যুক্তরাষ্ট্র গোয়েন্দা তথ্য বন্ধ করায় ইউক্রেনের সামরিক অভিযানে কী প্রভাব পড়বে

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য ইউক্রেনের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা স্পষ্ট কারণেই কখনো বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করা হয়নি। তবে বেশিরভাগ বিশ্লেষক একমত, এসব তথ্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে– রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিকল্পনায় ইউক্রেনকে সহায়তা করা এবং রাশিয়ার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সম্ভাব্য হুমকি সম্পর্কে কিয়েভকে অগ্রিম সতর্কবার্তা প্রদান। খবর বিবিসি'র।
স্যাটেলাইট তথ্য ও সিগন্যাল অনুসন্ধানের মাধ্যমে ইউক্রেনীয় বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনীর অবস্থান, তাদের গতিবিধি ও সম্ভাব্য পরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা লাভ করে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য ছাড়া ইউক্রেন পশ্চিমা দেশগুলোর তৈরি হাইমার্স লঞ্চার বা ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সরবরাহকৃত স্টর্মশ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্রের মতো দূরপাল্লার অস্ত্র কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারবে না।
সামরিক প্রয়োগ ছাড়াও ওয়াশিংটনের সরবরাহ করা নিয়মিত ও তাৎক্ষণিক তথ্য প্রবাহ ইউক্রেনের সেনাবাহিনী, গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় অবকাঠামো এবং বেসামরিক জনগণকে আগত হুমকি সম্পর্কে মূল্যবান অগ্রিম তথ্য প্রদান করে আসছে। ইউক্রেনের বিমান হামলার সাইরেন এবং মোবাইল ফোনের সতর্কবার্তাগুলোর বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট থেকে আগেই পাওয়া সতর্কীকরণ তথ্যের ওপর নির্ভরশীল, যা রুশ ভূখণ্ডের গভীর থেকে বিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ শনাক্ত করতে সক্ষম।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ দীর্ঘমেয়াদে স্থগিত থাকলে সেটি ইউক্রেনের আত্মরক্ষার সক্ষমতার ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে যখন ট্রাম্প প্রশাসন ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সহায়তা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কয়েক মাস আগে ইউক্রেন আশাবাদী ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা-সহ অতিরিক্ত বিমান প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের সরবরাহ দেশের শহর ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তু রক্ষায় সাহায্য করবে।
এখন, ইউক্রেনের পেট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রের সরবরাহ কমে আসছে। ইউরোপের সাম্প্রতিক প্রতিশ্রুতি, যার মধ্যে স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার সিস্টেম সরবরাহ অন্তর্ভুক্ত, সেগুলো হয়ত কিছু হুমকি মোকাবিলায় সাহায্য করবে। কিন্তু রাশিয়ার সবচেয়ে বিপজ্জনক হাইপারসোনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে নয়।
এটি স্পষ্ট, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সহায়তা এবং গোয়েন্দা তথ্য প্রদান বন্ধ করে ইউক্রেনের ওপর কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ বলেছেন, ইউক্রেন যদি মার্কিন নেতৃত্বাধীন কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণে সম্মত হয়, তবে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা পুনরায় প্রদান করা হতে পারে। তিনি ফক্স নিউজে বলেন, 'আমি মনে করি, যদি আমরা এই আলোচনাগুলো নির্ধারণ করতে পারি এবং এগিয়ে যেতে পারি... তবে প্রেসিডেন্ট এই বিরতি তুলে নেওয়ার বিষয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নেবেন।'
সিআইএ-এর পরিচালক জন র্যাটক্লিফ ফক্স বিজনেসকে বলেছেন, এই বিরতি "স্থায়ী হবে না।"
তবে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কাছ থেকে প্রতিদান হিসেবে হোয়াইট হাউজ যা চায়, তা অনেকটাই স্পষ্ট।