কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় শোক জানালেন বিশ্বনেতারা

কাশ্মীরের পেহেলগামে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। হামলার পর ভারতকে সান্ত্বনা ও সহমর্মিতা জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার এই হামলাকে 'চরম বেদনাদায়ক' বলে অভিহিত করেছেন। এক্স-এ দেওয়া বার্তায় তিনি বলেন, 'কাশ্মীরে আজকের ভয়াবহ জঙ্গি হামলা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। ক্ষতিগ্রস্তদের, তাদের পরিবার এবং ভারতের জনগণের প্রতি আমার সমবেদনা রইল।'
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ হামলার নিন্দা জানিয়ে এক্স-এ লিখেছেন, 'পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বর্বর এই জঙ্গি হামলার আমরা কঠোর নিন্দা জানাই। নিহতদের পরিবার ও আহতদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি ও দ্রুত আরোগ্য কামনা রইল। ভারতের জনগণের প্রতি রইল আমাদের গভীর সমবেদনা।'
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেনও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান জানান। এক্স-এ দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেন, 'পেহেলগাম থেকে এসেছে মর্মান্তিক খবর। ডেনমার্ক ভারতের পাশে রয়েছে এবং সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে অবস্থান নিচ্ছে। হামলায় নিহতদের ও তাঁদের পরিবারের প্রতি রইল আমাদের শোক ও সমবেদনা।'
গায়ানার প্রেসিডেন্ট ইরফান আলি এই জঙ্গি হামলায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, 'কাশ্মীরে সম্প্রতি সংঘটিত জঙ্গি হামলার খবরে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। বহু মানুষের প্রাণহানি ও আহত হওয়ার এই বর্বর হামলা আমাদের মনে করিয়ে দেয় উগ্রবাদের কত ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে।'
তিনি আরও লেখেন, 'আমি এই নির্মম হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। এটি শুধু আতঙ্ক ও দুঃখ বাড়ানোর জন্যই সংঘটিত হয়েছে। সহিংসতা কখনো কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না; বরং এটি কেবল ব্যথা ও ক্ষতির চক্রকে দীর্ঘায়িত করে। আমাদের শান্তি ও সহনশীলতার জন্য কাজ করতে হবে।'
ইরফান আলি বলেন, 'যারা এই ভয়াবহ হামলার পেছনে রয়েছে, আমি নিশ্চিত তারা শাস্তি পাবেন। নিহতদের পরিবার ও প্রিয়জনদের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা। এই দুঃসময় তারা আমার ভাবনায় রয়েছেন। চলুন, আমরা একসঙ্গে সহিংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়াই এবং সহানুভূতির সংস্কৃতি গড়ে তুলি।'
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লায়েনও ভারতের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। এক্স-এ তিনি লেখেন, 'পেহেলগামে আজকের নোংরা সন্ত্রাসী হামলায় অনেক নিরীহ প্রাণ হারিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং শোকাহত প্রতিটি ভারতীয় হৃদয়ের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা। তবে আমি জানি, ভারতের মনোবল অটুট থাকবে। আপনারা এই কঠিন সময় পার করে উঠবেন এবং ইউরোপ আপনাদের পাশে থাকবে।'
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ এই হামলাকে নির্মম ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, 'এই সহিংসতার কোনো যুক্তি নেই এবং অস্ট্রেলিয়া তা ঘৃণাভরে নিন্দা জানায়।' এক্স-এ তিনি লেখেন, 'কাশ্মীরে নিরীহ বেসামরিকদের ওপর ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার খবরে আমি স্তব্ধ। আহতদের প্রতি, প্রিয়জন হারানো মানুষদের প্রতি এবং এই দুঃসংবাদের দ্বারা প্রভাবিত প্রত্যেক অস্ট্রেলিয়াবাসীর প্রতি আমাদের সহানুভূতি রইল।'
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওয়ং-ও এক্স-এ এক পোস্টে বলেন, 'কাশ্মীরের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সবার প্রতি আমার সমবেদনা রইল।'
ভারতীয় বংশোদ্ভূত উদ্যোক্তা ও রিপাবলিকান নেতা বিবেক রামাস্বামী এক্স-এ লেখেন, 'এই হামলা ভয়াবহ। যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের পরিবারের প্রতি আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।'
নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স বলেন, 'কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার কঠোর নিন্দা জানাচ্ছে নিউজিল্যান্ড। নিহতদের পরিবার ও ভারতের জনগণের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা। এই কঠিন সময়ে আমরা ভারতের পাশে আছি।'
এস্তোনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারগুস চাহকনা এক্স-এ লেখেন, 'পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। নিহতদের পরিবার এবং প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের সমবেদনা রইল। নিরীহ মানুষের ওপর সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদের সব রূপের বিরুদ্ধে এস্তোনিয়া দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেয়।'
সাইপ্রাসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, 'কাশ্মীরের পেহেলগামে যে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, সাইপ্রাস তা ঘৃণাভরে নিন্দা জানায়। ভারত সরকার ও জনগণের প্রতি আমাদের পূর্ণ সংহতি রইল। নিহত ও আহতদের পরিবারদের জন্য আমাদের প্রার্থনা।'
ভারতে অবস্থিত ইউক্রেন দূতাবাস এক্স-এ প্রকাশিত এক বার্তায় জানায়, 'কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। নিরীহ মানুষকে হত্যা করায় যে বেদনা হয়, তা আমরা প্রতিদিন অনুভব করি। সন্ত্রাসবাদের সব রূপের আমরা নিন্দা জানাই এবং অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।'
ভারতে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আবদুলনাসের আলশায়লি এক্স-এ লেখেন, 'কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা। ভারতের জনগণের পাশে আমরা রয়েছি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।'
শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্স-এ এক বিবৃতিতে জানায়, 'কাশ্মীরের পেহেলগামে সংঘটিত জঘন্য সন্ত্রাসী হামলার আমরা কড়া নিন্দা জানাই। নিহতদের পরিবারদের প্রতি আমাদের হৃদয় থেকে শোক জানাই এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি।'
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'সন্ত্রাসবাদের সব রূপ ও প্রকাশের বিরুদ্ধে ভারতের সরকার ও জনগণের সঙ্গে আমাদের দৃঢ় সংহতি রয়েছে। আমরা আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি আমাদের অটল প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।'
এদিকে, পেহেলগাম হামলার পর পরিস্থিতি পর্যালোচনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শ্রীনগরে উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা বৈঠকে বসেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ওই বৈঠকে জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ তাঁকে হামলার বিষয়ে অবহিত করেন। বৈঠকে লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
হামলার পর অভিযুক্তদের ধরতে পেহেলগামের বাইসরান এলাকা ঘিরে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে সেনাবাহিনী ও কাশ্মীর পুলিশ।
হামলার প্রতিবাদে কাশ্মীরের বিভিন্ন জায়গায় মোমবাতি মিছিল করেছে সাধারণ মানুষ।
উল্লেখ্য, পেহেলগামের সন্ত্রাসী হামলার কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তাঁদের বিদেশ সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসেন।