‘রাশিয়ার বয়ান’ ছড়াচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ: জেলেনস্কি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ 'রাশিয়ার বয়ান' ছড়াচ্ছেন। সম্প্রতি ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উইটকফ ইঙ্গিত দেন, রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তিচুক্তি মূলত পাঁচটি ইউক্রেনীয় অঞ্চলকে ঘিরেই।খবর বিবিসির।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টার বৈঠকের পর উইটকফ বলেন, 'এই কথিত পাঁচটি অঞ্চল নিয়েই আলোচনার মূল বিষয়।'
এই মন্তব্যের পর বৃহস্পতিবার কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেন, 'আমি মনে করি, উইটকফ রাশিয়ার কৌশলই অনুসরণ করছেন। এটা খুবই বিপজ্জনক—হোক তা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত—কারণ তিনি রাশিয়ার বয়ান ছড়াচ্ছেন।'
উইটকফ যে পাঁচটি অঞ্চলকে কেন্দ্র করে শান্তিচুক্তির কথা বলছেন, সেগুলো হচ্ছে—দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝঝিয়া এবং খেরসন। অঞ্চলগুলো ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এবং বর্তমানে রাশিয়ার দখলে রয়েছে। পঞ্চম অঞ্চল হিসেবে ধরা হচ্ছে ক্রিমিয়া, যেটি ২০১৪ সালে রাশিয়া একতরফাভাবে দখল করে নেয়, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়।
জেলেনস্কি বলেন, 'এই অঞ্চলগুলো আমাদের, এগুলো আমাদের জনগণের। শুধু বর্তমান প্রজন্ম নয়, ভবিষ্যৎ ইউক্রেনীয়দেরও। কাজেই উইটকফ আসলে কী বলছেন, তা আমি বুঝতে পারছি না।'
এর আগে ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উইটকফ বলেন, 'এই শান্তিচুক্তির বিষয়বস্তু হলো এই কথিত পাঁচ অঞ্চল। তবে বিষয়টা আসলে এর চেয়েও অনেক বেশি গভীর... আমি মনে করি, বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটার দ্বারপ্রান্তে আমরা।'
তিনি আরও বলেন, 'এছাড়া আমার বিশ্বাস, রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক পুনর্গঠনের একটা সুযোগ রয়েছে, যেটা কিছু আকর্ষণীয় বাণিজ্যিক সম্ভাবনার মাধ্যমে সম্ভব হতে পারে—যা এই অঞ্চলকে স্থিতিশীল করতেও সাহায্য করবে।'
এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। এর মধ্যেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের এমন অভিযোগ নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
উল্লেখ্য, উইটকফকে এর আগেও প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছিলেন জেলেনস্কি। গত মার্চে তিনি বলেছিলেন, 'তিনি কোনো সামরিক ব্যক্তি নন। একজন জেনারেলের মতোও দেখায় না। আমার জানা মতে, তিনি ভালো রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী, যেটা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক দক্ষতা।'
এই মন্তব্যটি আসে প্যারিসে অনুষ্ঠিত এক কূটনৈতিক বৈঠকের পর, যেখানে ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের শীর্ষ কূটনীতিকেরা অংশ নিয়েছিলেন। ওই আলোচনায় উইটকফ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।
এদিকে বৃহস্পতিবার ডোনাল্ড ট্রাম্পও জেলেনস্কিকে নতুন করে সমালোচনা করেন। যদিও তিনি আগের সেই মন্তব্য থেকে কিছুটা সরে আসেন যেখানে তিনি বলেছিলেন, যুদ্ধ শুরুর জন্য জেলেনস্কিই দায়ী। এবার ট্রাম্প বলেন, 'আমি জেলেনস্কিকে দায়ী করছি না, তবে বলতে চাই—তিনি যে খুব একটা ভালো কাজ করেছেন, এমনও বলা যাবে না। আমি তার ভক্ত নই।'
একই সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি দাবি করেন, চীন রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করছে। তার ভাষায়, 'আমরা অবশেষে প্রমাণ পেয়েছি যে, চীন রাশিয়াকে অস্ত্র দিচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস, কিছু অস্ত্র উৎপাদনে রাশিয়ার ভেতরেই চীনের প্রতিনিধিরা যুক্ত রয়েছেন।'
তবে এই অভিযোগের বিষয়ে চীন এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। এর আগে চীন নিজেকে যুদ্ধের নিরপেক্ষ পক্ষ হিসেবে তুলে ধরেছে।
তবে গত সপ্তাহে জেলেনস্কির এক বক্তব্যে তিনি দাবি করেছিলেন, রুশ বাহিনীতে চীনা নাগরিকরাও যুদ্ধ করছে। তখন বেইজিং পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বলেছিল, 'প্রাসঙ্গিক পক্ষগুলো যেন চীনের ভূমিকা সঠিকভাবে বোঝে এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য না করে।'