৩য় দফায় অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের নিয়ে অমৃতসরে মার্কিন উড়োজাহাজ

১১২ জন অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি উড়োজাহাজ রোববার রাতে অমৃতসরে অবতরণ করেছে। অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিযানের অংশ হিসেবে বিগত ১০ দিনের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো অবৈধ ভারতীয় অধিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠানো হলো।
সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর সি-১৭ গ্লোবমাস্টার উড়োজাহাজটি স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৩ মিনিটে অমৃতসর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।
ফেরত পাঠানো অভিবাসীদের মধ্যে ৩১ জন পাঞ্জাবের, ৪৪ জন হরিয়ানার, ৩৩ জন গুজরাটের, দুইজন উত্তর প্রদেশের এবং একজন করে হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা। তাদের কিছু আত্মীয় স্বজন বিমানবন্দরে এসে তাদের গ্রহণ করেন।
সংশ্লিষ্ট সকল আনুষ্ঠানিকতা যেমন, অভিবাসন প্রক্রিয়া ও যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হওয়ার পর বহিষ্কৃতদের নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। তাদের পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
প্রথম দফায় ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক বিমানে ১০৪ জন ভারতীয়কে অমৃতসরে ফেরত পাঠানো হয়। এরপর শনিবার আরেকটি বিমানে ১১৬ জন ভারতীয় দেশে ফেরত আসেন।
প্রথম দফায় অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের পুরো উড়োজাহাজে শিকল পড়িয়ে রাখা হয় এবং কেবল ভারতে পৌঁছানোর পর মুক্ত করা হয়। এটি ভারতে রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দেয় এবং চলমান বাজেট অধিবেশনে সংসদের উভয় কক্ষে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। শনিবার ফিরে আসা ব্যক্তিরাও অনুরূপ অমানবিক আচরণের অভিযোগ তুলেছেন।
সমালোচনার মুখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর আগেই জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে অভিবাসীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ না করা হয়। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কার করা নতুন কোনো ঘটনা নয়; এটি বহু বছর ধরে চলমান।
এদিকে, শিরোমণি গুরুদুয়ারা প্রবন্ধক কমিটি (এসজিপিসি) রোববার যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্বিতীয় দফায় ফেরত পাঠানো শিখ অভিবাসীদের পাগড়ি পরতে দেওয়া হয়নি।
সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে অমৃতসর বিমানবন্দরে শিখ অভিবাসীদের পাগড়ি ছাড়া দেখা যায়।
শনিবার রাতে দ্বিতীয় দফায় ১১৬ জন অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে নিয়ে একটি মার্কিন সামরিক উড়োজাহাজ অমৃতসর বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এক অভিবাসী জানান, পুরো যাত্রায় তাদের হাতকড়া পরানো হয়েছিল এবং পায়ে শিকল দেওয়া হয়েছিল। এদের মধ্যে ৬৫ জন পাঞ্জাব, ৩৩ জন হরিয়ানা এবং ৮ জন গুজরাটের বাসিন্দা ছিলেন।
এসজিপিসির কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে অভিবাসী শিখদের পাগড়ি সরবরাহ করেন।
এসজিপিসির সাধারণ সম্পাদক গুরুচরণ সিং গ্রেওয়াল এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, 'এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে বহিষ্কৃতদের শেকলবদ্ধ অবস্থায় ফেরানো হয়েছে এবং শিখদের পাগড়ি পরতে দেওয়া হয়নি।' তিনি জানান, এসজিপিসি শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করবে।
শিরোমণি আকালি দল নেতা বিক্রম সিং মাজিথিয়াও এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অবিলম্বে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার আহ্বান জানান, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চলতি সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে বলেছেন, ভারতীয় যেসব নাগরিক অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, সরকার তাদের ফিরিয়ে নেবে। তবে তিনি মানব পাচার বন্ধে উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'আমাদের বড় লড়াই এই সমস্ত চক্রের বিরুদ্ধে এবং আমরা আত্মবিশ্বাসী, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই চক্র নির্মূলে ভারতের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করবেন।'
ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস জানিয়েছে, 'আমাদের দেশের অভিবাসন আইন কার্যকর করা জাতীয় নিরাপত্তা ও জনসুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।' দূতাবাসের মুখপাত্র আরও বলেন, 'যেসব বিদেশি যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশের অযোগ্য ও নির্বাসনের উপযুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে অভিবাসন আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যুক্তরাষ্ট্রের নীতি।'
মেক্সিকো ও এল সালভাদরের পর যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা অনুযায়ী ভারত তৃতীয় বৃহত্তম দেশ।