বাণিজ্যযুদ্ধের অস্থিরতায় ঊর্ধ্বমুখী স্বর্ণের বাজার, এক আউন্সের দাম রেকর্ড ৩ হাজার ডলার

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদেও বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা করেছেন। বাণিজ্যের অনিশ্চয়তায় অস্থির পুঁজিবাজার। তাই সঞ্চয়ের জন্য স্বর্ণের দিকে আগ্রহ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের। বাড়তি এই চাহিদাই ভর করে গত শুক্রবার রেকর্ড উথান হয়েছে স্বর্ণের দামে। বহুমূল্য এই ধাতুর এক আউন্সের দাম সেদিন প্রথমবারের মতো ৩ হাজার ডলারে পৌঁছায়। খবর বিবিসির
শুক্রবার দরের এই উত্থান ৩ হাজার ৪ ডলার ৮৬ সেন্ট পর্যন্ত হয়, চলতি বছরের শুরুর সময়ের তুলনায় যা ১৪ শতাংশ বেশি।
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেই সাধারণত বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণে বিনিয়োগ করেন। স্বর্ণ বিশ্বের প্রাচীন একটি মূল্য সংরক্ষণের মাধ্যম। বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও তাঁদের সম্পদের একটি বড় অংশ স্বর্ণে সংরক্ষণ করে।
বর্তমানে স্বর্ণের প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সাধারণ বিনিয়োগকারী সবারই আগ্রহ বেড়েছে ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে। বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র তার প্রধান প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারদের সঙ্গে শুল্কারোপের মাধ্যমে এই যুদ্ধ শুরু করেছে। যার প্রভাব পড়ছে বৃহৎ অর্থনীতিসমূহ; তাদের ভোক্তা ও পুঁজিবাজারের ওপর।
শুল্কারোপের কারণে আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়ে যায়, ফলে মূল্যস্ফীতি আরও চড়া হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একারণেও মানুষ স্বর্ণ কেনার দিকে ঝুঁকছে।
শুল্কের কারণে ব্যবসাবাণিজ্যের খরচও বাড়ে। সেই খরচ তাঁরা পোষায় ভোক্তার কাছে বিক্রি করা পণ্যের দাম বাড়িয়ে– এতে জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে যায়।
কিন্তু, ট্রাম্প এসবের তোয়াক্কাই করছেন না। গত বৃহস্পতিবারও তিনি আরেক বাণিজ্য অংশীদার ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর শুল্কারোপের হুমকি দেন। ট্রাম্প এদিন ইইউ থেকে যেকোনো প্রকার মদ আমদানির ওপর ২০০ শতাংশ শুল্কারোপের কথা বলেন।
এর আগে ইইউ থেকে সব ধরনের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে ট্রাম্প শুল্কারোপ করেন। যার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে হুইস্কি আমদানিতে ৫০ শতাংশ শুল্কারোপ কওরে ইইউ। এরপরেই ট্রাম্প ২০০ শতাংশ শুল্কারোপের হুমকি দেন বৃহস্পতিবার।
ট্রাম্প এর আগে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া পণ্যের শুল্ক বাড়িয়েও ২০ শতাংশ করেন।
বাণিজ্যযুদ্ধের এই প্রবণতাই আর্থিক বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চিড় ধরাচ্ছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের বহুমূল্য ধাতুর বাজার বিশ্লেষক সুকি কুপার বলেন, 'বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও শুল্ক পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায়— স্বর্ণের প্রতি শক্তিশালী আগ্রহ তৈরি হয়েছে।'
লন্ডন-ভিত্তিক আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হারগ্রিভস ল্যান্সডাউন এর হেড অব ফান্ড রিসার্চ ভিক্টোরিয়া হাসলার বলেন, বর্তমানে সোনার দাম বাড়ার পেছনে দুটি বিষয় চালিকাশক্তির ভূমিকায় রয়েছে।
'ট্রাম্পের শুল্ক ও সামাজিক মাধ্যমে করা মন্তব্য, আবার মধ্যপ্রাচ্য ও রাশিয়া-ইউক্রেন নিয়ে চলমান উত্তেজনা— অনিশ্চয়তা উচ্চ এবং তা আরও বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'বাজার অনিশ্চয়তাকে ঘৃণা করে। কিন্তু, এর গতিশীলতার কারণে স্বর্ণের দাম নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।'
মিস হাসলারের মতে, দ্বিতীয় চালিকাশক্তির ভূমিকায় রয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ ক্রয়ের ঘটনা। এর প্রকৃত কারণ বহুবিধ হতে পারে। তবে মূল কারণ হচ্ছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো শুধুমাত্র মার্কিন ডলার সঞ্চয়ের ওপর নির্ভর না করে— তাদের রিজার্ভের সম্পদে বৈচিত্র্য আনার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। অনেক দেশই রিজার্ভে ডলারের অংশ কমাচ্ছে।
ভিক্টোরিয়া হাসলারের মতে, এই দুটি চালিকাশক্তি এখনো অটুট আছে, নিকট ভবিষ্যতে তারা দুর্বল হবে এমন সম্ভাবনাও দেখছি না।