সাবেক আইপিএল-প্রধান ললিত মোদির নাগরিকত্ব বাতিল করল ভানুয়াতু

পলাতক ভারতীয় ব্যবসায়ী ললিত মোদীর পাসপোর্ট বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন ভানুয়াতুর প্রধানমন্ত্রী। ললিতের বিরুদ্ধে ভারতে দুর্নীতি মামলা রয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা আছে। তিনি দ্বীপ রাষ্ট্র ভানুয়াতুর নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন। খবর বিবিসির।
ললিতের ভানুয়াতুতে নাগরিকত্ব আছে, ভারতের এ তথ্য নিশ্চিত করার তিনদিন পরই তার নাগরিকত্ব বাতিলেও নির্দেশ আসে। প্রশান্ত মহাসাগরের ৮০টিরও বেশি দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই রাষ্ট্র নাগরিকত্ব বিক্রির জন্য পরিচিত।
ললিত মোদী ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) সাবেক প্রধান। তিনি এ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের নেতৃত্ব দেওয়ার সময় কারচুপির অভিযোগে অভিযুক্ত হন। ২০১০ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ললিত বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
ভারত ললিত মোদীর প্রত্যর্পণের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়েছে।
শুক্রবার, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাংবাদিকদের জানান যে ললিত লন্ডনে তার ভারতীয় পাসপোর্ট সমর্পণের জন্য আবেদন করেছেন।
তিনি বলেন, "আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে যে তিনি ভানুয়াতুর নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন। আমরা আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে মামলা চালিয়ে যাচ্ছি।"
ললিতের ভানুয়াতুর নাগরিক হওয়ার খবর ভারতীয় গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়, কারণ একসময় তিনি গ্ল্যামারাস ও বিপুল অর্থবহুল আইপিএল টুর্নামেন্টের মুখপাত্র ছিলেন। বলিউড তারকা ও ভারতের অভিজাত মানুষদের সঙ্গে সামাজিক অনুষ্ঠানে তার নিয়মিত উপস্থিতি ছিল।
তবে সোমবার, ভানুয়াতুর প্রধানমন্ত্রী জোথাম নাপাট ঘোষণা করেন যে তার দেশ ললিত মোদীর নাগরিকত্ব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভানুয়াতুর প্রধানমন্ত্রী জোথাম নাপাট বলেন, ভানুয়াতুর পাসপোর্ট একটি 'সুবিধা' এবং 'আবেদনকারীদের অবশ্যই বৈধ কারণে নাগরিকত্ব চাইতে হবে'।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নাপাট আরও বলেন, "এই বৈধ কারণগুলোর মধ্যে কখনোই প্রত্যর্পণ এড়ানোর চেষ্টা অন্তর্ভুক্ত নয়। অথচ সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে যে ললিত প্রত্যর্পণ এড়াতেই এখানে নাগরিকত্ব নিয়েছেন।"
তিনি উল্লেখ করেন যে, পাসপোর্টের জন্য ললিতের আবেদনের সময় ব্যাকগ্রাউন্ড চেক ও ইন্টারপোল স্ক্রিনিংয়ে কোনো অপরাধমূলক দোষের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
তবে তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে জানানো হয়েছে যে প্রমাণের অভাবে ললিতের বিরুদ্ধে সতর্কতা নোটিশ জারি করে ভারতের অনুরোধ ইন্টারপোলে দুবার প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, "এই ধরনের যেকোনো সতর্কতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ললিতের নাগরিকত্বের আবেদন প্রত্যাখ্যানের কারণ হবে।"
এটি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের জন্য স্বস্তির বিষয় বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ যুক্তরাজ্যের বিপরীতে, ভানুয়াতুর সঙ্গে ভারতের প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই।
প্রত্যর্পণ চুক্তিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অপরাধের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের প্রত্যাবাসনের আইনি অনুমতি দেয়।
একদিন আগে, ললিত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে দাবি করেন যে ভারতের কোনো আদালতে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা বিচারাধীন নেই এবং মিডিয়াকে তার সম্পর্কে 'ভুয়া খবর' প্রচারের অভিযোগ তোলেন।
২০০৮ সালে আইপিএল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ললিত। এ ইভেন্টে এখন বহু বিলিয়ন ডলারের লেনদেন হয়।
ললিতের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে ২০১০ সালে দুটি দলীয় ফ্র্যাঞ্চাইজির নিলামে কারচুপির দর সংক্রান্ত অনিয়ম। এছাড়া, তার বিরুদ্ধে অনুমোদন ছাড়া সম্প্রচার ও ইন্টারনেট অধিকার বিক্রির অভিযোগও ছিল।
২০১৩ সালে, বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) ললিতকে আজীবনের জন্য ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করে।