ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিতের সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে বড় উত্থান

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশিরভাগ দেশের পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক স্থগিত করে ১০ শতাংশ আমদানি কর আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে বড় উত্থান ঘটে। খবর বিবিসি'র।
হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, যেসব বাণিজ্য অংশীদার আলোচনা করতে রাজি হয়েছে, তাদের জন্য শুল্ক কমানো হবে। তবে ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করার কথা বলেছেন এবং তা 'অবিলম্বে কার্যকর' হবে।
ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের পরদিন এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ৯.৫ শতাংশ বেড়ে ২০০৮ সালের পর একদিনে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। সর্বশেষ দফার শুল্ক কার্যকরের ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ভিয়েতনামের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর নতুন করে ৪৬ শতাংশ কর আরোপ করা হয়।
এই শুল্ক প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ছিল এবং ওয়াল স্ট্রিটকে হতবাক করে দেয়। এর ফলে এসঅ্যান্ডপি সূচক ১০ শতাংশের বেশি পড়ে যায় এবং বিশ্লেষকরা মন্দার শঙ্কা প্রকাশ করেন। বন্ডবাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, এবং বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বন্ড বিক্রি করতে শুরু করেন।
ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ পল অ্যাশওয়ার্থ বলেন, 'শেয়ারবাজারে ধসের পরেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রতিরোধ করেছিলেন। তবে বন্ডবাজার দুর্বল হলে তাঁর পিছু হটাটা সময়ের ব্যাপার ছিল।' তিনি বলেন, ট্রাম্প ১০ শতাংশ সর্বজনীন শুল্কের পরিকল্পনায় ফিরে আসতে পারেন। তবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি সমঝোতা হতে কিছু সময় লাগবে।
দিন শেষে ডাও সূচক ৭.৮ শতাংশ এবং নাসডাক ১২ শতাংশ বেড়ে যায়। নাইকির শেয়ার ১১ শতাংশ এবং অ্যাপলের শেয়ার ১৫ শতাংশ বেড়ে যায়। তবে, ট্রাম্পের ঘোষণার আগের অবস্থার তুলনায় প্রধান সূচকগুলো এখনো নিচে রয়েছে।
চীনের পণ্যের ওপর শুল্ক এখনো বড় অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর চীন যুক্তরাষ্ট্রে ৪০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি পণ্য রপ্তানি করেছে। শুধু জানুয়ারিতেই যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকৃত জুতার প্রায় ৬০ শতাংশ ও পোশাকের প্রায় ৩৬ শতাংশ এসেছিল চীন থেকে।
ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশন সতর্ক করেছিল, শুল্কের কারণে মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরগুলো দিয়ে পণ্য পরিবহণ ২০ শতাংশ কম হতে পারে।
বুধবার ট্রাম্প জানান, তিনি চীনের সঙ্গে চুক্তি করতে আগ্রহী এবং কিছু কোম্পানির জন্য শুল্ক থেকে ছাড় দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করছেন। তিনি বলেন, 'গত রাতে দেখলাম, অনেকে কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল।' তবে গাড়ি, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো খাতগুলোর ওপর শুল্ক আরোপে তিনি এখনো অটল।
ইলন মাস্ক, বিলিয়নিয়ার বিনিয়োগকারী বিল অ্যাকম্যান এবং বারস্টুল স্পোর্টসের প্রতিষ্ঠাতা ডেভ পোর্টনয়সহ গত বছরের নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্পের সমর্থক অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ও ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক চাপের মুখে পাল্টা শুল্ক থেকে সাময়িক অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেন ট্রাম্প। তার এই আকস্মিক সিদ্ধান্ত অনেককেই বিস্মিত করে।
ট্রাম্প তার সিদ্ধান্ত সামাজিক যোগাযগমাধ্যমে পোস্ট করার পর গোল্ডম্যান স্যাকস শুল্কের কারণে মন্দার পূর্বাভাস দেয় এবং দুই ঘণ্টা পর তারা পূর্ববর্তী পূর্বাভাসে ফিরে যায়, যেখানে শুল্কের তুলনায় কম শুল্ক ধরেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কম এবং মন্দার সম্ভাবনা ৪৫ শতাংশ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।
পূর্বে ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির আহ্বান জানানো বিল অ্যাকম্যান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্পের প্রশংসা করে বলেন, 'সব আমেরিকানদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।'