গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১৪৬, আহত শতাধিক: স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ১৪৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। শনিবার (১৭ মে) গাজার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানায়।
বৃহস্পতিবার থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর নতুন হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে।
শুক্রবার মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে সফরে কোনো নতুন যুদ্ধবিরতির বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি। তার সফর শেষ হওয়ার পরই ইসরায়েল আবারও স্থল অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উত্তর গাজার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের পরিচালক মারওয়ান আল-সুলতান বলেন, 'মধ্যরাত থেকে এখন পর্যন্ত আমরা ৫৮ জন শহীদের মরদেহ পেয়েছি। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও বহু মরদেহ আটকে আছে। হাসপাতালের ভেতরে পরিস্থিতি ভয়াবহ।'
স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪৫৯ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী শনিবার জানিয়েছে, তারা গাজায় অভিযান আরও বিস্তৃত করতে ব্যাপক হামলা ও সেনা মোতায়েন করছে এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের নির্দিষ্ট এলাকাগুলোর 'অপারেশনাল নিয়ন্ত্রণ' নেওয়ার চেষ্টা করছে।
গাজায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। ১৯ মাস ধরে চলমান যুদ্ধ এবং মার্চ থেকে ইসরায়েলি অবরোধ আরও কঠোর হওয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া হাসপাতালগুলোতেও বহুবার হামলা করা হয়েছে।
বর্তমান উত্তেজনা ও সীমান্তে ট্যাংকসহ সাঁজোয়া যান মোতায়েন 'অপারেশন গিডিয়ন'স ওয়াগনস'-এর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছে ইসরায়েল। এই অভিযানের লক্ষ্য হামাসকে পরাজিত করে ইসরায়েলি জিম্মিদের উদ্ধার করা।
ইসরায়েলি এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা এর আগে জানিয়েছিলেন, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিযানের মূল ধাপ শুরু হবে না।
শনিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, 'আমরা ধাপে ধাপে সৈন্য বাড়াচ্ছি। হামাস এখনও আত্মসমর্পণ করেনি।'
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ৭৬ দিন ধরে ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়ার পর সেখানে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার নিরাপত্তা পরিষদকে প্রশ্ন করেছেন, 'আপনারা কি গণহত্যা প্রতিরোধে কিছু করবেন না?'
শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজায় খাদ্য সংকট ও ত্রাণ সরবরাহের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছেন। আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে যাতে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ফিরে আসে এবং অবরোধ তুলে নেয়।
একটি মার্কিন সংস্থা মে মাসের শেষ নাগাদ গাজায় ত্রাণ বিতরণ শুরু করার পরিকল্পনা করেছে। এ কাজে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি নিরাপত্তা ও সরবরাহ সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করা হবে। তবে জাতিসংঘ বলেছে, ওই সংস্থা নিরপেক্ষ বা স্বাধীন নয়। তাই তারা এর সঙ্গে কাজ করবে না।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ৫ মে ঘোষণা দেন, তার সরকার হামাসের বিরুদ্ধে আরও বিস্তৃত ও তীব্র অভিযান চালাতে যাচ্ছে। নিরাপত্তা মন্ত্রিসভাও এ পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছে। এতে পুরো গাজা দখল ও সেখানে ত্রাণ বিতরণে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথাও রয়েছে।
শুক্রবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার বাসিন্দাদের দক্ষিণে সরিয়ে যেতে নির্দেশ দেয়। এর আগে উত্তরের বেইত লাহিয়া শহর ও জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ব্যাপক হামলা চালানো হয়। তবে স্থানীয়দের দাবি, এর মধ্যেই দক্ষিণের খান ইউনিস শহরের দিকে ট্যাংক এগিয়ে যাচ্ছে।
ইসরায়েলের ঘোষিত লক্ষ্য হলো হামাসের সামরিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা পুরোপুরি ধ্বংস করা। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের বিভিন্ন বসতিতে হামলা চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা করে এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এই যুদ্ধ ইসরায়েলের ভয়াবহ সামরিক অভিযানে রূপ নিয়েছে। প্রায় ২০ লাখ জনসংখ্যার ছোট, ঘনবসতিপূর্ণ গাজা উপত্যকার অধিকাংশ বাসিন্দাই এখন গৃহহীন। এছাড়া, নিহত হয়েছেন ৫৩ হাজারের বেশি মানুষ।
এনবিসি নিউজ শুক্রবার পাঁচটি সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন গাজার এক মিলিয়ন ফিলিস্তিনিকে স্থায়ীভাবে লিবিয়ায় স্থানান্তরের একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।
তবে হামাসসহ সকল ফিলিস্তিনি দল এবং প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সরকার এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করে বলেছে, ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ মেনে নেওয়া হবে না।