যেভাবে মুসলিমদের ১৪ বিলিয়ন ডলারের ওয়াকফ সম্পদ ভারত সরকার নিয়ন্ত্রণে নিতে চাইছে

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের উজ্জেইন শহরে কর্তৃপক্ষ বুলডোজার দিয়ে বাড়ি, দোকান এবং একটি শতাব্দীপ্রাচীন মসজিদসহ ২৫০টিরও বেশি সম্পত্তি ধ্বংস করে। এভাবে ৫ দশমিক ২৭ একর জমি খালি করা হয়।
এই জমি মধ্যপ্রদেশ ওয়াকফ বোর্ডের আওতাভুক্ত। 'ওয়াকফ' একটি আরবি শব্দ, যার মাধ্যমে মুসলিমরা ধর্মীয় বা জনহিতৈষী উদ্দেশ্যে আল্লাহর নামে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি দান করেন। মসজিদ, স্কুল, কবরস্থান, এতিমখানা, হাসপাতাল বা খালি জমিও এর অন্তর্ভূক্ত হতে পারে। এ ধরনের দানকৃত সম্পত্তি বিক্রয় বা অন্য কোনো ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
কিন্তু উজ্জেইনের এই ওয়াকফ জমি শহরের বিখ্যাত মহাকালেশ্বর মন্দিরকে ঘিরে 'মহাকাল করিডোর' নামের একটি ১ বিলিয়ন ডলারের সরকারি প্রকল্পের জন্য খালি করা হয়েছে।
ভারতে ২০ কোটিরও বেশি মুসলিম বসবাস করেন এবং দেশটিতে ঐতিহাসিকভাবে সবচেয়ে বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। প্রায় ১০ লাখ একরের এসব জমির ওপর ৮ লাখ ৭২ হাজারেরও বেশি স্থাপনা রয়েছে।
এই সম্পত্তির আনুমানিক মূল্য ১৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। এসব সম্পত্তি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ওয়াকফ বোর্ডগুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
ওয়াকফ বোর্ডগুলো ভারতের সবচেয়ে বড় নগর ভূমিমালিকদের মধ্যে পড়ে এবং সেনাবাহিনী ও রেলওয়ের পরেই এদের অবস্থান।
ভারতীয় লোকসভায় গত সপ্তাহেই দশকপ্রাচীন ওয়াকফ আইনের সংশোধনী বিল পাস করা হয়। এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) প্রস্তাবিত এই সংশোধনী বিল ওয়াকফ সম্পত্তির ওপর সরকারের অভূতপূর্ব নিয়ন্ত্রণ দিতে পারে।
মুসলিম গোষ্ঠীগুলি অভিযোগ করছে যে মোদি প্রশাসন সংসদীয় শক্তি ব্যবহার করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আরও প্রান্তিক করছে।
মুসলিম গোষ্ঠীগুলোর অভিযোগ, মোদি প্রশাসন সংসদীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আরও প্রান্তিক করে তুলছে।
টেলিভিশন স্টুডিওতে এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে। অনেক কর্মী ও আইনজীবী উজ্জেইনের ঘটনাকে বহুদিন ধরে ওয়াকফ সম্পত্তির ওপর চলমান অব্যবস্থাপনা ও দখলের প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন—যা নতুন আইন সংশোধনের মাধ্যমে আরও খারাপ হতে পারে।
সরাসরি আইন লঙ্ঘন
আয়তনে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজ্য মধ্যপ্রদেশ গত ২২ বছরের বেশিরভাগ সময়ই বিজেপির শাসনাধীন ছিল। কেবল ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত কিছুটা সময় কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা উজ্জেইনের বিজেপি নেতা মোহন যাদব ২০২৮ সালের কুম্ভ মেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, এটি [কুম্ভ মেলা] একটি হিন্দু তীর্থযাত্রা, যা প্রতি ১২ বছর পর শহরের শিপ্রা নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়। মহাকালেশ্বর মন্দির ঘিরে থাকা ওয়াকফ সম্পত্তি ধ্বংস করে এই মেলার জন্য জমি অধিগ্রহণ করার অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
সমালোচকদের মতে, রাজ্য সরকার ১৯৮৫ সালের একটি সরকারি গেজেট উপেক্ষা করেছে, যেখানে উজ্জেইনের ওই জায়গাটি মুসলিম কবরস্থান হিসেবে চিহ্নিত ছিল। এখানে ২ হাজার মুসল্লি ধারণক্ষমতার একটি ঐতিহাসিক মসজিদও ছিল।
পরবর্তীতে, প্রভাবশালী রাজনৈতিক ক্ষমতাসম্পন্ন নির্মাতারা অবৈধভাবে এখানে আবাসিক কলোনি তৈরি করে প্লট বিক্রি করেন। ফলে ২৫০টিরও বেশি স্থায়ী কাঠামো গড়ে ওঠে, যা জানুয়ারিতে ভেঙে ফেলা হয়।
