ইউক্রেন এখনও মার্কিন খনিজ চুক্তি স্বাক্ষর করতে ‘প্রস্তুত’: জেলেনস্কি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, হোয়াইট হাউজ থেকে কোনও চুক্তি ছাড়াই ফিরে এলেও তিনি এখনও যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন খনিজ চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে 'প্রস্তুত'। খবর বিবিসির।
বিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে জেলেনস্কি বলেন, গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তপ্ত বৈঠকের পরও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে 'গঠনমূলক সংলাপে' আগ্রহী। তিনি আরও বলেন, 'আমি শুধু চাই ইউক্রেনের অবস্থান শোনা হোক।'
সংবাদকর্মীদের তিনি বলেন, 'আমাদের অংশীদারদের মনে রাখতে হবে, এই যুদ্ধে আগ্রাসী কে।'
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের সম্পর্ক প্রথম উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে শান্তি আলোচনাকে কেন্দ্র করে, যেখানে ট্রাম্প প্রশাসনের আচরণ পরিস্থিতি জটিল করে তোলে। আলোচনার আগে এই খনিজ চুক্তিটি দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে গণমাধ্যমের সামনে তীব্র বাকবিতণ্ডা হয়। এরপর জেলেনস্কিকে চুক্তি স্বাক্ষর না করেই সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়।
এ ঘটনার পর, জেলেনস্কির মন্তব্য আসে এমন সময়ে, যখন মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজকে বলেন, 'শান্তিচুক্তি ছাড়া অর্থনৈতিক চুক্তি করা অসম্ভব।'
বেসেন্ট আরও বলেন, খনিজসম্পদ বিষয়ক চুক্তি এবং শান্তিচুক্তির যে ধারাবাহিকতা থাকার কথা ছিল, জেলেনস্কি তা বাধাগ্রস্ত করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, জেলেনস্কি ব্যক্তিগত আলোচনায় এগুলো মীমাংসার পরিবর্তে প্রকাশ্যে বিতর্কের পথে হেঁটেছেন।
রোববার লন্ডনে ইউরোপীয় নেতাদের এক সম্মেলন শেষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ওয়াশিংটনে সম্প্রতি হওয়া উত্তেজনাপূর্ণ বৈঠক যুক্তরাষ্ট্র বা ইউক্রেন কোনো পক্ষের জন্যই উপকারী ছিল না; এতে লাভবান হয়েছে কেবল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
তবে তিনি বলেন, আমন্ত্রণ পেলে তিনি আবারও হোয়াইট হাউজে যেতে প্রস্তুত।
এছাড়া তিনি পুতিনকে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান, যা ট্রাম্পের কর্মকর্তারা শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে প্রস্তাব করেছিলেন।
একই সঙ্গে, ট্রাম্পের সঙ্গে হওয়া সেই বৈঠকের বিষয়ে কোনো দুঃখপ্রকাশ করতেও রাজি হননি জেলেনস্কি।
লন্ডনে একটি শীর্ষ সম্মেলনের পর গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সম্মেলনে বিশ্বনেতারা ইউক্রেনকে সাহায্য করতে এবং রাশিয়ার ভবিষ্যৎ আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে চার-পয়েন্টের একটি পরিকল্পনায় সম্মত হন।
এই প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে একটি হলো– যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশগুলোর একটি 'আগ্রহী জোট' গঠন করা, যা ইউক্রেনে সম্ভাব্য শান্তিচুক্তি রক্ষা করবে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার পুনর্ব্যক্ত করেন, ইউরোপকে 'অনেক দায়িত্ব নিতে হবে', তবে কোনো চুক্তি প্রয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রয়োজন।
সম্মেলনের ফলাফল সম্পর্কে তার মতামত জানতে চাইলে জেলেনস্কি বলেন, 'সেরা নিরাপত্তা নিশ্চয়তা হলো একটি শক্তিশালী ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী।'
তবে তিনি যোগ করেন, ইউরোপের কিছু না কিছু ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা প্রয়োজন; সম্ভবত আকাশ প্রতিরক্ষা এবং গোয়েন্দা তথ্যের ক্ষেত্রে।
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউক্রেনের সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে এবং তিনি নিশ্চিত, ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের পরাজয় শুধু পুতিনের পক্ষে নয়, বরং এটি ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও একটি পরাজয় হবে।