচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যেও ব্যবধান বাড়ছে

ইউক্রেন যুদ্ধ যখন আরও তীব্র হচ্ছে, ঠিক তখনই প্রকাশ্যে মুখোমুখি হলো যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সতর্ক করে বলেছেন, তিনি "আগুন নিয়ে খেলছেন।" ট্রাম্প এমন সময়ে এ মন্তব্য করেছেন যখন ইউক্রেন সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নতুন করে ৫০ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে মস্কো।
পশ্চিমা দেশগুলোর নেতারা যখন যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে বিবাদে লিপ্ত, তারমধ্যেই ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাতের পরিস্থিতি ক্রমেই আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। দুই পক্ষই ড্রোন হামলার পরিমাণ বাড়িয়েছে এবং রাশিয়ান সেনারা রণাঙ্গনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অগ্রসর হচ্ছে।
এনিয়ে ট্রাম্প মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশালে পোস্ট করে বলেন, "ভ্লাদিমির পুতিন বুঝতে পারছেন না, যে আমি না থাকলে রাশিয়ার সঙ্গে ইতোমধ্যে অনেক 'খুব খারাপ' কিছু ঘটে যেত। তিনি এখন আগুন নিয়ে খেলছেন।"
এর প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেন, "ট্রাম্প সম্ভবত ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত নন।"
এদিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন শান্তি প্রতিষ্ঠায় "গুরুত্বপূর্ণ চেষ্টা করছেন" এবং রাশিয়া "প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতামূলক ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞ।"
তিনি আরও বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রের মতো রাশিয়ারও নিজস্ব জাতীয় স্বার্থ রয়েছে। আমাদের জন্য সেটাই অগ্রাধিকার এবং প্রেসিডেন্ট পুতিনের জন্যও তাই।"
গত ১৯ মে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার পর পুতিন জানান, তিনি শান্তিচুক্তির রূপরেখা ঠিক করতে ইউক্রেনের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছেন এবং সেখানে যুদ্ধবিরতির সময়সীমাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, ইউক্রেনের সঙ্গে পরবর্তী রাউন্ডের আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে।
যুদ্ধের উত্তাপ বাড়ছে
যখন ট্রাম্প ও ক্রেমলিন পাল্টাপাল্টি মন্তব্য করা হচ্ছে, ঠিক তখনই যুদ্ধের ময়দানে উত্তেজনা তুঙ্গে। রাশিয়া দাবি করেছে, এক রাতে ইউক্রেনের ১৩টি অঞ্চলে ২৯৬টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে তারা। অন্যদিকে, ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়া ৮৮টি ড্রোন ও ৫টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে।
রুশ সেনারা পশ্চিমের কুরস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে হটিয়ে দেওয়ার পর—এখন সীমান্ত পার হয়ে উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের সুমি অঞ্চলে ঢুকে পড়েছে। সেখানকার বেশ কয়েকটি গ্রামও দখল করেছে তারা।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, "সুমি সীমান্তে রাশিয়া ৫০ হাজার সেনা জড়ো করেছে।" এই অবস্থায়, কিয়েভ সম্ভাব্য একটি বড় আক্রমণ ঠেকাতে প্রস্তুতি নিয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।
পুতিন বহুবার বলেছেন, তিনি ইউক্রেন সীমান্তে একটি "বাফার জোন" চান।
রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলুসভ অভিযোগ করেছেন, "যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট ইউক্রেন সংকটকে কাজে লাগিয়ে পূর্ব ইউরোপ ও বাল্টিক অঞ্চলে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করছে।" তিনি জানান, "রাশিয়া ইউক্রেনের পুরো ফ্রন্টলাইনে অগ্রসর হচ্ছে।"
পুতিন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন, যার আগে পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থী বিদ্রোহী ও ইউক্রেনীয় বাহিনীর মধ্যে আট বছর ধরে সংঘর্ষ চলছিল।
বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। গত এক বছরে রুশ বাহিনীর অগ্রগতি দ্রুত হয়েছে, তবে উভয় পক্ষই প্রাণহানি ও সামরিক ব্যয় নিয়ে চরম চাপের মধ্যে আছে।
রাশিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের শীর্ষ কর্মকর্তা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেন, "ট্রাম্পের বরং তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে চিন্তা করা উচিত।" তবে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে কিথ কেলগ এই মন্তব্যকে "দায়িত্বজ্ঞানহীন" বলে অভিহিত করেন।
তিনি সামাজিক মাধ্যম এক্স- এ (সাবেক টুইটার) বলেন, "তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয় দেখানো দুঃখজনক, দায়িত্বহীন এবং (দায়িত্বশীল) বিশ্বশক্তির পক্ষে অনুপযুক্ত আচরণ।"