২০৪৫ সালের মধ্যে ২০০ বিলিয়ন ডলার দান করব, বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র শিশুদের ‘হত্যা’ করছেন মাস্ক: গেটস

এক ঘোষণায় বিল গেটস জানিয়েছেন, ২০৪৫ সালের মধ্যে তার দাতব্য ফাউন্ডেশন থেকে ২০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে। একইসঙ্গে তিনি বলেন, 'বিশ্বের সবচেয়ে শিশুদের হত্যা করছেন ইলন মাস্ক', কারণ তার নেতৃত্বে মার্কিন বিদেশি সহায়তা বাজেটে বড় কাটছাঁট হয়েছে।
৬৯ বছর বয়সি মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বৃহস্পতিবার (৮ মে) জানান, তিনি তার সম্পদের প্রায় পুরোটাই দ্রুত দান করতে চান এবং গেটস ফাউন্ডেশন ২০৪৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হবে—যা পূর্বঘোষিত সময়ের চেয়ে অনেক আগে।
গেটস আশা করছেন, এই অর্থ দিয়ে পোলিও ও ম্যালেরিয়া নির্মূল, মা ও শিশুমৃত্যু হ্রাস এবং দারিদ্র্য কমানোর মতো উদ্যোগে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সম্ভব হবে।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গেটস বলেন, 'বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি যখন সবচেয়ে দরিদ্র শিশুদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেন, সেটি খুবই দুঃখজনক।'
এই মন্তব্যের পেছনে রয়েছে বিদেশি সহায়তা বাজেট কমানোর সিদ্ধান্ত, যা শুরু হয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসনে। এখন তা এগিয়ে নিচ্ছে মাস্কের নেতৃত্বাধীন ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডিওজিই)।
২০২৩ সালে ইউএসএআইডি বিশ্বজুড়ে ৪৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করলেও, বাজেট কমানোর কারণে সংস্থার ৮০ শতাংশ কর্মসূচি বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে। রয়টার্সকে গেটস বলেন, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আগামী চার থেকে ছয় বছরে বিশ্বজুড়ে মৃত্যু হার আবার বেড়ে যেতে পারে।
'মৃত্যুর সংখ্যা এবার প্রথমবারের মতো বাড়বে… লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাবে শুধু সম্পদের অভাবে,' বলেন তিনি।
গেটস ফাউন্ডেশনের বাজেট ২০২৬ সালের মধ্যে ৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে এবং এরপর প্রতি বছর ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, দাতব্য সংস্থাগুলো কখনো সরকারের ঘাটতি পূরণ করতে পারবে না।
বিল গেটস বলেন, 'আমি বিশ্বাস করি, সরকারগুলো আবার শিশুদের বাঁচানোর বিষয়টি গুরুত্ব দেবে।'
এক সময় গেটস ও মাস্ক মানবকল্যাণে অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে একমত হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে তাদের সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা গিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক ভিডিও পোস্টে মাস্ক গেটসকে 'বড় মাপের মিথ্যাবাদী' বলেন। তবে এ বিষয়ে মাস্কের মুখপাত্রদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নিজের ওয়েবসাইটে গেটস লেখেন, 'মানুষের উপকারে লাগানো যায়— এমন সম্পদ আমি নিজের কাছে রেখে দিতে পারি না, যখন এত জরুরি সমস্যা সমাধানের অপেক্ষায় রয়েছে।' তবে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, 'বিশ্বের ধনী দেশগুলো আদৌ দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।'
আফ্রিকার কিছু দেশে বাজেট পুনর্বিন্যাসকে গেটস ইতিবাচকভাবে দেখলেও বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন ছাড়া পোলিও নির্মূল সম্ভব নয়।'
'আমার বাবা-মা আমাকে যা শিখিয়েছেন'
এ বছর গেটস ফাউন্ডেশনের ২৫ বছর পূর্তি। ২০০০ সালে প্রাক্তন স্ত্রী মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটসের সঙ্গে এটি প্রতিষ্ঠা করেন বিল গেটস। পরে এতে যুক্ত হন বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট।
এ পর্যন্ত ফাউন্ডেশনটি প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে, যার মাধ্যমে গ্যাভি ও গ্লোবাল ফান্ডের মতো উদ্যোগে কোটি কোটি মানুষের জীবন রক্ষা পেয়েছে।
গেটস জানান, তার সম্পদের প্রায় ৯৯ শতাংশ ব্যয় করে ফাউন্ডেশনটি এক সময় বন্ধ করে দেওয়া হবে। আগে ধারণা করা হয়েছিল, গেটস ও মেলিন্ডার মৃত্যুর কয়েক দশক পর ফাউন্ডেশনটির কার্যক্রম শেষ হবে।
বর্তমানে গেটসের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১০৮ বিলিয়ন ডলার। বাজার পরিস্থিতি ও মুদ্রাস্ফীতির ওপর নির্ভর করে ফাউন্ডেশনটি ২০৪৫ সালের মধ্যে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যথাযথ জবাবদিহিতার অভাবের জন্য গেটস ফাউন্ডেশন সমালোচিত হয়েছে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারির সময় গেটস নানা ষড়যন্ত্রতত্ত্বের শিকার হন।
রয়টার্সকে তিনি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে সম্প্রতি বেশ কয়েকবার তার কথা হয়েছে। ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর দু'বার গেটস তার সঙ্গে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।
'পৃথিবীর কিছু মূল্যবোধ রয়েছে। আমার বাবা-মা আমাকে সেটাই শিখিয়েছেন,' বলেন গেটস।