একটি সরকারি অধিগ্রহণ নথি থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের জুনে উজ্জেইনের রাজস্ব বিভাগের একজন কর্মকর্তা ওয়াকফ জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছিলেন। ওই নথিতে তিনি লেখেন যে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে ১৯৮৫ সালের গেজেট দেখিয়েছেন, যা প্রমাণ করে এটি ওয়াকফ জমি।
ওই কর্মকর্তা পরামর্শ দিয়েছিলেন, জমি অধিগ্রহণের আগে রাজ্য সরকারকে ওয়াকফ বোর্ড থেকে 'নো অবজেকশন সার্টিফিকেট' (অনাপত্তি সনদ) নিতে হবে। কিন্তু এক মাস পর উজ্জেইন জেলা প্রশাসন একটি আদেশ জারি করে জানায়, 'সামাজিক উদ্দেশ্যে জমি অধিগ্রহণের জন্য কোনো অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই'।
উজ্জেইনের দখলের বিরুদ্ধে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা আইনজীবী সোহাইল খান বলেন, 'এই অধিগ্রহণ সরাসরি ওয়াকফ আইনের লঙ্ঘন।'
যদিও সরকার জানুয়ারিতে গুঁড়িয়ে দেওয়া বাড়ি ও দোকানের জন্য মালিকদের ৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন যে ওয়াকফ বোর্ড কেন এই অর্থ দাবি করেনি, যেখানে জমিতে অবৈধভাবে ঘর ও দোকান নির্মাণ করা হয়েছিল।
মধ্যপ্রদেশ ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান ও উজ্জেইনের বিজেপি নেতা সানাওয়ার প্যাটেলের কাছে কেন তিনি অধিগ্রহণের বিরোধিতা করেননি বা ক্ষতিপূরণ দাবি করেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'দল যা বলবে, আমি তাই করব। কারণ আমি দলের মাধ্যমেই এখানে এসেছি।'
তিনি আরও জানান, ওয়াকফ বোর্ড উজ্জেইনের জেলা প্রশাসনকে একটি চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছিল, যেন অবৈধ দখলদারদের ক্ষতিপূরণ না দেওয়া হয়। তবে তিনি ব্যাখ্যা করেননি কেন তিনি প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালতে যাননি। প্যাটেল আরও স্বীকার করেন, রাজ্যের ৯০ শতাংশেরও বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি হয় দখলদারদের দখলে রয়েছে, নয়তো আদালতে মামলায় জড়িয়ে আছে।
অন্যদিকে, মধ্যপ্রদেশ বিজেপির মুখপাত্র আশীষ আগরওয়াল দাবি করেছেন, উজ্জেইনের জমি 'প্রয়োজন অনুযায়ী এবং আইন মেনেই' অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তবে তিনি এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না
ভারতের ওয়াকফ বোর্ডগুলো গঠিত হয় ১৯৫৪ সালের ওয়াকফ আইনের আওতায়। তখন থেকেই মুসলিমরা সরকারের সহায়তায় এসব বোর্ড পরিচালনা করে আসছেন। পরবর্তীতে ১৯৯৫ ও ২০১৩ সালে আরও দুটি আইন পাসের মাধ্যমে ওয়াকফ বোর্ডগুলোকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়। এমনকি ওয়াকফ সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির বিকল্প আদালত হিসেবে কাজ করতে গঠন করা হয় ওয়াকফ ট্রাইব্যুনাল।
কিন্তু গত মাসের শেষ দিকে মোদির মন্ত্রিসভা ২০২৪ সালের ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলের খসড়া অনুমোদন করে, যেখানে ১৪টি সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে।
এই খসড়ায় কিছু বিতর্কিত প্রস্তাব রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো অমুসলিমদের ওয়াকফ বোর্ডের সদস্য হিসেবে নিয়োগ করা এবং জেলা প্রশাসনে ওয়াকফ হিসেবে চিহ্নিত সম্পত্তির বাধ্যতামূলক নিবন্ধন করা।
আম আদমি পার্টির সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিং ৩১ সদস্যবিশিষ্ট সংসদীয় যৌথ কমিটির (জেপিসি) একজন সদস্য। এই কমিটি সংশোধনী নিয়ে বিরোধীদের আপত্তি পর্যালোচনার জন্য গঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, 'এটি মসজিদ ও দরগাহর জমি দখলের সূচনা মাত্র। ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।'
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আনাস তানভীর বলেন, 'উজ্জেইনের ঘটনা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও ওয়াকফ সম্পত্তির অবনতির বৃহত্তর জাতীয় উদ্বেগকে প্রতিফলিত করে।'
