জাপানে শিশুদের নামকরণে নতুন নিয়ম চালু, ইচ্ছামতো নাম রাখা যাবে না

জাপানে নতুন নিয়ম অনুযায়ী এখন থেকে বাবা-মায়েরা ইচ্ছামতো তাদের সন্তানের নাম রাখতে পারবেন না। শুধু সরকার স্বীকৃত কাঞ্জি অক্ষর ব্যবহার করেই সন্তানের নাম রাখা যাবে।
কাঞ্জি হলো একধরণের চীনা ভিত্তিক অক্ষর, যা জাপানি লেখায় ব্যবহৃত হয়। চলতি সপ্তাহে নতুন এই নিয়মটি চালু হয়েছে, যার উদ্দেশ্য 'কিরাকিরা' বা অতিরিক্ত চকচকে, অস্বাভাবিক নামের ব্যবহার বন্ধ করা।
সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরে 'কিরাকিরা' নামগুলোকে প্রশাসনিক জটিলতার কারণ হিসেবে বিবেচনা করছে। এছাড়াও এসব নামের কারণে অনেক শিশু তাদের সহপাঠীদের বিদ্রূপের শিকার হতে হচ্ছে।
পারিবারিক নিবন্ধন আইনে কাঞ্জির ব্যবহার নিষিদ্ধ না হলেও, এখন থেকে সন্তানের নাম রাখার সময় নামের উচ্চারণ অভিভাবকদের স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। এর মাধ্যমে অদ্ভুত বা বিতর্কিত উচ্চারণ নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের পেছনে কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, স্কুল, হাসপাতাল ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে অদ্ভুত এবং বোঝা কঠিন নামের কারণে সমস্যা বেড়ে গেছে।
'কিরাকিরা' নামের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা দীর্ঘদিনের, বিশেষ করে ১৯৯০-এর দশক থেকে। তখন থেকে কাঞ্জির অস্বাভাবিক উচ্চারণ ব্যবহার করে নতুন ধরনের নাম দেওয়ার প্রবণতা বাড়তে থাকে।
সরকারের দাবি, নামের উচ্চারণ একই রকম থাকলে ডিজিটাল প্রশাসনের কাজ অনেক সহজ ও কার্যকর হবে। তবে অনেকে মনে করছেন, এই নিয়মের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে চমকপ্রদ ও কঠিন উচ্চারণের নামের সংখ্যা কমানো।
'পিকাচু', 'নাইকি', 'ডায়মন্ড', 'উইনি দ্য পু'র 'পু' এবং কাল্পনিক বিড়াল 'কিটি চ্যান' থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে নিজের সন্তানের নামকরণ করেছেন এমন অনেক মা-বাবাই সমালোচনার মুখে পড়েছেন। 'ওজিসামা' (রাজকুমার) ও 'অকুমা' (শয়তান) মতো নাম দিয়ে কিছু পরিবার সংবাদ শিরোনামেও এসেছে।
প্রাক্তন অলিম্পিক স্পিড স্কেটার এবং ট্র্যাক সাইক্লিস্ট, পাশাপাশি টোকিও ২০২০ অলিম্পিক কমিটির প্রধান সাইকো হাসিমোতো বেশ সমালোচিত হন, যখন তিনি তার দুই ছেলেকে 'গিরিশিয়া' (গ্রিস) ও 'টোরিনো' (ইতালির একটি শহর) নাম দিয়েছিলেন। ওই বছর গ্রীষ্ম ও শীতকালীন অলিম্পিক সেই দুই শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
নিজে কাঞ্জি বেছে নেওয়ায় হাসিমোতো এসব নামের উচ্চারণ জানতেন, কিন্তু অন্যরা বুঝতে পারতেন না।
অভিভাবকরা অবশ্য সন্তানদের পছন্দমতো ভিন্ন ধরনের নাম দেওয়াকে ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্র্যের প্রকাশ হিসেবে দেখেন, বিশেষ করে এমন সমাজে যেখানে সবাই মিলে চলার চাপ বেশি থাকে, বিশেষ করে সন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রে।
তবে সংশোধিত আইনে অনুমোদিত প্রায় তিন হাজার কাঞ্জির মধ্যে অধিকাংশেরই একাধিক প্রচলিত উচ্চারণ রয়েছে। এসব অক্ষরের মধ্যে কিছু এতটাই ভাষাগতভাবে নমনীয়, যে অদ্ভুত বা অপ্রচলিত উচ্চারণও বহন করতে পারে।
সরকারি কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, এসব নাম অনেক সময় প্রথম দেখাতেই উচ্চারণ করা কঠিন বা অসম্ভব মনে হয়। এখন থেকে যারা কাঞ্জির প্রচলিত উচ্চারণ থেকে ভিন্ন কোনো উচ্চারণ বেছে নেবেন, তাদের লিখিতভাবে নাম বাছাইয়ের কারণ জানাতে হবে এবং প্রয়োজন হলে একটি গ্রহণযোগ্য বিকল্প নাম দিতে হবে।
যদিও জাপানের সংবাদমাধ্যম বলছে, শুধুমাত্র সবচেয়ে অপ্রচলিত বা অযৌক্তিক নামগুলো প্রত্যাখ্যাত হবে।
তবুও এই উচ্চারণ সংক্রান্ত নিয়মটিকে জাপানের পারিবারিক নিবন্ধন ব্যবস্থা 'কোসেকি'-তে বিরল একটি পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে। 'কোসেকি' হলো একটি আইনি রেকর্ড, যেখানে পরিবারের প্রধান, তার স্ত্রী ও সন্তানের নাম, জন্ম তারিখসহ অন্যান্য তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে।