‘১৮০ সন্তানের বাবা’ দাবি করা শুক্রাণু দাতার পিতৃত্বের অধিকার খারিজ

রবার্ট অ্যালবন একজন অনিবন্ধিত শুক্রাণু দাতা। তার দাবি, তিনি বিশ্বজুড়ে ১৮০-এরও বেশি সন্তানের জনক। সম্প্রতি প্রাকৃতিকভাবে গর্ভসঞ্চারের মাধ্যমে জন্ম হওয়া এক শিশুর পিতৃত্বের অধিকার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু আদালত তার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। খবর বিবিসির।
রবার্ট অ্যালবন নামের ওই ব্যক্তি শুক্রাণু ফ্রিজে হিমায়িত করে রাখতেন ও সেগুলো পরে ডাকযোগে পাঠাতেন।
তবে ২০২৩ সালে প্রাকৃতিকভাবে গর্ভসঞ্চারের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া এক মেয়েশিশুর পিতৃত্বের ও তার সঙ্গে যোগাযোগের অধিকার চেয়ে আদালতে আবেদন করেন তিনি। তবে আদালত তাকে সেই অধিকার দেয়নি।
উচ্চ আদালতের বিচারক পুল শুক্রাণু দাতা অ্যালবনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করে, এই শুক্রাণু দাতা আগেও এমন করেছেন। তিনি অন্য পরিবারদের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
পুল বলেন, আদালতের কাছে তথ্য প্রমাণ আছে, যে কাউকে চাইলেই তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক কিংবা শুধু শুক্রাণু সরবরাহের জন্য প্রস্তুত থাকেন অ্যালবন।
গত মার্চে ২০২৩ সালে জন্ম নেওয়া এক শিশুকে ঘিরে ইংল্যান্ডের মিডলসব্রোতে পারিবারিক আদালতে হওয়া শুনানির ভিত্তিতে একটি ৫১ পাতার রায় প্রকাশিত হয়েছে। আদালতের নথিতে শিশুটিকে 'সিএ' নামে উল্লেখ করা হয়েছে।
শিশুটির মা এবং উত্তরপূর্ব ইংল্যান্ডে অবস্থিত সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কর্তৃপক্ষ চেয়েছিল, অ্যালবনের সঙ্গে সীমিত ও পরোক্ষ যোগাযোগ (যেমন: চিঠি বা বার্তা) রাখা হোক। কিন্তু অ্যালবন সেই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।
বরং, ৫৪ বছর বয়সী অ্যালবন আদালতের কাছে পিতৃত্বের দায়িত্ব ও সরাসরি দেখাসাক্ষাৎ করার অনুমতি চেয়েছিলেন।
আদালত এমনই আরেকটি শিশুর মামলাওর কথাও শুনেছেন। ২০২২ সালে জন্মগ্রহণ করা এক শিশু যার নাম মামলায় 'সিবি' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানেও ওই শিশুর বাবার অধিকার চেয়েছিলেন অ্যালবন।
সেই মামলায়, উত্তরপূর্ব ইংল্যান্ডের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দত্তক বা দীর্ঘমেয়াদি পালক ব্যবস্থার পর সীমিত, পরোক্ষ যোগাযোগের শর্তে একটি কেয়ার অর্ডার চেয়েছিল। তবে অ্যালবন চেয়েছিলেন, শিশুটিকে তার হেফাজতে দেওয়া হোক।
আদালত ওই আবেদনটিও খারিজ করে দেয়।
'তিনি কি বংশ বিস্তার করতে চান?'
উচ্চ আদালতের বিচারক বলেন, অ্যালবন 'জো ডোনার' নামে নিজের প্রচার প্রচারণা চালাতেন। মূলত অবিবাহিত, সমকামী কিংবা দুর্বল অবস্থানে থাকা নারীরাই তার কাছে আসতেন।
আদালতের ওই দুটি মামলার দুটি শিশুই মায়েদের সঙ্গে অ্যালবনের যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে গর্ভধারণের মাধ্যমে জন্ম হয়েছে।
বিচারক এই দাতার উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি জানতে চান: 'তিনি কি বংশ বৃদ্ধি করতে চান?'
তিনি আরও প্রশ্ন করেন, 'পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে তার অনেক সন্তান রয়েছে এটা ভেবে কি তিনি আনন্দ পান?'
বিচারক অভিযোগ করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া অ্যালবন ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে যেসব নারী তার সন্তানের মা হয়েছেন, তাদের ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছেন—এমনকি সেই উদ্দেশ্যে আইনি পদক্ষেপও নিয়েছেন।
বিচারক পুল বলেন, "অ্যালবন নিজের স্বার্থ ও নিজের ইচ্ছা মতো যাতে কাজ করাতে পারেন তাই অন্যদের ওপর নিয়ন্ত্রণ করতেই তিনি এ অধিকার চান।"
বিচারক আরও জানান, সিবিকে দত্তক দেওয়া যেতে পারে। তবে তাকে তার বাবার কাছে দেওয়া হবে না। কারণ তিনি পরবর্তীতে শিশুটিকে ত্যাগ করতে পারেন।
অন্যদিকে সিএ-এর জন্মনিবন্ধনে অ্যালবনকে বাবা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু পিতৃত্বের অধিকার ও শিশুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের অনুমতি আদালত তাকে দেয়নি।
বিচারক বলেন, 'অ্যালবন সন্তানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন, আমি নিশ্চিত নই। বরং মনে করি, তিনি আগেও যেমন করেছেন, ঠিক তেমনই সুবিধামতো সময়ে আরেকটি পরিবারের দিকে চলে যাবেন।'
তবে, অ্যালবন প্রতি বছর সিএ-এর জন্য একটি চিঠি বা কার্ড পাঠাতে পারবেন বলে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে শিশুটির মা যখন উপযুক্ত মনে করবেন, তখনই সে চিঠি শিশুর কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
পুল আরও নির্দেশ দিয়েছেন, এই রায়টি হিউম্যান ফার্টিলাইজেশন অ্যান্ড এমব্রায়োলজি অথরিটি (এইচএফইএ) এবং যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরে পাঠানো হোক। এই সিদ্ধান্ত সম্ভবত অ্যালবনের নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত শুক্রাণু দানের কার্যকলাপ নিয়ে উদ্বেগের কারণেই নেওয়া হয়েছে।