ভারতের সামরিক অভিযান ‘আসন্ন’, আমার এমন বক্তব্য ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে: পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী

সোমবার (২৮ এপ্রিল) পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ স্পষ্ট করে বলেছেন, সম্প্রতি কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর 'ভারতের সামরিক অভিযান আসন্ন'— তার এমন বক্তব্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগামে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন পর্যটক। এটি ২০০০ সালের পর কাশ্মীর অঞ্চলে অন্যতম ভয়াবহ সশস্ত্র হামলা।
প্রথমে দায় স্বীকার করে বার্তা দিলেও, পরে 'কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স' বা 'দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট' স্পষ্টভাবে হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে।
প্রমাণ ছাড়াই ভারত হামলাকারীদের সাথে সীমান্ত পারে সংযোগ থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে পাকিস্তান জোর দিয়ে হামলায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। হামলার পর ভারতজুড়ে একাধিক সামরিক মহড়া চালিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী।
এ ঘটনার পর থেকে পরমাণু অস্ত্রধারী দুই দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে।
২৮ এপ্রিল ইসলামাবাদে নিজের কার্যালয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানি প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, 'আমরা আমাদের বাহিনী জোরদার করেছি, কারণ এখন পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে হামলা যে কোনো সময় হতে পারে। সেই অনুযায়ী কিছু কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
তিনি জানান, ভারতের বক্তব্য যতই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ততই সরকারকে সম্ভাব্য ভারতীয় হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছে। তবে হামলার আসন্ন মনে করার পেছনে কী কারণ রয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি আসিফ।
কাশ্মীরে হামলার পর ভারত দাবি করে, অভিযুক্ত দুই হামলাকারী পাকিস্তানি। তবে ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করে নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
খাজা আসিফ বলেন, পাকিস্তান সতর্ক অবস্থানে আছে এবং দেশের অস্তিত্বের ওপর সরাসরি হুমকি এলে তবেই পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের কথা ভাবা হবে।
টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'আমাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে, কারণ যুদ্ধের শঙ্কা রয়েছে। আগামী এক থেকে চার দিনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হতে পারে—এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।'
তবে পরে জিও নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আসিফ বলেন, তার বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, 'আমি বলেছিলাম পরবর্তী দুই-তিন দিন গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটা বলিনি যে যুদ্ধ নিশ্চিতভাবেই শুরু হবে।' তিনি আরও জানান, টেলিভিশন চ্যানেলটি ইতোমধ্যে ভুল সংশোধনের কাজ শুরু করেছে।
তিনি বলেছেন, 'এতে কোনো সন্দেহ নেই' যে বিপদ ঘনিয়ে আসছে। তবে, 'আমি এটি যে অনিবার্য, আমি তেমন কিছু বলিনি।'
আসিফ জানিয়েছেন, এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলো কোনো বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতি এড়ানোর এবং বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, 'যদি দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হয় বা যুদ্ধ চাপানো হয়, যেকোনো যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পাকিস্তান সম্পূর্ণ প্রস্তুত।'
তিনি উল্লেখ করেন, তিনি বলেছেন যে আগামী কয়েকদিনে যুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে, তবে এটি এড়ানোও সম্ভব।