‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় উড়োজাহাজ উইন্ডরানার’ সামরিক বহরে যুক্ত করার পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের

দৈত্যকার আকারের একটি নতুন উড়োজাহাজ তৈরির পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি—যার মূল উদ্দেশ্য বিশাল পাখার বাতাসচালিত টারবাইন পরিবহন। তবে এর বিপুল মালবাহী ক্ষমতার কারণে এটি নিয়ে এখন আগ্রহ দেখাচ্ছে মার্কিন সামরিক বাহিনীও।
'উইন্ডরানার' নামের এ বিমানটি নির্মাণ করছে কলোরাডোভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রেডিয়া। এর ডানার বিস্তৃতি হবে ৮০ মিটার আর দৈর্ঘ্য ১০৮ মিটার—যা একেবারে একটি ফিফা মানসম্পন্ন ফুটবল মাঠের সমান। একটি বোয়িং ৭৪৭ বিমানের চেয়ে এটি প্রায় ১২ গুণ বেশি মাল পরিবহন করতে পারবে এবং এর সর্বোচ্চ পে-লোড সক্ষমতা ধরা হয়েছে ৭২ হাজার ৫৭৫ কেজি।
মূলত যুক্তরাষ্ট্রের দুর্গম অঞ্চলে ১০০ মিটার দীর্ঘ টারবাইনের পাখা পৌঁছে দেওয়ার জন্যই এই বিমানটি তৈরি করা হচ্ছে। তবে এর ব্যতিক্রমী বহন ক্ষমতার কারণে সামরিক কাজে ব্যবহারের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান রেডিয়ার প্রতিরক্ষা খাতের ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও সাবেক মেজর জেনারেল কেনেথ বিব জুনিয়র।
তিনি বলেন, 'উইন্ডরানার' এমন সব মালবাহী সরঞ্জাম পরিবহন করতে পারবে যা সি-১৭ গ্লোবমাস্টার বা সি-৫ গ্যালাক্সির মতো প্রচলিত সামরিক বিমানের পক্ষে সম্ভব নয়।
রেডিয়ার সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর (পেন্টাগন)। এর আওতায় তারা যৌথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে, উইন্ডরানার কতটা কার্যকরভাবে সামরিক মাল, যানবাহন, ওভারসাইজ যন্ত্রপাতি কিংবা ছোট আকারের উড়োজাহাজ—যেমন এফ-১৬ ফাইটার জেট অথবা ভি-২২ ওসপ্রে পরিবহন করতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত পেন্টাগন এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে না।
বিমানটির প্রতি সামরিক বাহিনীর আগ্রহের অন্যতম কারণ এর রানওয়ে সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য। রেডিয়ার দাবি, এটি মাত্র ১৮০০ মিটার দীর্ঘ অপ্রস্তুত মাটি-পথেও ওঠানামা করতে পারবে। বিব বলেন, 'সংকটকালে কিংবা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এটি মানবিক সহায়তা দেওয়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।'
তবে এ বিষয় নিয়ে সতর্কতা প্রকাশ করেছেন ওয়াশিংটন ডিসির সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক এন্ড বাজেটারি এসেসমেন্টস-এর প্রতিরক্ষা নীতিবিষয়ক বিশ্লেষক গ্রেগ মালান্দ্রিনো। তার মতে, বিশ্বের বৃহত্তম বিমানটি যদি দুর্গম অঞ্চলের কাঁচা এয়ারস্ট্রিপে নামানোর চেষ্টা করে, তাহলে পণ্য ওঠানামা করানোসহ নানা বিষয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
তবু এই বিশেষায়িত টারবাইন-বাহী উড়োজাহাজকে বহুমুখী সামরিক কাজে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা অসম্ভব নয় বলেও মত দেন মালান্দ্রিনো। তার মতে, পূর্ণ মালবাহী অবস্থায় উইন্ডরানারের প্রস্তাবিত ২০০০ কিলোমিটার পাল্লা এটি উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা বা ইউরোপের সামরিক ঘাঁটিগুলোর মধ্যে স্বল্পদূরত্বে পরিবহনের জন্য উপযুক্ত করে তোলে।
যদি এটি আকাশে জ্বালানি পুনঃপূর্ণ (রিফিল) করার সুবিধা রাখে—যা বর্তমানে মার্কিন সামরিক বাহিনীর ভারী মালবাহী উড়োজাহাজগুলোতে রয়েছে—তাহলে এটি আরও দূরবর্তী স্থানেও কার্যকরভাবে পরিচালিত হতে পারবে।