ইংরেজিকে যুক্তরাষ্ট্রের দাপ্তরিক ভাষা করলেন ট্রাম্প

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইংরেজিকে যুক্তরাষ্ট্রের দাপ্তরিক তথা সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। খবর বিবিসি'র।
এর ফলে ফেডারেল তহবিল পাওয়া সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলো ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষায় নথিপত্র ও সেবা প্রদান করবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
এই আদেশের মাধ্যমে ২০০০ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন স্বাক্ষরিত একটি নীতি বাতিল করা হলো, যেখানে সরকারি সংস্থাগুলোকে ইংরেজি না জানা ব্যক্তিদের ভাষাগত সহায়তা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।
আদেশে বলা হয়েছে, 'ইংরেজিকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া শুধু যোগাযোগ সহজ করবে না, বরং জাতীয় মূল্যবোধকে আরও দৃঢ় করবে এবং একটি ঐক্যবদ্ধ ও দক্ষ সমাজ গঠনে সহায়তা করবে।'
আড়াইশ বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর এবারই প্রথমবারের মতো ফেডারেল পর্যায়ে কোনো ভাষাকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হলো।
তবে আদেশে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, বর্তমানে যেসব ভাষাগত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো পরিবর্তন, বাতিল বা বন্ধ করার প্রয়োজন নেই।
আদেশে আরও বলা হয়েছে, 'নতুন অভিবাসীদের স্বাগত জানানোর পাশাপাশি আমাদের জাতীয় ভাষা শেখা ও গ্রহণের নীতি উৎসাহিত করা যুক্তরাষ্ট্রকে একটি অভিন্ন আবাসভূমিতে পরিণত করবে এবং নতুন নাগরিকদের আমেরিকান স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।'
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, 'ইংরেজি জানা শুধু অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করে না, বরং এটি অভিবাসীদের তাদের সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংযুক্ত হতে, জাতীয় ঐতিহ্যে অংশ নিতে ও সমাজে অবদান রাখতে সাহায্য করে।'
এতে আরও বলা হয়েছে, 'এটি বহুভাষী আমেরিকানদের দীর্ঘ ঐতিহ্য উদযাপন করে, যারা ইংরেজি শিখেছে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাদের সন্তানদেরও এই ভাষা শেখানোর ধারা অব্যাহত রেখেছে।'
মার্কিন আদমশুমারি ব্যুরোর তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রের ৩৪ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৬ কোটি ৮০ লাখ মানুষ ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ১৬০টিরও বেশি আদিবাসী আমেরিকান ভাষা।
সংস্থাটির তথ্যমতে, ইংরেজির পর যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাষাগুলোর মধ্যে রয়েছে স্প্যানিশ, বিভিন্ন চীনা ভাষা ও আরবি।
এর আগে রিপাবলিকানরা ইংরেজিকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করতে চেয়েছিলেন। ২০২১ সালে হাউসের সদস্যরা এ বিষয়ে একটি আইন প্রণয়ন করলেও তা পাস হয়নি।
এই প্রচেষ্টার বিরোধীরা বলেছিলেন, ইংরেজি এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে প্রচলিত, ফলে এটিকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তারা আরও আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, সরকারি ভাষার স্বীকৃতি অ-ইংরেজি ভাষাভাষীদের প্রতি বৈষম্য বাড়াতে পারে।
২০২৪ সালের নির্বাচনি প্রচারের সময় ট্রাম্প কঠোর অভিবাসন নীতির পক্ষে অবস্থান নিয়ে অ-ইংরেজি ভাষাগুলোর প্রসঙ্গ তোলেন।
তিনি এক সমাবেশে বলেন, 'এটি সত্যিই অবিশ্বাস্য—তারা এমন সব ভাষায় কথা বলে, যা এই দেশের কেউ কখনো শোনেনি। বিষয়টি ভয়ংকর।'
বিশ্বের প্রায় ১৮০টি দেশে সরকারি ভাষা রয়েছে, এবং বেশিরভাগ দেশ একাধিক ভাষাকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশে কোনো নির্দিষ্ট সরকারি ভাষা নেই।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ৩০টিরও বেশি অঙ্গরাজ্য ইংরেজিকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে আলাস্কা ও হাওয়াইয়ের মতো কিছু রাজ্যে বেশ কয়েকটি স্থানীয় ভাষাও সরকারি মর্যাদা পেয়েছে।