তিনি আরও বলেন, 'ভারতে ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা দীর্ঘদিন ধরে অপব্যবহার ও দখলের শিকার। প্রস্তাবিত ২০২৪ সালের ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল এই সমস্যাগুলোকে আরও গভীর করতে পারে।'
তবে মধ্যপ্রদেশ ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান সানাওয়ার প্যাটেল দাবি করেন, সরকার এই সংশোধনীগুলো এনেছে 'বিদ্যমান সমস্যা দূর ও অসঙ্গতি দূরীকরণ' করার লক্ষ্যে।
ইচ্ছাকৃত বঞ্চনা
প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলোর মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তির ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে অনেক মুসলিম সম্প্রদায় নেতা ও আইনজীবী বলছেন, বিদ্যমান আইনেও এই জমিগুলো ব্যাপকভাবে দখলের শিকার হয়ে আসছে।
বিশেষজ্ঞরা একে দশকব্যাপী ইচ্ছাকৃত বঞ্চনা, অপব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির একটি ধারাবাহিক চিত্র বলে উল্লেখ করেন। তাঁদের অভিযোগ, রাজস্ব কর্মকর্তারা ও অন্যান্য প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ নিয়মিতভাবে ওয়াকফ সম্পত্তি অন্য খাতে সরিয়ে নিচ্ছেন এবং তা ব্যক্তিমালিকানায় রূপান্তরিত করছেন।
তাদের মতে, অধিকাংশ ওয়াকফ জমিকে সরকারের রাজস্ব বিভাগ (যা জমির রেকর্ড সংরক্ষণ ও কর আদায়ের দায়িত্বে) 'অ-ওয়াকফ' হিসেবে ঘোষণা করেছে।
১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে ও ১৯৮০-এর দশকে মধ্যপ্রদেশ ওয়াকফ বোর্ড দুটি পৃথক জরিপ চালায়, যেখানে দেখা যায় বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন সম্পত্তির সংখ্যা ২৩ হাজারের বেশি। পরে এই জমিগুলোর সনাক্তকরণে ডিজিটাল রেকর্ড ও জিও-ট্যাগ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
তবে বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করেন, রাজস্ব বিভাগের জমির রেকর্ডগুলো এখনো পুরনো, অধিকাংশই স্বাধীনতার আগের জরিপের ওপর নির্ভরশীল। ১৯৫৪ সালের ওয়াকফ আইন অনুযায়ী, রাজস্ব বিভাগকে ওয়াকফ বোর্ডের জরিপ অনুসারে জমির রেকর্ড সংশোধন করা বাধ্যতামূলক হলেও, এখন পর্যন্ত তা করা হয়নি।
যেমন, ১৯৮৫ সালের গেজেট অনুযায়ী উজ্জেইনে ১ হাজার ১৪টি ওয়াকফ সম্পত্তি ছিল। কিন্তু রাজস্ব রেকর্ডে এসবের একটিও ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত নয়।
উজ্জেইনভিত্তিক আইনজীবী আশার ওয়ারসি গত ডিসেম্বরে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করেন। তিনি বলেন, 'এই ১ হাজার ১৪টি সম্পত্তির মধ্যে ৩৬৮টি সরকারি মালিকানায়, ৪৫৪টি বেসরকারি মালিকানায় এবং ১৯২টি সম্পত্তির রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ নয়তো সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।'
২০০০ দশকের শেষ দিকে শুরু হওয়া জমির ডিজিটাল রেকর্ড প্রক্রিয়া সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে। সফ্টওয়্যারে জমির মালিকানা নির্ধারণে শুধুমাত্র 'সরকারি' ও 'বেসরকারি'—এই দুটি অপশন থাকায় অধিকাংশ ওয়াকফ জমি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরকারি মালিকানার আওতায় চলে গেছে।
মসজিদুল ওয়াকফ কমিটির সদস্য মাসুদ খান বলেন, 'এই কারণেই ১৮৫৭ সালে নির্মিত ভোপালের ঐতিহাসিক মোতি মসজিদ এখন সরকারি সম্পত্তি হিসেবে নিবন্ধিত। এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।'
এ বিষয়ে রাজস্ব মন্ত্রী করণ সিং ভার্মার দপ্তরে জানতে চাইলে তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, 'যেহেতু এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, তাই মন্ত্রী এ বিষয়ে বিস্তারিত অবগত নন। তবে আমরা বিষয়টি দেখব।'
অপব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি
ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতারা বলছেন, উজ্জেইনের ঘটনাটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি মধ্যপ্রদেশসহ ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে ওয়াকফ সম্পত্তি দখলের ধারাবাহিক প্যাটার্নেরই অংশ।
আইনজীবী আশার ওয়ারসির আবেদনে বলা হয়েছে, সরকার ও প্রশাসনের চোখের সামনেই ওয়াকফ সম্পত্তির পরিকল্পিত ও পদ্ধতিগত লুটপাট চলছে। এতে উল্লেখ করা হয়, ২০০১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মধ্যপ্রদেশ ওয়াকফ বোর্ড এবং কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু কল্যাণ মন্ত্রণালয় একাধিকবার চিঠি দিলেও রাজ্য সরকার রাজস্ব রেকর্ড সংশোধনে গাফিলতি করেছে। এর ফলে 'ওয়াকফ সম্পত্তির লুণ্ঠন' অব্যাহত রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ওয়াকফ আইন বিশেষজ্ঞ মাহমুদ প্রাচা বলেন, 'ওয়াকফ রেকর্ড ও রাজস্ব রেকর্ডের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা গোটা দেশেই একটি সাধারণ সমস্যা, যা দখলদারদের উৎসাহিত করছে।'
২০২১ সালের জানুয়ারিতে মধ্যপ্রদেশ সরকার একটি এনজিওকে ভোপালের প্রায় ২ দশমিক ৮৮ একর ওয়াকফ জমি অধিগ্রহণের অনুমতি দেয়। ঐ এনজিওর ট্রাস্টি হিসেবে ছিলেন বিজেপির কয়েকজন নেতা। সরকারি রেকর্ডে জমিটি একটি কবরস্থান হিসেবে চিহ্নিত ছিল এবং সেখানে কয়েকটি কবরও ছিল।
ওয়াকফ ট্রাইব্যুনাল কিংবা আদালত জমি অধিগ্রহণ স্থগিত করার আগেই ওই বছরই এনজিওটি সেখানে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে এবং একটি কমিউনিটি হল নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করে। এর প্রতিবাদ দমন করতে প্রশাসন এলাকায় কারফিউ জারি করে এবং ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
মসজিদুল ওয়াকফ কমিটির সদস্য মাসুদ খান বলেন, 'ওয়াকফ আইন অনুযায়ী জেলা প্রশাসন বা সরকার অবৈধ নির্মাণ সরিয়ে দিতে বাধ্য। কিন্তু যখন সরকার নিজেই দখলের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তখন আইন রক্ষা করবে কে?'
ওয়াকফ বোর্ডের সদস্যরা জানান, ভোপাল, ইন্দোরসহ মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন শহরে শতাধিক ওয়াকফ সম্পত্তি হয় রাজ্য সরকারের দখলে, নয়তো প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ওয়াকফ বোর্ড সদস্য বলেন, 'ভোপালে পুলিশ সদর দপ্তর, পুলিশ কন্ট্রোল রুম, ট্রাফিক পুলিশ স্টেশনসহ একাধিক সরকারি দপ্তর ওয়াকফের মূল্যবান জমির ওপর নির্মিত।'
তিনি আরও জানান, 'একসময় রাজধানী ভোপালে ১৪০টি কবরস্থান ছিল। এর মধ্যে এখন ১০০টিরও বেশি দখল হয়ে গেছে।'
এছাড়া, ওয়াকফ বোর্ড নিযুক্ত তত্ত্বাবধায়ক 'মুতাওয়াল্লি'দের বিরুদ্ধেও ওয়াকফ জমি জালিয়াতি ও অবৈধ নির্মাণে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে, ওয়াকফ দলিল জালিয়াতি এবং শহরের একটি মূল্যবান ওয়াকফ জমি বিক্রির অভিযোগে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ ইন্দোরে এক সাবেক তত্ত্বাবধায়ক নাসির খানকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ তাঁর বাড়ি থেকে জাল ওয়াকফ বোর্ডের লেটারহেড ও স্ট্যাম্প উদ্ধার করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বছরের পর বছর ধরে সরকারি ও বেসরকারি দখল, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা ওয়াকফ সম্পত্তিকে চরম ঝুঁকিতে ফেলেছে। এখন নতুন সংশোধনীর মাধ্যমে সরকার সেগুলোর ওপর আইনি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
আইনজীবী প্রাচা বলেন, 'জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জমির মূল্যও বেড়ে গেছে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ওয়াকফ বোর্ডের বিপুল সম্পত্তি রয়েছে। এগুলোর ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিতে সরকার এখন আইন পরিবর্তনের পথ নিচ্ছে।'