যুক্তরাষ্ট্রের ঝুঁকির ভয়ে সুইস ব্যাংকে হিসাব খুলছেন ধনী মার্কিনিরা

সম্পদের বৈচিত্র্য আনার লক্ষ্য থেকে শুরু করে রাজনৈতিক উদ্বেগ—বিভিন্ন কারণে সুইজারল্যান্ডে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলছেন ধনাঢ্য মার্কিন নাগরিকরা। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সুইস ব্যাংকগুলোতে এমন গ্রাহকের সংখ্যা আশানুরূপ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আর্থিক পরামর্শ প্রতিষ্ঠান আলপেন পার্টনার্স ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী পিয়েরে গ্যাব্রিস বলেন, 'এটা একপ্রকার ঢেউয়ের মতো আসে। বারাক ওবামা যখন নির্বাচিত হয়েছিলেন, তখন একটি বড় ঢেউ এসেছিল। কোভিডের সময় আরেকটি। এখন আবার শুল্কের কারণে নতুন একটি ঢেউ উঠছে।'
তিনি জানান, মার্কিন গ্রাহকদের কেউ কেউ ডলারের ওপর নির্ভরতা কমাতে চান। তাদের বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান ঋণের কারণে ডলারের মান আরও কমে যেতে পারে। সুইজারল্যান্ডের রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা, স্থিতিশীল অর্থনীতি, শক্তিশালী মুদ্রা এবং নির্ভরযোগ্য আইনি কাঠামো অনেকের কাছেই আকর্ষণীয়।
আবার অনেকেই মার্কিন রাজনীতিতে অস্থিরতা এবং ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে আইনের শাসনের দুর্বলতার আশঙ্কায় সুইস অ্যাকাউন্ট খুলছেন। কারও উদ্দেশ্য আবার সুইজারল্যান্ডে সোনার বার কেনা বা সংরক্ষণ, যেটি দেশটি ঐতিহ্যগতভাবে বিখ্যাত।
গ্যাব্রিস আরও জানান, অনেকে ইউরোপে নাগরিকত্ব বা রেসিডেন্সি পেতে চাইছেন, সেখানে বাড়ি কিনতে আগ্রহী। তিনি বলেন, 'এটা তাদের বিকল্প পরিকল্পনা।'
সুইজারল্যান্ডে অ্যাকাউন্ট খোলা খুব একটা কঠিন নয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া হিসাব-নিকাশ ও তথ্য প্রকাশের নিয়ম মানতে হয়। বড় মার্কিন ব্যাংকগুলো সরাসরি সুইস অ্যাকাউন্ট খুলতে না পারলেও তারা এমন কিছু সুইস কোম্পানির সঙ্গে কাজ করে যারা মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসিতে নিবন্ধিত এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বিনিয়োগ গ্রাহক হিসেবে গ্রহণ করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি) নিবন্ধিত মার্কিন ক্লায়েন্টদের জন্য বৃহত্তম সুইস ব্যাংক বলে বিবেচিত ভনটোবেল এসবিএফএ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে সুইস প্রাইভেট ব্যাংক পিকট জানায়, তাদের এসইসি-নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান পিকট নর্থ আমেরিকা অ্যাডভাইজার্সে ক্লায়েন্টদের অনুরোধে 'উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি' দেখা যাচ্ছে।
আগে যেখানে সুইস ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা মানেই কর ফাঁকি দেওয়ার সম্ভাবনা ভাবা হতো, এখন এসব প্রক্রিয়া অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত ও স্বচ্ছ। পূরণ করতে হয় প্রয়োজনীয় কর ফর্ম, দিতে হয় রিপোর্টিং।
গ্যাব্রিস বলেন, 'অনেক মার্কিনি এখন বুঝতে পারছেন, তাদের পুরো সম্পদই ডলারে রাখা। তাই তারা ভাবছেন—'হয়তো কিছুটা বৈচিত্র্য আনা দরকার।'