জিবলির প্রভাব: ভাইরাল ফিচারে চ্যাটজিপিটি ব্যবহারে নতুন রেকর্ড

গত সপ্তাহে ওপেনএআই-এর চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীর সংখ্যা রেকর্ড সংখ্যক বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে সার্ভারে অতিরিক্ত চাপ পড়ায় সাময়িকভাবে এই ফিচারের ব্যবহার সীমিত করে ওপেনএআই।
চ্যাটজিপিটির ইমেজ-জেনারেশন টুল ব্যবহার করে জিবলি-স্টাইলের এআই চিত্র থেকেই মূলত এ উন্মাদনা শুরু।
এই ভাইরাল ট্রেন্ডে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবহারকারীরা স্টুডিও জিবলির হাতে আঁকা ছবির শৈলীতে প্রভাবিত হয়ে এআই দিয়ে তৈরি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে শেয়ার করছেন।
স্টুডিও জিবলি জাপানের বিখ্যাত অ্যানিমেশন স্টুডিও। খ্যাতিমান পরিচালক হায়াও মিয়াজাকি হলেন এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি 'স্পিরিটেড অ্যাওয়ে' ও 'মাই নেইবার টোটোরো'-এর মতো চলচ্চিত্রের জন্য পরিচিত।
মার্কেট রিসার্চ ফার্ম সিমিলারওয়েবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছরই প্রথমবারের মতো সপ্তাহে চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীর গড় সংখ্যা ১৫ কোটি ছাড়িয়েছে।
ওপেনএআই-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম অল্টম্যান সোমবার এক্স-এ এক পোস্টে বলেন, 'মাত্র এক ঘণ্টায় ১০ লাখ নতুন চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারী যোগ হয়েছেন।' তিনি জানান, দুই বছর আগে এই সংখ্যক ব্যবহারকারী পেতে পাঁচদিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল।
সেন্সর টাওয়ারের তথ্য অনুসারে, গত সপ্তাহে সক্রিয় ব্যবহারকারী, ইন-অ্যাপ সাবস্ক্রিপশন থেকে আয় এবং অ্যাপ ডাউনলোডের পরিমাণ সর্বকালের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল। ওপেনএআইয়ের চ্যাটজিপিটির আপডেটেড মডেল জিপিটি-৪০ চালুর পর থেকেই এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। আপডেটেড মডেলটি উন্নত ছবি তৈরি করতে সক্ষম।
আরেক বাজার গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুসারে, বিশ্বব্যাপী চ্যাটজিপিটি অ্যাপের ডাউনলোড ১১ শতাংশ এবং সাপ্তাহিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পাশাপাশি ইন-অ্যাপ কেনাকাটা থেকে আয়ও ৬ শতাংশ বেড়েছে।
তবে, এআই ইমেজ-জেনারেশন টুলের জনপ্রিয়তার কারণে ব্যবহারকারীর সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় গত সপ্তাহে চ্যাটজিপিটিতে বিভিন্ন কারিগরি সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। কিছু ছোটখাটো বিভ্রাট ও সার্ভার ডাউন হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
মঙ্গলবার ওপেনএআই-এর এক সহ-প্রতিষ্ঠাতা জানান, তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন। তবে নতুন আপডেট প্রকাশে দেরি, মাঝে মাঝে কিছু ফিচার কাজ না করাসহ সার্ভিস ধীরগতি পারে বলে জানিয়েছেন। এরজন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন ব্যবহারকারীদের। এরইমধ্যে তারা সার্ভারের ওপর অতিরিক্ত ব্যবহারকারীর কারণে সৃষ্ট চাপ সামলানোর সক্ষমতা বাড়াতে কাজ শুরু করেছেন।
আইনি অনিশ্চয়তা
জিবলি-স্টাইলের চিত্র তৈরিতে এআই টুলের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে সম্ভাব্য কপিরাইট লঙ্ঘন হচ্ছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
আইন বিষয়ক সংস্থা নিল অ্যান্ড ম্যাকডেভিটের অংশীদার ইভান ব্রাউন বলেন, স্টুডিও জিবলির স্বতন্ত্র শৈলী অনুকরণ করে তৈরি এআই-জেনারেটেড ছবির আইনি অবস্থান এখনও নিশ্চিত নয়। কপিরাইট আইন সাধারণত নির্দিষ্ট শিল্পকর্ম বা অভিব্যক্তিকে সুরক্ষা দেয়। কিন্তু কোনো শিল্পশৈলীকে নিজস্বভাবে সংরক্ষণ করে না। অর্থাৎ, কোনো নির্দিষ্ট জিবলি চিত্র হুবহু অনুলিপি করা কপিরাইট লঙ্ঘন হতে পারে, কিন্তু শুধুমাত্র সেই শৈলীতে এআইয়ে তৈরিকৃত ছবি আইনগতভাবে সমস্যাযুক্ত নাও হতে পারে। তবে, এই বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত ও ব্যাখ্যার ওপর নির্ভরশীল।
তবে এসব বিষয়ে ওপেনএআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে হলে তারা কোনো মন্তব্য করেনি।
স্টুডিও জিবলির সহ-প্রতিষ্ঠাতা হায়াও মিয়াজাকি ২০১৬ সালে এআই-জেনারেটেড ছবির বিষয়ে মন্তব্য করেছিলেন। গত সপ্তাহে ট্রেন্ডটি জনপ্রিয় হওয়ার পর তার সেই মন্তব্য আবারও আলোচনায় এসেছে।
এআই ব্যবহার করে তৈরি ছবি দেখে মিয়াজাকি বলেছিলেন, "আমি খুবই বিরক্ত। আমি কখনোই এই প্রযুক্তি আমার কাজে অন্তর্ভুক্ত করতে চাই না।"