অব্যাহতি দেওয়ার কয়েকদিন পরই স্মার্টফোনে নতুন শুল্কারোপের হুমকি ট্রাম্পের

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, চীনে তৈরি স্মার্টফোন ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যে শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া হবে না, বরং সেগুলোকে কেবল নতুন শুল্ক 'ঝুড়িতে' স্থানান্তর করা হচ্ছে।
এসব পণ্যের অনেকগুলোকে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে—শুক্রবারের এমন অফিশিয়াল ঘোষণার পর সোমবার সকালে ইউরোপের শেয়ারবাজারে চাঙাভাব দেখা গেছে।
ট্রাম্পকে নতুন এই শুল্কনীতি 'সম্পূর্ণ বাতিল' করার আহ্বান জানিয়ে তাকে 'পারস্পরিক শ্রদ্ধার সঠিক পথে ফিরে আসতে' বলেছে চীন।
তবে রোববার মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, এসব পণ্যের ওপর 'সেমিকন্ডাক্টর শুল্ক' আরোপ করা হবে। আর এই বিষয়ে ট্রাম্প পরে আরও বিস্তারিত জানাবেন।
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, নতুন এই শুল্ক পূর্বে ঘোষিত বৈশ্বিক শুল্কের বাড়তি হিসেবে কার্যকর হবে। চলতি মাসের শুরুতে আরোপ করা সেই শুল্ক পরে ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়।
'আমাদের ওষুধ, সেমিকন্ডাক্টর ও ইলেকট্রনিকস আমেরিকাতেই তৈরি হওয়া দরকার,' বলেন তিনি।
শনিবার মার্কিন কাস্টমসের এক নোটিশে জানানো হয়েছিল, স্মার্টফোন, কম্পিউটার ও কিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইস ১২৫ শতাংশ শুল্ক থেকে রেহাই পাবে।
তবে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, এসব পণ্যে কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি এবং এমন খবর মিথ্যা। তার ভাষ্যমতে, 'এগুলোকে (পণ্যগুলোকে) শুধু আরেকটি "শুল্কঝুড়িতে" সরানো হয়েছে।'
ট্রাম্প আরও বলেন, 'আসন্ন জাতীয় নিরাপত্তা শুল্ক তদন্তে আমরা সেমিকন্ডাক্টর এবং গোটা ইলেকট্রনিকস সরবরাহ চেইনের ওপর নজর দিচ্ছি।'
সোমবার সেমিকন্ডাক্টর শুল্ক নিয়ে নতুন তথ্য জানাবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
স্মার্টফোন ও ল্যাপটপের মতো নিত্যব্যবহার্য যন্ত্রপাতি সেমিকন্ডাক্টরের ওপর নির্ভরশীল। এই ছোট অথচ শক্তিশালী প্রযুক্তিটি আধুনিক কম্পিউটিংয়ের মূলভিত্তি।
এদিকে সোমবার সনি জানিয়েছে, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে তাদের প্রধান গেম কনসোল প্লেস্টেশন ৫-এর দাম ১০ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে 'চ্যালেঞ্জিং অর্থনৈতিক পরিবেশ', মূল্যস্ফীতি এবং বিনিময় হারের অস্থিতিশীলতা। তবে যুক্তরাষ্ট্রে দাম বাড়ানোর কথা বলেনি তারা।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ট্রাম্পের এই ছাড়কে 'ছোট পদক্ষেপ' আখ্যা দিয়ে বলেছে, বেইজিং এই সিদ্ধান্তের 'প্রভাব খতিয়ে দেখছে'।
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মাঝে উত্তেজনা কমার সম্ভাবনায় পানি ঢেলে দিচ্ছে।
রোববার ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ জেমিসন গ্রিয়ারকে প্রশ্ন করা হয় ট্রাম্প চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলবেন কি না।
তিনি সোজাসুজি বলেন, 'এই মুহূর্তে সেরকম কোনো পরিকল্পনা নেই।'
এপ্রিলের শুরুতে ট্রাম্প চীন থেকে আমদানি হওয়া পণ্যে ৫৪ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করেন। পরে তা বাড়িয়ে ১৪৫ শতাংশে উন্নীত করেন।
পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীন মার্কিন পণ্যের ওপর প্রথমে ৩৪ শতাংশ, পরে ৮৪ শতাংশ এবং সর্বশেষ ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যা শনিবার থেকে কার্যকর হয়েছে।
গত সপ্তাহে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, যুক্তরাষ্ট্র যদি জোর করে শুল্ক বা বাণিজ্যযুদ্ধ চাপিয়ে দিতে চায়, তাহলে চীন 'শেষ পর্যন্ত লড়বে'।
শনিবার ট্রাম্প জানান, আগামী সপ্তাহের শুরুতেই তিনি শুল্ক অব্যাহতি-সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য জানাবেন।
হোয়াইট হাউস বলেছে, এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত মূলত অন্যান্য দেশের কাছ থেকে আরও সুবিধাজনক বাণিজ্য চুক্তি আদায়ের কৌশল।
ট্রাম্প বলছেন, তার এই শুল্কনীতি বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থার অন্যায্য দিকগুলো সংশোধন করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি ও কারখানা ফিরিয়ে আনবে।
তবে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের কারণে শেয়ারবাজারে ব্যাপক ওঠানামা দেখা দিয়েছে। সেইসঙ্গে বিশ্ব বাণিজ্যে অবনতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে—যার প্রভাব পড়তে পারে চাকরি ও স্থানীয় অর্থনীতিতে।