ট্রাম্প শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জিততে চান!

ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ের বাসনায় আচ্ছন্ন ছিলেন। বর্তমানে তার প্রশাসন সক্রিয়ভাবে তাকে এই পুরস্কার অর্জনে উৎসাহিত করছে। গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে উত্তপ্ত বৈঠকের নেপথ্যেও এই বিষয়টি কাজ করেছে।
নোবেল পুরস্কার নিয়ে আলোচনা ক্রমেই প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে গুরুত্ব পাচ্ছে, বিশেষ করে যখন ট্রাম্প ইউক্রেন ও গাজায় সংঘাত বন্ধের চেষ্টা করছেন।
ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট ফক্স নিউজকে বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর প্রচেষ্টার জন্য ট্রাম্প নোবেল পাওয়ার যোগ্য। তিনি বলেন, 'যদি এটি ন্যায্যভাবে দেওয়া হতো, তবে আমি মনে করি, এক বছরের মধ্যেই তিনি এটি পেতেন।'
সম্প্রতি নিউ ইয়র্কের রিপাবলিক সদস্য এলিস স্টেফানিক 'কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কনফারেন্স' (সিপিএসি)-এ ট্রাম্পের জন্য নোবেল পুরস্কার দাবি করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডগ বারগাম ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজও একই সুরে কথা বলেছেন। ওয়াল্টজ বলেন, 'শেষ পর্যন্ত আমরা দেখব, নোবেল পুরস্কার ডোনাল্ড জে. ট্রাম্পের নামের পাশে বসানো হয়েছে।'
তবে বাস্তবতা হলো, ট্রাম্পের নোবেল জেতার সম্ভাবনা অনেকটাই নির্ভর করছে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে তার ভূমিকার ওপর। এদিকে শুক্রবারের উত্তপ্ত বৈঠকের পর ট্রাম্প জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউস থেকে বের করে দেন, যা ইউরোপীয় মিত্রদের ক্ষুব্ধ করেছে।
ট্রাম্প বহুদিন ধরেই নোবেল পুরস্কারের জন্য আগ্রহী। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো তার এই প্রচেষ্টাকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
শুক্রবারের বৈঠকের আগেই তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন যে নরওয়ের পার্লামেন্ট-নিযুক্ত কমিটি তাকে এই পুরস্কার দেবে কি না। এর আগেও তিনি নোবেল কমিটির সমালোচনা করেছেন, বিশেষ করে ২০০৯ সালে যখন মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টা ও মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের জন্য নোবেল দেওয়া হয়।
২০১৯ সালে ট্রাম্প বলেছিলেন, 'অনেক কিছুর জন্যই আমার এটি পাওয়া উচিত, যদি তারা ন্যায্যভাবে দিত—যা তারা করে না। ওবামাকে তারা প্রেসিডেন্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দিল। অথচ তিনি নিজেই জানতেন না কেন পেলেন। এটাই একমাত্র বিষয় যেখানে আমি ওনার সঙ্গে একমত।'
প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ট্রাম্প একাধিকবার নোবেলের জন্য মনোনীত হয়েছেন। নরওয়ের রাজনীতিবিদ ক্রিস্টিয়ান টাইব্রিং-গেদ্দে ও সুইডেনের রাজনৈতিক নেতা ম্যাগনাস জ্যাকবসনও তাকে মনোনীত করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি পুরস্কার পাননি।
সম্প্রতি, রিপাবলিকান সদস্য ক্লডিয়া টেনি তাকে ইসরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কোর মধ্যে স্বাক্ষরিত আব্রাহাম চুক্তির জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কারে মনোনীত করেছেন। তবে এবারও তার ভাগ্যে শূন্যতা জুটেছে।
তবু ট্রাম্প এখনো নোবেল পাওয়ার আশা ধরে রেখেছেন।
গত মাসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ওভাল অফিসে এক বৈঠকের সময় এক সাংবাদিক ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, যদি তিনি গাজায় যুদ্ধ বন্ধে সাহায্য করেন, তবে কি তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাবেন?
জবাবে ট্রাম্প বলেন, 'আমি এই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু তারা (নোবেল কমিটি) আমাকে কখনোই এটি দেবে না।'
চলতি বছর ট্রাম্প আবারও নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত অধ্যাপক অ্যানাত অ্যালন-বেক গত মাসে নোবেল কমিটির কাছে ট্রাম্পের পক্ষে একটি চিঠি পাঠান।
অ্যালন-বেক যুক্তি দেখিয়েছেন যে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি চুক্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার জন্য ট্রাম্পকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া উচিত। তিনি চিঠিতে লিখেছেন, 'বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করা, অ্যান্টি-সেমিটিজমের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া এবং ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পাদন করা, যা বিশ্বের সবচেয়ে অস্থির অঞ্চলে স্থিতিশীলতা আনে—এসব কারণে (ট্রাম্প) আবারও প্রমাণ করেছেন যে তিনি নোবেল পুরস্কারের যোগ্য।'
তবে এক সাক্ষাৎকারে অ্যালন-বেক জানিয়েছেন, তিনি এই চিঠি লেখার জন্য হোয়াইট হাউসের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি।
এছাড়া, ইউক্রেনের রাজনীতিবিদ অলেক্সান্দ্র মেরেঝকোও ট্রাম্পকে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছেন।
হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও ট্রাম্পের উপদেষ্টা ও তার ঘনিষ্ঠজনেরা মনে করেন, যদি তিনি গাজায় যুদ্ধ বন্ধে সাহায্য করতে পারেন এবং সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি চুক্তি প্রতিষ্ঠা করেন, তবে তার নোবেল পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
ফিলিস্তিন সংকট মোকাবিলায় ট্রাম্প একটি বিতর্কিত প্রস্তাব দিয়েছেন, যাতে প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা থেকে সরিয়ে মিশর বা জর্ডানে স্থানান্তরের কথা বলা হয়েছে।
তবে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির সমালোচকরা বলেন, তিনি নোবেল পাওয়ার যোগ্য নন, কারণ এটা স্পষ্ট নয় যে তিনি মধ্যপ্রাচ্য কিংবা ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন কি না।
ইউক্রেন ইস্যুতে ট্রাম্প রাশিয়ার প্রতি স্পষ্ট সমর্থন জানিয়েছেন, যা নোবেল বিচারকদের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও বর্তমানে তার সমালচক জন বোল্টন বলেন, 'ট্রাম্প বলেছেন, যদি ওবামা তার প্রথম মেয়াদে নোবেল পান, তবে তারও তা পাওয়া উচিত। আমি বরং উল্টোভাবে দেখতাম—তাদের সমানভাবে মূল্যায়ন করা উচিত। কারণ, তাদের কেউই এটি পাওয়ার যোগ্য নয়।'
২০২৫ সালের নোবেল পুরস্কারের মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা শেষ হয়েছে গত জানুয়ারিতে। নোবেল কমিটির ওয়েবসাইট অনুযায়ী, মনোনীতদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে, আর বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে অক্টোবরে।