পাকিস্তানে পানির প্রবাহ বন্ধে তিনস্তরের পরিকল্পনায় ভারত: স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী কৌশল

পহেলগামে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর পাকিস্তানে ভারত থেকে নদীর পানি প্রবাহ বন্ধে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী সিআর পাতিল।
শুক্রবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাথে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর তিনি জানান, এ বিষয়ে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসকে তিনি বলেন, "অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে একটি রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। বৈঠকে তিনটি বিকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সরকার স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার ওপর কাজ করছে যাতে পাকিস্তানে এক ফোঁটাও পানি না পৌঁছায়।"
তিনি আরও বলেন, "শিগগিরই নদী থেকে পলি অপসারণের মাধ্যমে পানির প্রবাহ বন্ধ ও অন্যদিকে সরানোর কাজ শুরু হবে।" এই সিদ্ধান্তকে তিনি "ঐতিহাসিক" এবং "জাতীয় স্বার্থে সম্পূর্ণ ন্যায়সঙ্গত" বলে অভিহিত করেন।
এক্স-এ (পূর্বের টুইটার) এক পোস্টে তিনি লেখেন, "আমরা নিশ্চিত করব যে সিন্ধু নদীর একফোঁটা পানিও যেন পাকিস্তানে না পৌঁছায়।"
ইন্দাস (সিন্ধু) চুক্তি স্থগিত: তিনস্তরের পরিকল্পনা
শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে ভারত সরকার তিন ধাপের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে — স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী — পাকিস্তানে ভারতের নদীগুলোর পানি প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ করার লক্ষ্যে।
যদিও নির্দিষ্ট কারিগরি পদক্ষেপগুলো প্রকাশ করা হয়নি, তবে মন্ত্রী জানান, স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নদীগুলোর পলি অপসারণ প্রাধান্য পাবে। এতে নদীর ধারণক্ষমতা বাড়বে এবং পানির প্রবাহ আন্তর্জাতিক সীমানা থেকে সরিয়ে নেওয়া সহজ হবে।
মন্ত্রী ইঙ্গিত দেন, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী কৌশলের অংশ হিসেবে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং নীতিগত হস্তক্ষেপের পরিকল্পনাও রয়েছে। তিনি বলেন, "সরকার কাজ করছে... যাতে পাকিস্তানে এক ফোঁটাও পানি না যায়।"
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা কমিটির (সিসিএস) বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে ইন্দাস (সিন্ধু) জলচুক্তি স্থগিতের পদক্ষেপ নেয় ভারত।
পাকিস্তানের হুঁশিয়ারি: 'লাইফলাইন' নিয়ে সতর্কবার্তা
ভারতের পদক্ষেপের কড়া প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান সিন্ধু জলচুক্তিকে তাদের '২৪ কোটি জনগণের জীবনরেখা' (লাইফলাইন) বলে উল্লেখ করেছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি বৈঠকে— ভারতের বিরুদ্ধে বেশকিছু প্রতিকূল পদক্ষেপের ঘোষণাও দেওয়া হয়।
এর মধ্যে রয়েছে ভারতীয় এয়ারলাইন্সের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া, ওয়াঘা-আটারি সীমান্তপথে যাতায়াত বন্ধ, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য স্থগিত, এবং সার্ক ভিসা স্কিমের আওতায় ভারতীয়দের (শিখ তীর্থযাত্রী ব্যতীত) ভিসা বন্ধ করা। এছাড়া, পাকিস্তান ভারতীয় হাইকমিশনের সামরিক উপদেষ্টাদের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশও দিয়েছে।
জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকের পর পাকিস্তান এক বিবৃতিতে জানায়, "ইন্দাস জলচুক্তির অধীনে পানির গতিপথ পরিবর্তনের যেকোনো প্রচেষ্টা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হবে। ভারতকে তার রাজনৈতিক স্বার্থে পহেলগামে হামলার মতো ঘটনাগুলোকে ব্যবহারের নীতিহীনতা থেকে বিরত থাকতে হবে।"
ওই হামলার পর থেকে পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, যেখানে পানির ইস্যু এখন বিরোধের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।